দামুড়হুদায় আদম ব্যাপারীর খপ্পরে পড়ে জমিজমা বেঁচে দু যুবক এখন সর্বশান্ত

 

বখতিয়ার হোসেন বকুল: এক জনের নাম হাবিবুর এবং অপর জনের নাম রহিম। দু যুবকই ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। সংসারের অভাব ঘুচাতে বিদেশ যাবে বলে স্বপ্ন দেখে ওই দু যুবক । লাখ লাখ টাকা আয় করবো। ঘুরে যাবে ভাগ্যের চাকা। বিদেশ থেকে ফিরে নিজ গ্রামেই গড়ে তুলবো আলিশান বাড়ি। এ রকম কতো স্বপ্ন তাদের বুকে। জমিজমা বিক্রি করে বিদেশ পাড়ি জমালেও ঘুরার আগেই ভেঙে গেছে ভ্যাগের চাকা। একবেলা খেয়ে না খেয়ে শেষমেষ জীবন নিয়ে সম্প্রতি কোনো মতে দেশে ফিরেছেন দামুড়হুদা উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের ওই দু হতভাগা যুবক হাবিবুর ও রহিম। দেশে ফিরে টাকা ফেরতের জন্য আদম ব্যাপারী জুড়ানপুরের ছাত্তার মল্লিকের নামে আদালতে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের মৃত মসলেম উদ্দীনের ছেলে হাবিবুর রহমান (৩০) এবং একই গ্রামের মহিউদ্দীনের ছেলে আব্দুর রহিম (৩৪) বছর খানেক আগে আদম ব্যাপারী জুড়ানপুরের মৃত বরকত মল্লিকের ছেলে ছাত্তার মল্লিকের মাধ্যমে বিদেশ যাওয়ার বিষয়ে কথা হয়। আদম ব্যাপারী ছাত্তার মল্লিক তাদের নিউজিল্যান্ডে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে উভয়ের কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা করে মোট ৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। ৩ মাসের মধ্যে বিদেশে পাঠানোর কথা থাকলেও ৮ মাস পর গত মার্চ মাসে হাবিবুরকে ল্যাবে নাইট গার্ডের চাকরির কথা বলে আরও ৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় এবং নিউজিল্যান্ডের পরিবর্তে সাইপ্রায়ে পাঠায়। হাবিবুর আদম ব্যাপারীকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে আদম ব্যাপারী তাকে বলে ওখানে তোমার ভাগ্যের চাকা ঘুরে যাবে। শুধু ঘুরবেই না দৌড়াবে। আদম ব্যাপারীর কথামত সাইপ্রাসে যায় হাবিবুর। ওখানে পৌছে টমাস নামের এক দালাল তার কাজ দেয় ছাগলের খামারে। দিনের বেলা গভীর জঙ্গলের মধ্যে  ছাগল চরানোর পর রাতে করতে হতো খামার পরিষ্কারের কাজ। ২টা পাউরুটি, ২টা টমেটো আর ২টা খিরা খেয়ে ১০ ঘন্টার পরিবর্তে ১৭ ঘন্টা কাজ করতে হয়েছে। মাস শেষে বেতন চাইলে ওই দালাল বলে ছাত্তার তোমাকে আমার কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। এখানে তোমার নির্দিষ্ট কোনো বেতন নেই। আমি যা দেব সেটাই তোমাকে নিতে হবে। কোন ছুটি ছিল না। এভাবে অমানুষিক কষ্ট সহ্য করে  ৩ মাস ১০ দিন কাজ করার পর গত ঈদের আগের দিন দেশে ফিরে আসি। বাড়িতে চাষবাস করে খাচ্ছিলাম। কোনমতে চলেতো যাচ্ছিলো। বিদেশ যেতে গিয়ে ৩ বিঘা জমি বিক্রি করলাম। এখন চলবো কি ভাবে? ১০ লাখ টাকা নষ্টের পর এরকম কতকথা হাবিবুরের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। অপরদিকে আদম ব্যাপারী ছাত্তার রহিমকে জানায় হাবিবুর ওখানে ভাল আছে। তুইও ওই দেশে যা। তোর ড্রাইভারের কাজ দেবো। তুই তোর গাড়ির চাকা যতো ঘুরাবি তোর ভাগ্যের চাকাও ততো ঘুরবে। এ কথার পর ওই আদম ব্যাপারীর হাতে তুলে দেয় আরও ৪ লাখ টাকা। মোট ৮ লাখ টাকা আদম ব্যাপারীর হাতে তুলে দিয়ে রহিম গত ৬ জুন সাইপ্রাসে পৌছে। ওখানে পৌছানোর পর এক দালাল তাকে নিয়ে যায় পাহাড়ের নীচে আগ্নেগীরির কাছে এক গভীর জঙ্গলে। ওখানে দু দিন বন্দি জীবন যাপন করতে হয় তাকে। খাবারের জন্য কাকুতি মিনতি করলে বুট দিয়ে লাথি মারতো। এ ভাবে দু দিন না খেয়ে কোন রকম বেঁচে ছিলাম। দু দিন পর জানালা দিয়ে ৪/৫ জন বাঙালিকে দেখতে পেয়ে আমি তাদের ডাক দেয়। তারা আমার ডাকে সাড়া দিয়ে আমাকে মুক্ত করে। তারাই আমাকে খাবার দেয়। ওরাই আমাকে বাড়ির সাথে কথা বলার সুযোগ করে দেয়। আমি আমার পিতাকে বলি আপনি আমাকে দেশে ফিরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করেন। না হলে আমি এখানে না খেতে পেয়ে মারা যাব। আমার পিতা আমার কষ্টের কথা শুনে কেঁদে ফেলেন। ছুটে যান আদম ব্যাপারী ছাত্তারের কাছে। ছেলেকে দেশে ফিরিয়ে আনার অনুরোধ করেন। এ কথার পর ওই চতুর আদম ব্যাপারী ছাত্তার আমার পিতার কাছ থেকে পুণরায় ৫৭ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় এবং দেশে ফিরে কোন ঝামেলা করতে পারবেনা মর্মে স্ট্যাম্পে সাক্ষর করিয়ে নেয়। রহিমও সম্প্রতি দেশে ফিরে আসে। হাবিবুর ও রহিম দেশে ফিরে দেখা করে আদম ব্যাপারী ছাত্তার মল্লিকের সাথে। টাকা ফেরত চাইলে তাদেরকে হুমকি দেয়া হয় এবং গালাগালি করে তাড়িয়ে দেয়। হাবিবুর ও রহিম বলেছেন আমরা আলিশান বাড়ি করতে না পারলেও ওই আদম ব্যাপারী ছাত্তার মল্লিক আমাদের টাকা দিয়ে জুড়ানপুরে তৈরি করছেন আলিশান বাড়ি। দু একদিনের মধ্যেই আদম ব্যাপারী ছাত্তার মল্লিকের নামে আদালতে মামলা করবো বলেও প্রতরণার শিকার ওই দু যুবক জানিয়েছেন।