জঙ্গিবাদ দমনে চালাতে হবে সর্বাত্মক জোরদার প্রয়াস

 

হয়তো ঘটে যেতে পারত অনাকাঙ্ক্ষিত আরো বড় ধরনের ঘটনা। কিন্তু গোয়েন্দা নজরদারি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর যথাযথ তৎপরতা ও দূরদর্শিতায় দেশ রক্ষা পেলো আরেকটিক বিপর্যয়ের হাত থেকে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সবাইকে আমরা অভিনন্দন জানাই। রাজধানীর কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানায় চালানো যৌথ অভিযানটিকে একটি সফল অভিযান হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। পরিস্থিতি বিশ্লেষণক্রমে এ কথাও বলা যায় তা হলো, গত কিছুদিন ধরে একাধিক সন্ত্রাসী হামলায় বিষয়টি স্পষ্ট হয় যে, অল্প দিন আগেও জঙ্গিবাদ-উগ্রবাদ-সন্ত্রাস সম্পর্কে যে ধারণা আমাদের দায়িত্বশীলদের ছিলো এর চেয়ে জঙ্গি-উগ্রবাদীদের অপকাণ্ডের ছক অনেক বেশি বিস্তৃত। তবে গুলশান ও শোলাকিয়ায় সংঘটিত মর্মন্তুদ চরম উদ্বেগজনক ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত প্রত্যেকটি বাহিনী কিংবা সংস্থার দায়িত্বশীলদের কর্মতৎপরতা বেড়ে যাওয়ার সুফল আমরা ইতোমধ্যে লক্ষ্য করেছি।

বিদ্যমান বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে এ কথাও বলা যায় যে, যদি তাদের অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের নজরদারি ও মাঠ পর্যায়ে তৎপরতা যথাযথ না হতো তাহলে হয়তো আরো বড় রকমের কোনো ঘটনা ঘটাতে সক্ষম হতো অশুভ কিংবা বিপথগামী শক্তি। কল্যাণপুরে অভিযানকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সদস্যদের সাথে গোলাগুলিতে ৯ জঙ্গি নিহত হয় এবং গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গ্রেফতার হয় রাকিবুল হাসান ওরফে রিগ্যান নামে অপর এক জঙ্গি। সে এক বছর আগে বাড়ি ছেড়েছে বলে পত্রিকান্তরে প্রকাশ। কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানা থেকে বিপুল পরিমাণ জীবনবিনাশী উপকরণ উদ্ধার করা হয়। এর সঙ্গে উদ্ধার হয় বেশ কিছু জিহাদি বই, নতুন কালো পাঞ্জাবি ও পতাকা যা সম্প্রতি জঙ্গিরা আইএস হিসেবে নিজেদের জাহির করতে ব্যবহার করে আসছে। পুলিশের তথ্য মোতাবেক পত্রিকায় প্রকাশ, কল্যাণপুরের পাঁচ নম্বর সড়কে একটি ছয়তলা ভবনে পঞ্চম তলায় জঙ্গিরা আস্তানা গেড়ে অবস্থান করছিলো। ভবনটিতে বেশির ভাগ ফ্ল্যাট মেস হিসেবে ভাড়া দেয়া হয়েছিলো। বাড়ির মালিকের স্ত্রী ও ছেলেসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এই বাড়িটির নাম তাজ মঞ্জিল হলেও এলাকায় বাড়িটি জাহাজ বিল্ডিং হিসেবে পরিচিত এবং স্থানীয় অনেকেই জানিয়েছেন সেখানে অপরিচিতদের আনাগোনা ছিলো। স্বস্তির বিষয় হচ্ছে, আমাদের গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যদের পাশাপাশি পুলিশ-ৱ্যাব-সন্ত্রাসবিরোধী ইউনিট ও সোয়াট চমকপ্রদ সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে। এই সক্ষমতা আরো বাড়ানোর কার্যকর উদ্যোগ নেয়া জরুরি। ঘটনার মাত্র একদিন আগে প্রধানমন্ত্রী আগস্টে বড় জঙ্গি হামলার আশঙ্কা ব্যক্ত করেছিলেন। উদ্ধারকৃত আলামত পর্যবেক্ষণের পর পুলিশের ভাষ্য হচ্ছে, এই জঙ্গিরা গুলশানে হামলাকারীদের একই গ্রুপের তথা নিষিদ্ধ ঘোষিত জেএমবিতে সংগঠিত। মনে রাখা প্রয়োজন, নিষিদ্ধ ঘোষিত জেএমবি ছাড়াও আনসারুল্লাহ এবং হিযবুত তাহরীরও সক্রিয়তা প্রদর্শন করে চলেছে।

দেশে হঠাৎ করে জঙ্গি-উগ্রবাদ-সন্ত্রাসীদের কৌশল পাল্টে নানারকম অপতৎপরতায় লিপ্ত হওয়ার আলামত ক্রম স্পষ্ট হচ্ছে। এমতাবস্থায় প্রয়োজন হলো, জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকারকে জনগণকে সম্পৃক্ত করে এই আপদ-বিপদের মোকাবেলায় অধিকতর সক্রিয় হওয়া। কিভাবে এই উগ্রবাদী জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের হাতে অর্থ ও অস্ত্র আসছে এর উৎস সন্ধান করে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া। কল্যাণপুরে সফল অভিযানের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত প্রত্যেকটি বাহিনী ও সংস্থার সদস্যদের ধন্যবাদ দিয়ে আমরা এ কথাও বলতে চাই, সার্বক্ষণিক এ ব্যাপারে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। অন্ধকারের বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে আমাদের সার্বিক প্রয়োজনেই জয় নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে কঠোর থেকে কঠোরতর হতেই হবে। জঙ্গিবাদ-উগ্রবাদ-সন্ত্রাস দমনে চালাতে হবে সর্বাত্মক জোরদার প্রয়াস। একই সঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে ধৃতদের দ্রুত বিচার। সাধারণ মানুষ কল্যাণপুরে অভিযানের ক্ষেত্রে পুলিশসহ অন্যান্য আইনি সংস্থাকে সহযোগিতার জন্য যেভাবে এগিয়ে এসেছে তা একটি সুদৃষ্টান্ত হিসেবে ভবিষ্যতের জন্য অনেক কাজে আসবে।