ঝিনাইদহে র‌্যাবের তালিকায় নিহত ও প্রতিবন্ধীদের নাম!

 

 

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: দেশব্যাপী নিখোঁজদের মধ্যে ঝিনাইদহে ৱ্যাবের তালিকার ২৯ ব্যাক্তির মধ্যে নিহত ২ ব্যক্তির নাম রয়েছে। তারা হলেন, পৌর এলাকার চরখাজুরা গ্রামের দেলোয়ার হোসেন ওরফে দুলাল (৩০) ও একই গ্রামের গোলাম আজম ওরফে পলাশ (৩২)।  গত ২০১৫ সালের ২৩ ফেব্রয়ারি সদর উপজেলার ডেফলবাড়ি গ্রামের মাঠে এ ২ যুবকে গুলি করে হত্যা করা হয়। গোয়েন্দা থেকে পুলিশ পরিচয়ে এ ২ যুবককে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় জিডি করে। ৱ্যাবের তালিকায় বাড়ি ফিরে আসা, বিদেশে চাকরি করা ও প্রতিবন্ধীদের নামও পাওয়া গেছে। ৱ্যাবের তালিকা নিয়ে জেলাব্যাপী অনুসন্ধানে এ তথ্য পাওয়া গেছে। আবার ৱ্যাবের প্রকাশিত তালিকায় দুজন নিখোঁজ থাকারও প্রমাণ পাওয়া গেছে। তারা হলেন ঝিনাইদহ শহরের উপশহরপাড়া মসজিদের মোয়াজ্জিন সোহেল রানা ও সদরের হলিধানী গ্রামের রাশেদুজ্জামান রোজ। তবে পুলিশের নিখোঁজের তালিকায় সোহেল রানা থাকলেও রোজের নাম নেই। আর আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া জেলার নিখোঁজ ১০ ব্যক্তির নামও ওই তালিকায় নেই। ৱ্যাবের তালিকায় ৬২ নং ক্রমিকে সোহেল ও  ৬৩ নং ক্রমিকে মামুন রায়হান নামে দুই প্রতিবন্ধীর নাম রয়েছে। মামুনের বোন জেসমিন ও সোহেলের বোন শারমিন জানান, প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে প্রায় তারা হারিয়ে যেত। এ জন্য থানায় জিডি করা হয়েছিলো।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ৱ্যাবের তালিকায় থাকা কালীগঞ্জ উপজেলার হেলাই গ্রামের মাজেদুল হক (৩৫), দাদপুর গ্রামের আবু সাইদ ও বলরামপুর গ্রামের হাসান আলী (৩০) নিখোঁজ হয়নি। ওই তালিকা প্রকাশের আগে থেকেই তারা তাদের বাড়িতেই রয়েছেন। এদের পরিবারের সদস্যরা জানান, রাগারাগি ও অভিমান করে তারা বাড়ি থেকে চলে গেলে থানায় জিডি করা হয়। আর ওই জিডির ভিত্তেত্বে এই তালিকা নিখোঁজের তালিকা করা হতে পারে বলে তারা ধারনা করছেন। আর ২০৬ নং ক্রমিকে মহেশপুরের গোয়ালহুদা গ্রামের বাপ্পি ও ২৩২ নং ক্রমিকে একই গ্রামের ওয়াফিলও তাদের বাড়িতে রয়েছেন।

ওয়াফিলের বাবা ইয়াকুব হোসেন জানান, ১১ বছর বয়সে তার ছেলে ও বাপ্পি নামে তার এক বন্ধু নিখোঁজ হয়। পরে জানতে পারি ইংরেজি পরীক্ষা ভালো না হওয়ায় তারা ৬ দিন পালিয়ে ছিলো। এ ঘটনায় আমি থানায় জিডি করি। আর ওই ঘটনার ৩ বছর পর ৱ্যাবের করা তালিকা দেখে তিনি বিস্মত হয়েছেন বলে জানান তিনি। তিনি আরও জানান, গত ২ থেকে ৩ দিন আগে মহেশপুর থানার ওসি তাকে ডেকেছিলেন। আমি সেখানে গিয়ে সব বলে এসেছিলাম। এখন ৱ্যাব অফিস থেকে ফোন করে দেখা করার কথা বলা হচ্ছে।

হরিণাকুণ্ডু উপজেলার কাচারিতোলা গ্রামের ছব্দুল হোসেন জানান, তার জামাই মতিয়ার রহমান (৩০) মেয়ের সাথে রাগ করে সাগান্না গ্রামে তার নিজ বাড়ি চলে যান। আমি বিপদের কথা ভেবে থানায় জিডি করি। ৱ্যাব আমার বাড়িতে তদন্ত করতে আসে। আমি বলি পারিবারিক ঝামেলার কারণে আমি জিডি করেছিলাম। ৱ্যাব চলে যাওয়ার ৩ দিনের মাথায় দেখি নিখোঁজদের তালিকায় আমার জামাইয়ের নাম রয়েছে।

একই উপজেলার আদর্শ আন্দুলিয়া গ্রামের আকাশ জানান, তার ভাই ৱ্যাবের তালিকায় থাকা ৮১ নং ক্রমিকের শফিকুল ইসলাম বিদ্যুৎ এক বছর ধরে নিখোঁজ ছিলেন। সম্প্রতি তিনি বাড়ি ফিরে আসেন।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পদ্মাকর ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার আইয়ূব হোসেন জানান, তার এলাকার কাশিপুর গ্রামের শামীম আলী (২৬) ও মোজাম্মেল মোল্লাকে (২৮) ৱ্যাব খুঁজতে এসেছিলো। কিন্ত তারা নিখোঁজ হয়নি। শামিম বাড়িতে আছে আর মোজাম্মেল বিদেশে চাকরি করে। তিনি জানান, মোজাম্মেল ঝিনাইদহ শহরের হামদহ থেকে অপহরণ হয়েছিলো। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় আমরা জিডি করি। শৈলকুপার নিখোঁজ থাকা ৮ জনের মধ্যে সবাই বাড়িতে রয়েছেন। আবার কেওবা বিদেশে রয়েছেন। শৈলকুপার হুদা মাইলমারী গ্রামের আমিজ উদ্দীন জানান, তার ছেলে মাসুমকে সন্ত্রাসীরা ধরে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় আমি জিডি করি। পরে আমার ছেলে ফিরে আসে। একই উপজেলার চরআউশিয়া গ্রামের নাইমের নাম ৱ্যাবের তালিকায় ৮৪ নং ক্রমিকে রয়েছে। কিন্ত তার পরিবার জানায়, নাইম বিদেশে চাকরি করছেন। শৈলকুপার সাতগাছি গ্রামের মজিবর খা (২৮) বোয়ালিয়ার উজ্জ্বল, ওয়াসিম আকরাম (২৫), উমেদপুরের রবিউল ইসলাম (২৫), বাজারপাড়ার রফিকুল ইসলাম (২২) ও কৃষ্ণপুর গ্রামের তোতা (২৫) মিয়া নিখোঁজের তালিকায় থাকলেও তার পরিবার বলছেন তিনি বাড়িতেই রয়েছেন।
আর গান্না ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান জানান, ৱ্যাবের তালিকায় নিখোঁজ থাকা কালুহাটী গ্রামের আশিকুর রহমান রিপন (২৪) ও  আক্তারুজ্জামান তারা তাদের বাড়িতেই আছেন। গত ২০১৫ সালের অক্টোবরে রিপন ও আক্তারুজ্জামান নিখোঁজ থাকার কারণে জিডি করা হয়েছিলো।

অপরদিকে ঝিনাইদহের বিভিন্ন গ্রাম থেকে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেয়া ১০ জন নিখোঁজ রয়েছেন। দীর্ঘদিনেও তাদের কোন সন্ধান মেলেনি। নিখোঁজ ব্যক্তিরা হলেন- ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ষাটবাড়িয়া মসজিদের ইমাম আব্দুল হাই (৩৫), ঝিনাইদহ সদর উপজেলার চাপড়ী গ্রামের দশম শ্রেণির ছাত্র হাসান আলী, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পাগলাকানাই ইউনিয়নের কোরাপাড়া বটতলা এলাকার হোসেন আলী মোল্লার ছেলে যুবলীগ কর্মী জাহিদ ওরফে কোবরা জাহিদ, শৈলকুপা উপজেলার চরফুলহরি গ্রামের আমিরুল ইসলাম মণ্ডলের ছেলে শাহিন হোসেন পরশ, শহরের আদর্শপাড়া কচাতলার আবুল কালাম আজাদের ছেলে মাদরাসা ছাত্র আব্দুর রব। এছাড়া ঝিনাইদহের সোনালী পাড়ার সাবেক সেনা সদস্য কওছার আলী, তার ২ ছেলে বিনছার আলী ও বেনজির আলী, আরাপপুর চানপাড়ার মাদরাসার শিক্ষক শাহ আলমের ছেলে আজমুল হুদা ও কালীগঞ্জ উপজেলার ষাটবাড়িয়া গ্রামের আকরামের ছেলে। তাকে রাজধানী ঢাকার খিলগাঁও এলাকার জনৈক মাহবুবের বাসা থেকে ৱ্যাব পরিচয় দিয়ে নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

জেলাব্যাপী নিখোঁজ ব্যক্তিদের তালিকা নিয়ে ঝিনাইদহ পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, বিভিন্ন সময় জেলায় ২৪ জন নিখোঁজের খবর তাদের কাছে ছিলো। কিন্তু নিখোঁজ থাকা সবাই বাড়ি ফিরে এসেছেন। আবার কেওবা বিদেশ চাকরি করতে গেছেন। সর্বশেষ পুলিশের পক্ষ থেকে জেলায় ৪ জন নিখোঁজ থাকার কথা বলা হচ্ছে। এরা হলেন মসজিদের মোয়াজ্জিন সোহল রানা, শৈলকুপার উজ্জ্বল, মজেদুল ও তোতা মিয়া। তবে সোহেল রানা ছাড়া অন্য ৩ জনের সর্বশেষ তথ্য পুলিশের কাছে নেই।

ৱ্যাবের একটি সূত্র জানায়, বিভিন্ন সময় ঝিনাইদহের বিভন্ন থানায় করা জিডির ভিত্তিত্বে নিখোঁজের এ সব তালিকা করা হয়েছে। হারিয়ে বা রাগারাগি করে বাড়ি ছাড়া ব্যক্তিরা ফিরে আসার কারণে নিখোঁজের তালিকা এখন হাল নাগাদ করে দেখা হচ্ছে বলেও সূত্রটি জানায়।