চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উপবৃত্তির টাকা আত্মাসাতে অভিযোগ

অনিয়মের কারণে আকন্দবাড়িয়া স্কুলের শিক্ষকরা হলেন অবরুদ্ধ

এলাকাবাসীর বিক্ষোভ ও বিদ্যালয় ঘেরাও : জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উপবৃত্তির টাকা বিতরণে অনিয়ম ও টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। একই ধরনের অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে চুয়াডাঙ্গার আকন্দবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে উপবৃত্তির টাকা বিতরণের সময় গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে গ্রামের জনসাধারণ বিক্ষোভ করেন। পরে তারা বিদ্যালয় ঘেরাও করে প্রতিবাদ জানান। এ সময় উপবৃত্তির টাকা বিতরণ বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক ও চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এলাকাবাসীর জানায়, উপবৃত্তির টাকা দেয়ার নামে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নানা টালবাহানা করছেন। কার্ডে স্বাক্ষর করিয়ে ও ছবি তোলার নামে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন তারা। শরিফুল ইসলামের স্ত্রী রেশপাতি খাতুন জানান, গতকাল দুপুরে টাকা বিতরণ করা হয়। তার মেয়ে প্রথম শ্রেণির ছাত্রী হাবিবা খাতুন উপবৃত্তির টাকা নিতে যায়। তাকে ৯শ’ টাকার পরিবর্তে ৬শ’ টাকা দেয়া হয়। তিনি টাকা কম দেয়ার কারণ জানতে চাইলে তাকে এটা ওটা বলে বুঝিয়ে দেয়া হয়। পরে তিনি এলাকাবাসীকে জানালে ক্ষুব্ধ লোকজন বিক্ষোভসহ বিদ্যালয় ঘেরাও করে টাকা বিতরণ বন্ধ করে দেয়। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ বিদ্যালয়ে প্রতি মাসে পিকনিক করা হয় এবং সেখানে শিক্ষকসহ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও সদস্যরা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে ভুরিভোজ করেন। এ পিকনিকের টাকা আসে কোথা থেকে?

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সামিনা আনজুমান জানান, সরকারি বিধি মোতাবেক উপবৃত্তির টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এখানে যারা রিপিটার আছে তারা টাকা পাবে না। যারা পরীক্ষায় এক বিষয়ে ফেল করেছে তারাও টাকা পাবে না। অভিভাবকরা বিষয়টি জানেন না, তাই তারা শিক্ষকরা টাকা আত্মসাৎ করছেন বলে মনে করছেন।

বিদ্যালয়ের সভাপতি আনোয়ার হোসেন জানান, তিনি অসুস্থ। ঢাকায় আছেন। ঘটনাটি শুনেছেন। তিনি জানান, কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মাধ্যমে টাকা বিতরণ করা উচিত হয়নি।

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক চুয়াডাঙ্গা শাখা ব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন জানান, কৃষি ব্যাংক কর্মকর্তারা বিদ্যালয়ে নিজেরাই টাকা বিতরণ করেন। কোনো শিক্ষকের মাধ্যমে নয়। তাছাড়া বিদ্যালয় থেকে যেভাবে তালিকা দেয়া হয় ঠিক সে অনুযায়ী টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু হাসান জানান, ঘটনাটি শুনেই দ্রুত সেখানে যাই এবং উপস্থিত সকলকে শান্ত করি। কার্ডে স্বাক্ষর করে টাকা নেয়ার বিষয়টি আমাকে অভিভাবকবৃন্দ জানান। ব্যাপারটি তদন্তে আগামীকাল (আজ) বিদ্যালয়ে যাবো। ঘটনার সত্যতার প্রমাণ পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। রাত ৯টা পর্যন্ত অবশিষ্ট টাকা বিতরণ করা হয় বলেও জানান তিনি।

এদিকে, টাকা কম দেয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগী অভিভাবক ও এলাকাবাসী।

অভিভাবকগণ জানান, মঙ্গলবার বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে উপবৃত্তির টাকা বিতরণ শুরু হয়। ওই বিদ্যালয়ে কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে ৩৩৩ ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে শিক্ষা উপবৃত্তি বাবদ ৩ লাখ ৬১ হাজার ৭শত টাকা দেয়ার কথা। সেখানে একজন ব্যাংকের কর্মকর্তা উপস্থিত থাকার কথা ছিলো; কিন্তু কোনো কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন না। টাকা কম দেয়ার অভিযোগ তুলে কয়েকজন অভিভাবক অবরুদ্ধ করে রাখেন শিক্ষকদের। খবর পেয়ে অন্যান্যের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক জাহিদুল ইসলাম সেখানে যান।

ছাত্র-ছাত্রীর অভিভাবকরা অভিযোগ করে বলেন, অনুপুস্থিত ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে অনুমোদিত টাকার পরিমাণের বিপরীতে রেজিস্ট্রেশন শিটে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়েও তাদের হাতে ২শ’ টাকা করে কম দেয়া হয় এবং উপবৃত্তি টাকা দেয়ার কথা বলে অভিভাবকদের কাছ থেকে ৫-৬ টাকা করে হাতিয়ে নেন শিক্ষকরা। পরে প্রধান শিক্ষক সামিনা খাতুন সাংবাদিকদের সামনে টাকা কম পাওয়া ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকদের অবশিষ্ট টাকা দিতে গেলে তারা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন।

একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে দামুড়হুদার হরিশচন্দ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। গত পরশু উপবৃত্তির টাকা কম দেয়ায় বিদ্যালয়ের  শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে। এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনছার উদ্দীন বলেন, শিক্ষার্থীরা নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিত না হওয়ায় টাকা কিছু কম পাচ্ছে। সচেতন অভিভাবকরা বলেছেন ওই জায়গায়ই তো মারপ্যাঁচ। কে কম পাবে আর কে বেশি পাবে, তার তালিকা তো কোথাও নেই। শিক্ষকরা মনগড়া একটা কথা বলে অভিভাবকদের বুঝিয়ে ছেড়ে দিচ্ছেন। কিন্তু কলম-খাতায় কী হয়ে যাচ্ছে তাতো অভিভাবকরা দেখতে পাচ্ছে না। এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের সদস্য হাফিজুর রহমান বলেন প্রধান শিক্ষক নিয়ম অনুসারে কাজ করেছেন।

আলমডাঙ্গার আসমানখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মোচাইনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নতিডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মোড়ভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সদর উপজেলার বোয়ালমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও ছাত্র-ছাত্রীদেরকে উপবৃত্তির টাকা কম দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি তদন্তপূর্বক খতিয়ে দেখে দোষী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি তুলেছে ভুক্তভোগী অভিভাবক মহল।