আ.লীগ আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিলেই বিএনপির জামায়াত ত্যাগ

 

স্টাফ রিপোর্টার: জাতীয় ঐক্যের লক্ষে সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে জামায়াত ছাড়ার প্রস্তাব দিলেই কেবল স্বাধীনতাবিরোধী দলটির সঙ্গ ত্যাগ করবে বিএনপি। এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন মাঠের বিরোধী দল বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারক। বিএনপির একজন শীর্ষ নীতিনির্ধারক তার ঢাকার বাসায় রোববার দুপুরে আলাপকালে বলেন, জামায়াত নিয়ে এ মুহূর্তে তাদের দুই ধরনের ভাবনা রয়েছে। প্রথমত, ক্ষমতাসীনরা যদি খালেদা জিয়ার জাতীয় ঐক্যের ডাকে সাড়া দিয়ে জামায়াতকে বাদ দেয়ার আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেয়, সেক্ষেত্রে কেবল জামায়াতকে জোট থেকে বাদ দেয়ার চিন্তা রয়েছে। দ্বিতীয়ত, খালেদা জিয়ার ডাকে সরকার সাড়া না দিলে অন্যান্য রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ নিয়ে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলা হবে। এক্ষেত্রে জামায়াতকে জোট থেকে বাদ না দিয়ে ঐক্য প্রক্রিয়া থেকে দূরে রাখা হবে। এমনকি জঙ্গিবাদ ইস্যুতে জামায়াতকে সাথে নিয়ে কোনো কর্মসূচিও দেবে না দলটি। আপাতত এমন চিন্তাভাবনা করেই কর্মপরিকল্পপনা তৈরি করা হচ্ছে। তবে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জামায়াত নিয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত এলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না বলে জানান দলটির আরেক নীতিনির্ধারক। তার মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে জামায়াতকে বাদ দেয়ার যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে তা কাজে লাগাতে পারে দলটির হাইকমান্ড। বিএনপির এমন কঠোর অবস্থান বুঝতে পেরে জামায়াতও ঐক্য প্রক্রিয়া থেকে নিজেদের দূরে রাখার কৌশল নিতে পারে বলে এমন আভাস পাওয়া গেছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ বলেন, শুধু আওয়ামী লীগ নয়, অনেকেই জামায়াত ছাড়ার ব্যাপারে তাদের মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ যদি লিখিতভাবে কোনো প্রস্তাব দেয় তাহলে জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনে নিশ্চয় আমরা তা বিবেচনা করব। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, আমাদের প্রধান লক্ষ্য জাতীয় ঐক্য। ধরুন, বডিটা হল জাতি। তাতে যদি চুল লম্বা হয়ে যায় কাটতে আপত্তি নেই।  নখ কাটতে আপত্তি নেই। জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠায় আমরা সর্বাÍক চেষ্টা করব। যাতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারি। তাতে দু’একটা ছিটেফোঁটা  এদিক-সেদিক হয়ে যেতে পারে। তবে এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, বিএনপির ঐক্যের আহ্বান হল তাদের  নাটক। তারা এদেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিদের মদদদাতা। জঙ্গি সন্ত্রাস আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতাদের সঙ্গে জাতি কোনো ঐক্য দেখতে চায় না। আগুন সন্ত্রাসীদের বাঁচানোর জন্যই তারা এ কৌশল নিয়েছে।
সূত্র জানায়, জাতীয় বা বৃহত্তর ঐক্য এবং জামায়াত প্রসঙ্গটি নিয়ে লন্ডনে অবস্থানরত দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মতামতও নেয়া হবে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে লন্ডন সফররত দলের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাতের কথা রয়েছে। লন্ডন ও ঢাকার সূত্র জানায়, রোববার বাংলাদেশ সময় মধ্যরাতে অথবা সোমবার তাদের মধ্যে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। লন্ডন থেকে দেশে ফেরার পর জামায়াত ও জাতীয় ঐক্যের বিষয়ে তারেক রহমানের পরামর্শ বা সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে দলের চেয়ারপারসনের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। ইতিমধ্যে জোট, দলের সিনিয়র নেতা এবং বিশিষ্টজনের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন খালেদা জিয়া। সবার মতামত নিয়ে চূড়ান্তভাবে একটি সিদ্ধান্তে আসবেন তিনি। ওই সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করেই ঐক্যের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।  এ লক্ষ্যে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের আনুষ্ঠানিক চিঠি দেয়া হতে পারে। উগ্র ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে করণীয় ও জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়ে ওই চিঠি দেয়া হবে। জঙ্গি ইস্যুতে কোন প্রক্রিয়ায় একই প্লাটফর্মে আসা যায়, সেই ইঙ্গিতও থাকতে পারে ওই চিঠিতে। উগ্র ও জঙ্গিবিরোধী ‘জাতীয় কনভেনশন’ করা যায় কিনা, সেই চিন্তাও রয়েছে তাদের। লন্ডনে যাওয়ার আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান. সন্ত্রাস ও উগ্রবাদের যে ভয়াবহতা, তা জাতির জন্য মারাত্মক হুমকি। এটাকে মোকাবেলা করার জন্য দেশনেত্রী জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন। জাতীয় ঐক্যের এ ডাকে তিনি পরবর্তী পদক্ষেপ কী নিতে পারেন, সেগুলো বিভিন্ন পেশাজীবী ও সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে আলাপ শুরু করেছেন। সবার সঙ্গে আলোচনা করেই দেশনেত্রী তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। সূত্র জানায়, বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান জামায়াতকে ছেড়ে দেয়ার ব্যাপারে অনেক আগে থেকেই ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। কিন্তু হাইকমান্ডের সাড়া না পাওয়ায় তা কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি উগ্র ও জঙ্গিবাদ ইস্যুতে খালেদা জিয়ার জাতীয় ঐক্যের ডাক দেয়ায় আবারও আলোচনায় স্থান পায় জামায়াত। সরকারের পাশাপাশি বিশিষ্টজনরাও জামায়াতকে ছেড়ে দেয়ার দাবি জানাচ্ছেন। বিগত সময়ে জামায়াত নিয়ে জোটনেত্রী খালেদা জিয়া কৌশলী ভূমিকা পালন করলেও এবারের চিত্র ভিন্ন। সম্প্রতি জোটের বৈঠকে জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনে জামায়াতকে ছেড়ে দেয়ার ইঙ্গিত দেন তিনি।
জামায়াত সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার কঠোর মনোভাব বুঝতে পেরে জাতীয় বা বৃহত্তর ঐক্যের স্বার্থে দলটি স্বেচ্ছায় এ প্রক্রিয়া থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখতে পারে। এ নিয়ে দলটির কয়েকজন নীতিনির্ধারক এক ঘরোয়া আলোচনা করে এ ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিএনপি তাদের জোট থেকে না ছাড়া পর্যন্ত জামায়াত স্বেচ্ছায় জোট ছাড়বে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়। তবে এ ব্যাপারে দলটির কোনো নেতার আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এ প্রসঙ্গে বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ যুগান্তরকে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ডাকা জাতীয় ঐক্যের আহ্বান সফল করতে জামায়াতে ইসলামী স্বেচ্ছায় এ প্রক্রিয়া থেকে সরে দাঁড়াতে পারে।
তিনি বলেন, উগ্র ও সন্ত্রাসী হামলার পর জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার সুযোগ এসেছে। সরকারের উচিত ছিল এটাকে কাজে লাগানো, কিন্তু তারা এখন পর্যন্ত তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি। তবে বিএনপি চেয়ারপারসনকে ঐক্যের ব্যাপারে খুব সিরিয়াস মনে হচ্ছে। ঐক্যের ব্যাপারে তিনি যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে কার্পণ্য করবেন না বলেও তার ধারণা।
জামায়াত ইস্যুতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে শুরু করে বিশ্বের প্রভাবশালী কয়েকটি দেশও আপত্তি জানিয়ে আসছে। জামায়াতকে জোট থেকে সরিয়ে দিতে তারা নানা মাধ্যমে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছে বার্তা পাঠান। মুক্তিযোদ্ধার হাতে গড়া বিএনপি জামায়াতের সাথে জোট করায় সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে নানা সমালোচনার মুখে পড়েছে। জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক থাকায় বিপদে-আপদে তাদের পাশে পাচ্ছে না দেশের প্রগতিশীল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে।