গাংনীর কাজিপুরে কপোত-কপোতী আটক : ইউপি সদস্যর ক্ষমতার দাপট!

 

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর গাংনী উপজেলার কাজিপুর গ্রামে গত রোববার রাতে একজোড়া কপোত-কপোতী আটক করে স্থানীয় লোকজন। মধ্যরাত থেকে দুজনকে একটি ঘরে আটকে রাখা হলেও পুলিশে না দিয়ে ছেড়ে দিয়েছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য খবির উদ্দীন। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কাজিপুর গ্রামের খাঁপাড়ার লিয়াকত আলীর ছেলে ছেলে সেন্টুর মিয়ার সাথে একই গ্রামের কাচারীপাড়ার এক মেয়ের (১৫) প্রেমসম্পর্ক ছিলো। এর জেরে গত রোববার রাতে দুজনে ঘর ছাড়ে। এক পর্যায়ে প্রতিবেশীরা তাদেরকে আটক করে। রাতে স্থানীয় একটি ক্লাবঘরের মধ্যে দুজনকে আটকে রাখা হয়। সকালে গ্রাম্য মোড়ল ও ইউপি সদস্যকে খবর দিয়ে প্রেমিক-প্রেমিকার সাজা দাবি করেন গ্রামবাসী। গত চার বচর ধরে তাদের দুজন অসামাজিক কাজে জড়িত বলে অভিযোগ উত্থাপন করেন প্রতিবেশীসহ গ্রামের অনেকেই।

এদিকে ক্লাবঘর প্রাঙ্গণে সকাল থেকেই গ্রামের উৎসুক নর-নারী ভিড় করেন। শুরু হয় সালিস। কিন্তু ছেলে ও মেয়ের পিতার পরিবার তাদের বিয়ে দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এ ধরনের ঘটনায় সামাজিক বিচারে বিয়ে হচ্ছে প্রকৃত বিচার বলে মতামত প্রকাশ করেন সালিসপতিরা। সালিসের এক পর্যায়ে উভয় পরিবার কিছুটা নমনীয় হলেও বেকে বসেন নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য ইউপি সদস্য। তিনি ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে তাদের বিচার কিংবা পুলিশে সোপর্দ না করে জনসম্মুখে ছেড়ে দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন উপস্থিত গ্রামের অনেকেই।

গ্রামের বেশ কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, তাদের মধ্যে অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে। তা না হলে কেন গভীর রাতে দুজন একসাথে মিলিত হবে। গত চার বছর দরে দুজনের সম্পর্কে আপত্তিকর অভিযোগ উঠলেও দুই পরিবারের কেউ-ই পাত্তা দেয়নি। ফলে সমাজে তাদের নিয়ে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। এমতাবস্থায় তাদের আটক করে ছেড়ে দেয়ার পর গ্রামাবাসী এখন হতাশ। এ ধরনের অপরাধের ঘটনা ঘটিয়ে যদি কেউ পার পেয়ে যায় তাহলে সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে তিনি কিভাবে প্রশাসনকে অবহিত না করে মনগড়া বিচার করলেন তা ভেবে পাচ্ছেন না সচেতন মহল। প্রেমিক-প্রেমিকা জুটিকে পুলিশে সোপর্দ না করে ছেড়ে দেয়ায় ইউপি সদস্যদের বিরুদ্ধে অর্থবাণিজ্যেরও অভিযোগ তুলেছেন তারা। তবে অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে ইউপি সদস্য খবির উদ্দীন জানান, দুই পরিবারের কেউ বিয়ে দিতে রাজি নয় বিধায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে। পুলিশে কেন সোপর্দ করা হয়নি প্রশ্ন করলে তিনি কৌশলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।

এর আগে ২০১৩ সালে ওই মেয়েকে কুপ্রস্তাব দেয়ার অভিযোগ তুলে তার বড় ভাই গাংনী থানায় একই গ্রামের জিনারুল ইসলাম, রতন, ইমরান ও ইলিয়াছের নামে একটি মামলা দায়ের করেছিলেন। তখন ওই মেয়ে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছিলেন। কিন্তু মামলার পর থেকে সে লেখাপড়া বন্ধ করে দেয়। তবে তার পরিবারের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েরের অভিযোগে গ্রামের মানুষের মাঝে ক্ষোভ শুরু হয়। নিরপরাধ ওই যুবকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলাটি তুলে নেয়ার দাবি জানান গ্রামাবাসী।

ভুক্তভোগীসূত্রে আরো জানা গেছে, সেন্টুর সাথে ওই মেয়ের প্রেমসম্পর্কের বিষয়টি গ্রামে জানাজানি হয়। বিষয়টি লোকজনের মাঝে প্রচার করার অভিযোগে ওই চার যুবকের বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত হয় প্রেমিক-প্রেমিকা জুটি। এর জের ধরেই পরিবারকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে মামলা করতে উদ্বুদ্ধ করে ওই মেয়ে। তাই রোববার রাতে তাদের একত্রে ধরার বিষয়টির মধ্যদিয়ে প্রকৃত ঘটনার রহস্য উন্মোচিত হয়েছে। তাই প্রেমিক-প্রেমিকা জুটির বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ ও মিথ্যা মামলা থেকে নিরপরধা চার যুবককে খালাস দেয়ার বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন ভুক্তভোগী পরিবার ও গ্রামবাসী।