নিহত নয় জঙ্গির একজন গুলশান হামলার প্রশিক্ষক

 

স্টাফ রিপোর্টার: রাজধানীর কল্যাণপুরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে নিহত ৯ জঙ্গির মধ্যে রায়হান কবির ওরফে তারেক গুলশানে হামলাকারী জঙ্গিদের প্রশিক্ষক ছিলেন। পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম এ কথা জানান। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে ব্রিফিং করেন মনিরুল ইসলাম। ব্রিফিংয়ে তিনি রায়হান কবিরের পরিচয় প্রকাশ করেন। এ নিয়ে কল্যাণপুরে অভিযানে নিহত ৯ জনের মধ্যে ৮ জনের পরিচয় প্রকাশ করল পুলিশ। মনিরুল ইসলাম জানান, রায়হান কবিরের বাবার নাম শাহজাহান কবির। তার বাড়ি রংপুরের পীরগাছা উপজেলায়। রায়হান কবির কখনো কখনো তারেক নামও ধারণ করছেন। গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারির হামলাকারী জঙ্গিদের অন্যতম প্রশিক্ষক ছিলেন এই রায়হান কবির।
গত ১ জুলাই গুলশান হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় ২২ জন দেশি-বিদেশি নাগরিক নিহত হন। পরে সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানে ৬ জঙ্গি নিহত হন। পুলিশ জানিয়েছে, রায়হান জেএমবির ঢাকা অঞ্চলের কমান্ডার ছিলেন। তিনি আশুলিয়ায় পুলিশের ওপর হামলায় অংশ নেন। ওই মামলায় তিনি অভিযুক্ত ছিলেন। হলি আর্টিজানে হামলায় অংশ নেয়া জঙ্গিদের গাইবান্ধায় প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন রায়হান।
স্থানীয় পুলিশ বলছে, রায়হান মাদরাসার ছাত্র ছিলেন। দেড় বছর আগে পরিবারের সাথে রাগারাগি করে বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। ঢাকার একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন।
পীরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, রায়হানের বাড়ি ইটাকুমারী ইউনিয়নের পশুয়া টাঙ্গাইলপাড়া গ্রামে। ২০১৩ সালে তিনি ওই ইউনিয়নের দামুরচাকলা এলাকায় দেওয়ান সালেহ আহম্মেদ মাদরাসা থেকে দাখিল পাস করেন। রায়হানের মা রাহেলা বেগমের বরাত দিয়ে ওসি আমিনুল বলেন, ৩ মাস আগে অসুস্থ মাকে দেখতে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রায়হান গিয়েছিলেন। দেড় বছর আগে পরিবারের সাথে রাগারাগি করে রায়হান বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। পরে ফোনে মাকে জানান, ঢাকার একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। কারখানার নাম জানাননি। গত এপ্রিল মাসে মায়ের সাথে দেখা করতে আসেন। ২ ভাই, ২ বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়নি।
ঢাকায় ব্রিফিংয়ে মনিরুল ইসলাম বলেন, বুধবার রাতে তারা রায়হানের পরিচয়ের বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন। নির্বাচন কমিশনের ডেটাবেইস থেকে ‘জঙ্গিদের’ পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। তারা সবাই দুই বছর বা দুই বছর তিন থেকে চার মাস আগে বাড়ি ছেড়ে চলে যান। ‘জঙ্গিদের’ ভাষায় হিজরত করেন। তিনি বলেন, নিহত যে ৮ ‘জঙ্গির’ পরিচয় মিলেছে, এর মধ্যে তিনজন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। একজন পাস করে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। দুইজন পড়ছিলেন। তিনজন মাদ্রাসার ছাত্র, একজন স্বল্পশিক্ষিত এবং একজন নোয়াখালী সরকারি কলেজে পড়তেন। ঝড়ো অভিযানে নিহত ৯ ‘জঙ্গির’ মধ্যে ৩ জন ছিলেন ঢাকার বাসিন্দা। অন্যদের বাড়ি দিনাজপুর, পটুয়াখালী, সাতক্ষীরা ও নোয়াখালী। ডিএমপি গতকাল রাতে তাদের পরিচয় জানিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের ছবি ও তথ্য প্রকাশ করেছে।
ঢাকার ৩ বাসিন্দা হলেন শেহজাদ রউফ ওরফে অর্ক, তাজ-উল-হক রাশিক ও আকিফুজ্জামান খান। মার্কিন নাগরিক ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শেহজাদ ছিলেন গুলশানে হামলাকারী নিহত নিবরাস ইসলামের বন্ধু।