Untitled

জিত্লেন ফারিয়া

 বিনোদন প্রতিবেদক: বিগত কয়েক বছর ধরে ঢাকাই চলচ্চিত্র নিয়ে হতাশার বুলি শোনা যাচ্ছে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট প্রায় সবার কাছেই। বিশেষ করে ঈদ ঘিরে এই আলোচনাগুলো ছিল উল্লেখযোগ্য। কারণ ঈদে হলগুলোতে উপচে পড়া ভিড় থেকে শুরু করে প্রচারণা বিষয়ে বলতে গেলে তেমন কিছুই আসলে আলাদা করে বলার মতো ছিল না। সেই হতাশা অনেকটা হলেও ঘুচেছে এবার ঈদে। খুশির হাওয়া লেগেছে ঢাকাই চলচ্চিত্রে। এবার ঈদে মুক্তি প্রাপ্ত চারটি চলচ্চিত্রের দুটিই ছিল যৌথ প্রযোজনার। এরমধ্যে ‘বাদশা দ্য ডন’ ছবিতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে মুক্তি পায় জিতের প্রথম কোনো ছবি। বাংলাদেশে জিতের অনেক ভক্ত থাকায় ‘বাদশা দ্য ডন’ ছবিটি ছিল দর্শক আগ্রহের মধ্যে অন্যতম। ছবিটি মুক্তির পর হলে দর্শকদের ভিড় বিষয়টি আরো স্পষ্টভাবে বোঝা যায়। অন্যদিকে, এর আগেও ফারিয়া যৌথ প্রযোজনার ছবিতে ওপার বাংলার নায়কের সাথে অভিনয় করলেও জিতের মতো বিগ বাজেট নায়কের সাথে এটিই প্রথম তার কাজ। আর এরমধ্য দিয়ে ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট ঘটলো তার। ‘বাদশা দ্য ডন’ ছবিটি পরিচালনা করেছেন বাবা যাদব। অভিনয়ে আছেন জিত্, নুসরাত ফারিয়া, ফেরদৌস, রজতভ দত্ত প্রমুখ। প্রযোজনায় আছে জাজ মাল্টিমিডিয়া ও এসকে মুভিজ। অ্যাকশনধর্মী ছবি ‘বাদশা দ্য ডন’। লেখাটি লেখার সময় ‘বাদশা’ নামের পর ‘দ্য ডন’ মিসিং হয়ে যাচ্ছিল। কারণ হচ্ছে ছবিতে জিতের প্রধান ডায়লগ ছিল ‘বাদশা নয়, ডন বাদশা’। পুরো ছবি জুড়ে এই ডায়লগ শুনতে শুনতে কান পেকে গেছে। ছোটবেলার গল্প দিয়ে শুরু হয় ছবিটি। এখানে গল্পে কোনো শক্ত গাঁথুনি নেই। শুরুটা ‘ওল্ড ওয়াইন ইন নিউ বোটল’ প্রবাদের মতোই। সময়ের প্রয়োজনে যতটুকু পরিবর্তন থাকার কথা ছিল তার চেয়ে অনেক কমই বলা চলে। তবে পুরো ছবিটি ভরপুর বিনোদন আর সাসপেন্স নির্ভর। ছোটবেলা বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় জিত্। এরপর আবারো বড় হয়ে ফিরে আসা নিজ এলাকাতেই। কিন্তু বাবা-মা’র জন্য নয়, অন্য কোনো উদ্দেশ্যে। সেখানে ছিল দুই মাফিয়া ফেরদৌস ও রজতভ দত্ত। কোনো এক ভাবে জিত্ জড়িয়ে যায় রজতভ দত্তের দলে। এরপর জিতকে লন্ডন পাঠানো হয় ফেরদৌসের বোনের সাথে প্রেমের ছক কষতে। এতক্ষণ পর্যন্ত দর্শক মোটামুটি বিনোদিত বলা যায়। কারণ এরইমধ্যে জিতের একটি অ্যাকশন দৃশ্য ঠিক ব্ল্যাক কফির মতোই আমেজ ছড়িয়ে আছে। লন্ডনে পৌঁছে যায় জিত্। সাথে ছিল তার বন্ধু। নুসরাত ফারিয়ার এন্ট্রি এখানে। স্ক্রিনে তার এন্ট্রির সাথে সাথেই পুরো হলে শিস বাজছে। বহুদিন পর হলে শিস শুনলাম। সবাই একটু নড়েচড়ে বসেছেন। ছবির ক্লাইমেক্স শুরু এখান থেকেই। জিতের মিশন ফারিয়াকে প্রেমের জালে ফাঁসানো। গল্পকার এখানে বেশ ভালোই গল্প বেঁধেছেন। একজন ফ্যাশন ফটোগ্রাফার পরিচয়ে ফারিয়ার সাথে পরিচিত হয় জিত্। বেশ কমেডি চলতে থাকে ছবির এই সময়টাতে। ভালো লেগেছে জোর করে হাসানো মতো সস্তা বিষয়গুলো জোড়েননি পরিচালক। প্রতিটি দৃশ্যেই হলে প্রায় সব দর্শকদের প্রতিক্রিয়া ছিল একই রকম। কখনো নিস্তব্ধ, আবারো কখনো সবাই মিলে দম ফাটানো হাসি হাসছেন। এখানে পরিচালক বাহ বা… পাবেন শতভাগ। কারণ পুরো ছবির সাথে সব ধরনের দর্শকদের একইরকম দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখাটা অবশ্যই দক্ষতার বিষয়। সেই দক্ষতা পরিচয় খুব সুক্ষভাবেই প্রমাণ দিয়েছেন পরিচালক বাবা যাদব। লন্ডনে নিজের কাজের সাথে ফারিয়াকে জড়িয়ে নেন জিত্। এরপর ফারিয়ার সাথে জিতের প্রেম। লন্ডন থেকে দেশে ফিরে আসা। এই জায়গা একটি বিষয় বলি। লন্ডন ছাড়া ছবিটির দৃশ্যায়ণ বাংলাদেশ নাকি ভারতে হয়েছে সেই বিষয়টি খুব একটা প্রতিষ্ঠিত ছিল না। গাড়ির পেছনে ‘ঢাকা মেট্রো’ লেখাটি দিয়ে পরিচালক যদিও বাংলাদেশকে বোঝাতে চেয়েছেন কিন্তু দৃশ্য দেখে কনফিউজড। তবে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত গল্পে দর্শকরা এতটাই ডুবে ছিলেন এই বিষয়টি নিয়ে কোনো আলোচনা তৈরি হয়নি। দেশে ফিরে আসার পর শুরু হয় নতুন আঙ্গিকের গল্প। কনফিউশন শব্দটি বারবারই মাথায় ঘুরছে। ঠিক এক মিনিট পরে ঘটনাটি কি হবে বোঝা মুশকিল। উত্তেজনা তৈরি হচ্ছে দর্শকদের মাঝে। এরইমধ্যে অভিনেত্রী সুষমা সরকারের এন্ট্রি। তাকে ঘিরে শুরু হয় দর্শকদের মনে নতুন করে জটলা পাকানো। ছবি প্রায় শেষ পর্যায়। এতক্ষণ ধরে দর্শকদের মনের মধ্যে যে প্রশ্নগুলো জমে ছিল তার উত্তরের পালা চলছে। দৃশ্যে ধারাবাহিকতায় ‘কনফিউশন’ শব্দটি মিলিয়ে যাচ্ছে মাথা থেকে। শেষে রীতিমতো ফাইট দিয়ে ছবির ইতি টানার পালা চলছে। উপস্থিত ছবির প্রায় সবাই। এই জেনারের ছবিগুলোর শেষটা হয়তো একইরকম হয়। তবে একঘেঁয়েমি লাগার মতো নয়। দর্শক এমনটাই পছন্দ করে। ছবি শেষ, হল থেকে বেরুচ্ছি। বাহিরে ততোক্ষণে পরবর্তী শো’র লাইন। আমার পাশ দিয়ে একদল কলেজ পড়ুয়া ছাত্র যাচ্ছে। আর জিতের স্টাইল ফলো করে ডায়লগ আওড়াচ্ছে। একজন অভিনেতার স্বার্থকতা এখানেই।