ঘুমন্ত স্ত্রীর গলা কেটে খুন : গ্রামবাসীর হাতে ঘাতক স্বামী পাকড়াও

 

ঘটনাস্থল থেকে ফিরে আলম আশরাফ: চুয়াডাঙ্গায় শোয়ার ঘরে ঢুকে ঘুমন্ত স্ত্রীর গলা কেটে খুন করেছে যৌতুকলোভী স্বামী মিঠু। ঘটনার পরপরই গ্রামের সাধারণ মানুষ ঘাতক স্বামীকে ধরে পুলিশে দিয়েছে। গতপরশু বৃহস্পতিবার রাতে সদর উপজেলার মহাম্মদজমা গ্রামে এ খুনের ঘটনা ঘটে। নিহত তহমিনার লাশ উদ্ধার করেছে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। যৌতুক না পেয়ে ক্ষুব্ধ স্বামী মিঠু রাতের অন্ধকারে শ্বশুরবাড়িতে এসে এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে পুলিশ জানায়।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের মহাম্মদজমা গ্রামের দিনমজুর সোবাদ আলীর মেয়ে তহমিনা খাতুন ওরফে তহুরার (২৬) সাথে ছয় মাস আগে পার্শ্ববর্তী আলমডাঙ্গা উপজেলার তিয়রবিলা কুঠিপাড়ার মৃত রমজান গাজীর ছেলে আকাশ ওরফে মিঠুর দ্বিতীয় বিয়ে হয়। বিয়ের সময় মিঠুকে ৭০ হাজার টাকা যৌতুক দেন দরিদ্র সোবাদ আলী। কিন্তু প্রথম স্বামীপক্ষ থেকে তালাকের সময় দেনমোহর ও খোরপোষ বাবদ টাকা পান তহমিনা খাতুন। সেই টাকাও দাবি করে আসছিলো স্বামী মিঠু (৩৫)। তহমিনার প্রতিবেশীরা জানান, বিয়ের পর থেকেই মিঠু যৌতুকের দাবিতে তাকে নির্যাতন করে আসছিলো। টাকা না পেয়ে বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে আসছিলো সে। মিঠু ছিলো সন্ত্রাসী। সে দলপার্টি করে বেড়াতো। এ কারণে তহমিনা তার ভাত খাবে না বলে জানিয়েছিলো। এ কারণে কয়েকদিন মিঠু সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে এসে হুমকিও দিয়ে যায়।

তহুরার বাবা সোবাদ আলী জানান, যৌতুকের দাবিতে বেশ কয়েক দিন ধরে জামাই মিঠু মেয়ে তহমিনার ওপর নির্যাতন চালিয়ে আসছিলো। এ কারণে গত বুধবার তহমিনা স্বামীর বাড়ি তিয়রবিলা থেকে মহাম্মদজমা গ্রামে চলে আসে। ওই দিনই জামাই চারজন গ্রামবাসীকে নিয়ে আমার বাড়ি মহাম্মদজমা গ্রামে আসে এবং মেয়েকে নিয়ে যেতে চায়। কিন্ত মেয়ে স্বামীর সাথে যেতে চায়নি। বিষয়টির সমাধানে আগামী বুধবার সালিসের দিন ধার্য করা হয়। এর আগেই বৃহস্পতিবার মিঠু শ্বশুরবাড়িতে আসেন এবং রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঘুমন্ত স্ত্রীর গলা কেটে খুন করে পালিয়ে যায়। তহমিনার ভাই পিন্টু হোসেন জানান, রাতেই বিয়ের ঘটক তিয়রবিলা গ্রামের আনিস রহমানকে ঘটনাটি জানালে গ্রামবাসী মিঠুকে ধরে স্থানীয় তিয়রবিলা পুলিশ ক্যাম্পে সোপর্দ করেন। পরে সদর থানায় পাঠানো হয়।

নিহত তহমিনার মা জাহানারা বেগম জানান, এর আগে তাহমিনার বিয়ে হয়েছিলো চুয়াডাঙ্গা সদরের আসানন্দপুরে। সেই পক্ষের ১০ বছরের একটি ছেলে রয়েছে। সেখান থেকে ছাড়াছাড়ি হওয়ার তিন মাস পরে মিঠুর সাথে বিয়ে হয়। ছাড়াছাড়ির সময় দেনমহর-খোরপোষ বাবদ ৬০ হাজার টাকা ও ছেলের ভরণপোষণ বাবদ ৫৫ হাজার টাকা পায় তাহমিনা। সেই টাকা দিতে না চাইলে প্রায়ই তাহমিনার ওপর অত্যাচার করতো তার স্বামী। এক পর্যায়ে অত্যাচার সইতে না পেরে দু মাস আগে তাহমিনা পিতার বাড়ি মহাম্মদজমায় চলে আসে। সেই থেকে তাহমিনা পিতার বাড়িতে ছিলো। গত বৃহস্পতিবার রাতে তহমিনার পিতার বাড়ি মহাম্মদজমা গ্রামের এসে আকাশ ওরফে মিঠু ঘুমন্ত অবস্থায় তাহমিনাকে খুন করে পালিয়ে যায়। এটা ছিলো তহমিনার দ্বিতীয় বিয়ে। প্রথম স্বামীর ঘরে ইমতিয়াজ হোসেন ওরফে এমপি নামের ১০ বছরের একটি ছেলে রয়েছে তার। আর নিঃসন্তান মিঠুর এটি চতুর্থ বিয়ে।

চুয়াডাঙ্গা সদর থানা অফিসার ইনচার্জ তোজাম্মেল হক জানান,  শুক্রবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে জানতে পারি যৌতুকের দাবিতে স্বামী মিঠু স্ত্রী তহমিনাকে গলা কেটে খুন করেছে। মৃতদেহ উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। অভিযুক্ত স্বামী মিঠুকে পার্শ্ববর্তী তিয়রবিলা গ্রাম থেকে স্থানীয়রা আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে।

এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। তিনি আরও জানান, আকাশ ওরফে মিঠুর বিরুদ্ধে থানায় একটি চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে।