জঙ্গি দমনে রাজধানীসহ সারাদেশে ব্লক রেইড

 

স্টাফ রিপোর্টার: জঙ্গি দমনে রাজধানীসহ সারা দেশে ব্লক রেইড চলছে। এরই মধ্যে ব্লক রেইডের কারণে রাজধানীর কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানা খুঁজে পেয়েছে পুলিশ। ওই আস্তানায় অপারেশন-২৬ পরিচালনা করে বড় ধরনের সাফল্যের পর ব্লক রেইডের গতি আরও বাড়বে বলে মনে করছেন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ব্লক রেইড অব্যাহত থাকবে বলে নিশ্চিত করেছে একাধিক সূত্র। রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় রোমহর্ষক ঘটনার পর সারাদেশে এক সপ্তাহের সাঁড়াশি অভিযান চালায় সরকার। তবে ওই অভিযানে তেমন একটা সাফল্য না আসার কারণেই মূলত সিদ্ধান্ত আসে ব্লক রেইডের। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সব কটি বাহিনীর প্রধানকে জানিয়ে দেয়া হয় এ নির্দেশনা। তবে ব্লক রেইডের কারণে যাতে কোনো নিরীহ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে বলা হয়েছে। বুধবার দিবাগত রাত থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত রাজধানীর রমনা, কুমিল্লা, সিলেট, লালমনিরহাট, নারায়ণগঞ্জ, রাজশাহী, বগুড়া ও মাগুরায় পাঁচ জঙ্গিসহ ১০৪ জন গ্রেফতার হয়েছে ব্লক রেইডে। জঙ্গি ছাড়া গ্রেফতার অধিকাংশই জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, সারা দেশে জঙ্গিবিরোধী ব্লক রেইড চলছে। দেশের মানুষের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। এসব অভিযানে নিরীহ কোনো মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে না। কল্যাণপুরে অভিযানে হতাহতরা সবাই জঙ্গি। সেখানে সাধারণ কোনো মানুষ নেই।

তিনি বলেন, দু-এক দিনের মধ্যে বড় ধরনের নাশকতা ঘটাতেই কল্যাণপুরে অবস্থান নিয়েছিল জেএমবি সদস্যরা। ব্লক রেইড নামে যৌথবাহিনীর রুটিন অভিযান চলছিলো। অভিযান সফল হয়েছে। আগে থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ব্লক রেইড দেয়া হচ্ছে। তবে কখন কোথায় অভিযান চালানো হবে তা জানানো হচ্ছে না। রাজধানীতে বিভিন্ন জায়গায় ব্লক রেইড চলবে বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ১০ জুন থেকে এক সপ্তাহের জন্য চলা অভিযানে ১৯৪ জন জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছিল পুলিশ সদর দফতর। জঙ্গিদের মধ্যে জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) ১৫১, জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশের ৭, হিযবুত তাহ্রীরের ২১, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) ৬, আনসার আল ইসলামের ৩, আল্লাহর দলের ৪, হরকাতুল জিহাদের ১ ও আফগানিস্তান থেকে ফেরত একটি জঙ্গি সংগঠনের ১ জন সদস্য রয়েছেন।

ৱ্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপস্) কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান বলেন, জঙ্গিবাদ দমনে পরিস্থিতি বিবেচনা করে যা প্রয়োজন তা-ই করবে ৱ্যাব। ঢাকার বাইরে অনেক অপারেশনেই ৱ্যাব-পুলিশের যৌথ অভিযান হচ্ছে। জঙ্গিবাদ দমনে কোনো ধরনের ছাড় নয়। বুধবার দিবাগত রাতে রাজধানীর রমনা থানার নয়াটোলা বস্তিতে পুলিশ ব্লক রেইড চালিয়েছে। তবে অভিযানে কেউ আটক হয়নি। রমনা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আলী হোসেন জানান, রাত ১০টায় নয়াটোলার ১২ নম্বর বস্তিতে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী ধরতে অভিযান চালানো হয়। ঘণ্টাব্যাপী অভিযানে কেউ আটক হয়নি। এর আগের রাতে মোহাম্মদপুরে সাঁড়াশি অভিযান চালায় পুলিশ। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কর্মকর্তারা জানান, গুলশানে জঙ্গি হামলার পর রাজধানীর সন্দেহভাজন মেস ও বাড়িতে ব্লক রেইড চালানোর নির্দেশ দেন ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া। এর অংশ হিসেবেই প্রায় প্রতিদিন রাজধানীতে ব্লক রেইড চালানো হচ্ছে। এরই মধ্যে ব্লক রেইডে শতাধিক সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের অনেকেই বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত। এদিকে জঙ্গি ধরতে এরই মধ্যে ৱ্যাব-পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়েছে সিরাজগঞ্জ, বগুড়া ও গাইবান্ধার গহিন চরে। গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য ছিলো, বিভিন্ন সময় ওই চরগুলোতে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলো জঙ্গিরা। বিপথগামী যুবকদের জঙ্গিবাদ থেকে ফিরে এলে ১০ লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে- সিরাজগঞ্জের চরেই এ ঘোষণা দিয়েছিলেন ৱ্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ। ডিএমপির উপকমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবেই ব্লক রেইড চালানো হচ্ছে। ব্লক রেইডের জন্য নগরবাসীর আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।

 

Leave a comment