স্টাফ রিপোর্টার: জঙ্গিদের আশ্রয়দাতা ঝিনাইদহের দারুস সালাম জামে মসজিদের ইমাম রোকনুজ্জামান রোকনকে নিজের এলাকাবাসী ভালো ছেলে হিসেবেই জানেন। তার জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার খবরে তারা হতবাক হয়েছেন।
রোকন ঝিনাইদহে অবস্থানকালে একটি মেসে ৮ জঙ্গিকে আশ্রয় দিয়েছিলেন। এর মধ্যে গুলশান হামলায় জড়িত অন্যতম জঙ্গি নিবরাস ইসলাম ও আবির রহমানও রয়েছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রোকন যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার শংকরপুর ইউনিয়নের নাইড়া গ্রামের মৃত আইনুদ্দিনের দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তান। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার পাশাপাশি ঝিনাইদহ শহরের সোনালীপাড়ার দারুস সালাম মসজিদে তিনি ইমামতি করতেন। সেই সূত্র ধরেই তিনি ওই এলাকার মেসে জঙ্গিদের আশ্রয় দিয়েছিলেন।
ঝিনাইদহ শহরের সোনালীপাড়ার সাবেক সেনা সার্জেন্ট কাউসার আলীর স্ত্রী বিলকিস সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বাড়ির পাশের দারুস সালাম মসজিদের ইমাম ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রোকনুজ্জামান আনুমানিক চার মাস আগে তার বাড়িতে ভাড়াটিয়া নিয়ে আসেন। ইমাম তখন বলেছিলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা থাকবেন। প্রথমে দুইজন ওঠে। পরে আরো ছয়জন আসেন।
ইমাম রোকনুজ্জামান রোকনের স্বজন ও স্থানীয়রা জানান, পড়াশুনার সুবাদে বেশ কয়েক বছর ধরে রোকন বাড়িতে ছিলেন না। বাড়ি থেকে লেখাপড়ার খরচ নিতেন না। এজন্য এলাকাবাসীর সাথে যোগাযোগ ছিলো কম।
রোকনুজ্জামানের ভাবি রাবেয়া খাতুন বলেন, আমার শ্বশুর বেঁচে নেই। তাই রোকন বাড়ি থেকে লেখাপড়ার খরচ নিতো না। নিজের উপার্জনের টাকায় চলতো। মাঝে মাঝে বাড়িতে বেড়াতে আসত। তার মতে, রোকন ‘ভালো ছেলে’। অনেক কষ্ট করে সে লেখাপড়া শিখেছে।’
প্রতিবেশি ইসরাইল হোসেন, বাবু মিয়াসহ অনেকেই জানান, রোকনুজ্জামান রোকনকে গ্রামে খুব কম দেখা যায়। এলাকায় অপরাধে জড়িত থাকার কোনো অভিযোগ তার বিরুদ্ধে নেই।
ঝিকরগাছার শংকরপুর ইউনিয়নের নাইড়া এলাকার মেম্বার হাসমত আলী জানান, সাবেক সরকারি কর্মচারী মৃত আইনুদ্দিনের দুই স্ত্রী। দ্বিতীয় স্ত্রীর ছোট ছেলে রোকনুজ্জামান। প্রথম স্ত্রীর সন্তানরা আওয়ামী লীগের সমর্থক। দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তানরা বিএনপির সমর্থক। তবে তাদের পরিবারের কেউ দলীয় কোনো পদে নেই। রোকনের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি সাংবাদিকদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। তবে এলাকার মানুষ তাকে ভালো ছেলে হিসেবে চেনে।
জঙ্গিদের আশ্রয়দাতা ইমাম রোকনুজ্জামানের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, আইনুদ্দিনের দুই স্ত্রী। প্রথম স্ত্রীর তিন ছেলে ও এক মেয়ে। আর দ্বিতীয় স্ত্রীর দুই ছেলে এক মেয়ে। দ্বিতীয় স্ত্রীর ছোট ছেলে রোকনুজ্জামান রোকন। আর বড় ছেলে হাদিউজ্জামান বাগেরহাটে একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন। মেয়েটি কয়েক বছর আগে মারা গেছে। রোকনুজ্জামান নাইড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করার পর স্থানীয় উড়াকোল মাদরাসা ও যশোর শহরের দড়াটানা মাদরাসা থেকে হাফেজি পাস করেন। এরপর স্থানীয় বাগআঁচড়া মাদরাসা থেকে দাখিল ও আলিম পাস করেন। এরপর বাড়ি থেকে চলে যান ঝিনাইদহে। সেখান থেকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নেন। ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দাওয়া বিভাগে ভর্তি হন। পাশাপাশি ঝিনাইদহের দারুস সালাম জামে মসজিদে ইমামতি করতেন।