এমপিদের অনেকেই নিরাপত্তা চান আছে ভিন্নমতও

 

স্টাফ রিপোর্টার: দুই সংসদ সদস্যের নিরাপত্তা চাওয়ার সঙ্গে একমত আরও অনেক সংসদ সদস্য। সাম্প্রতিক পরিস্থিতির নিরিখে তারা মনে করেন, সুষ্ঠু উন্নয়নের স্বার্থে জনপ্রতিনিধি তথা আইনপ্রণেতাদের নিরাপত্তা বিধান জরুরি। অনেক এমপির মতে, সচিব, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা পেলে তাদের চেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন সংসদ সদস্যরাও নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার রাখেন। তবে একজন সংসদ সদস্য বলেন, সারা পৃথিবীতেই জনপ্রতিনিধির নিরাপত্তা দেয় জনগণ। তাই তাদের বাড়তি নিরাপত্তার প্রয়োজন নেই। আরেকজনের মতে, জনগণের নিরাপত্তা বিধান করাই প্রধান কাজ। সংসদ সদস্যদের আলাদা করে নিরাপত্তার দরকার নেই। জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ এবং জাসদের সংসদ সদস্য মাইনুদ্দিন খান বাদল বুধবার জাতীয় সংসদে দেয়া বক্তব্যে সংসদ সদস্যদের জন্য নিরাপত্তা চান। এ প্রসঙ্গে যুগান্তরের পক্ষ থেকে শুক্রবার একাধিক সংসদ সদস্যের সঙ্গে কথা হয়।

আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক চট্টগ্রাম-৭ আসনের সংসদ সদস্য ড. হাছান মাহমুদ বলেন, এমপিদের নিরাপত্তা দরকার। কিন্তু কীভাবে, কোন প্রক্রিয়ায় নিরাপত্তা দেয়া হবে, সেটা সরকার ঠিক করবে। তবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপাররা ব্যক্তিগত নিরাপত্তা পান। তাদের চেয়ে বেশি মর্যাদাসম্পন্ন হওয়ায় এমপিরাও তা দাবি করতে পারেন।

দিনাজপুর-৩ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম বলেন, নিরাপত্তার মালিক আল্লাহ রাব্বুল আল আমিন। কিন্তু দেশের সম্প্রতি অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কেউ নিরাপত্তা চাইতে পারেন। এমপিদের নিরাপত্তা প্রশ্নে ইতোমধ্যে স্পিকারের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, স্পিকার বিষয়টি দেখবেন।

রংপুর-৫ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য এইচএন আশিকুর রহমান বলেন, নিরাপত্তা সার্বিক একটি বিষয়। শুধু ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীতে তা নিশ্চিত হয় না। আইনশৃংখলা পরিস্থিতি এবং সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার ঘটনায় এমপিদের নিরাপত্তা থাকা উচিত। কিন্তু কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস নির্মূল করাই হবে বড় নিরাপত্তা। কেননা এতে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।

পঞ্চগড়-১ আসনের সংসদ সদস্য, জাসদের (একাংশ) সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান অবশ্য মনে করেন, সারা বিশ্বে জনপ্রতিনিধিদের নিরাপত্তা জনগণ। সেটা এদেশেও হওয়া উচিত। এমপিদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা প্রয়োজন নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।

নিরাপত্তা চান বরিশাল-৫ আসনের সংসদ সদস্য জেবুন্নেছা আফরোজ। তিনি বলেন, মন্ত্রীরা সরকার থেকেই নিরাপত্তা পান। সচিব, জেলা প্রশাসকরাও নিরাপত্তা পান। সংসদ সদস্যরা জনপ্রতিনিধি। জনগণের প্রয়োজনে তাদের এলাকা থেকে রাজধানী যাওয়া-আসার ওপর থাকতে হয়। কিন্তু সংসদ সদস্যদের নিরাপত্তা কোথায়? তাই তাদেরও নিরাপত্তা দেয়া উচিত।

একই মত চট্টগ্রাম-২ আসন থেকে নির্বাচিত তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারির। তিনি বলেন, সব সংসদ সদস্যের জন্য নিরাপত্তা দরকার। সেটা সংসদও ব্যবস্থা করতে পারে আবার সরকারও ব্যবস্থা করতে পারে। তার প্রতি জামায়াতে ইসলামের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি জানান, এ কারণে তার ভেতর নিরাপত্তাহীনতা কাজ করে। তিনি নিরাপত্তা চেয়ে ২ মাস আগে আবেদনও করেছেন। কিন্তু এখনও নিরাপত্তা দেয়া হয়নি।

সিলেট-২ আসনের সংসদ সদস্য ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী মনে করেন, সংসদ সদস্যদের আলাদা করে নিরাপত্তা ব্যবস্থার দরকার নেই। বরং জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাটা জরুরি। সংসদ সদস্যরা চাইলে নিজের ব্যবস্থাপনায় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পারেন, যা জনগণ পারবে না। তাই জনগণের নিরাপত্তা বিধানই মুখ্য হওয়া উচিত।

প্রসঙ্গত, বুধবার জাতীয় সংসদে এমপিদের নিরাপত্তা চান দুই সংসদ সদস্য। জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ এবং জাসদের (একাংশ) মাইনুদ্দিন খান বাদল অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, মন্ত্রীদের রাস্তায় বের হলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। জেলা প্রশাসক-পুলিশ সুপারদেরও নিরাপত্তার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু এমপিদেরই জনগণের স্বার্থে বেশি বাইরে যেতে হয়। তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা কই? তারা এমপিদের নিরাপত্তা দেয়ার দাবি জানান।