মহাসিন আলী/শেখ সফি: মেহেরপুর জেলার বিভিন্ন এলাকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। নিরাপত্তার অভাববোধ করছে বিধায় তারা সুষ্ঠুভাবে ধর্মীয় কাজসহ কোনো কাজ করতে পারছেন না। আতঙ্ক সব সময় তাদের তাড়া করে ফিরছে। তবে এ মুহুর্তে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের নজরদারি থাকায় ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরেছে বলে জানালেন অনেকে।
মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর উপজেলার বল্লভপুর, ভবেরপাড়া, বাগোয়ান, আনন্দবাস, রতনপুর, মানিকনগর, নাজিরাকোনা এবং গাংনী উপজেলার যুগিন্দা, চিৎলা, নিত্যানন্দপুর ও পাকুড়িয়াসহ বেশ কিছু গ্রামে সংখ্যালঘু খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষের বাসবাস। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কোনো লোকের বসবাস না থাকলেও জেলার প্রায় প্রত্যেক গ্রামে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বাস করছেন সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রসাদের মানুষ। মুজিবনগর উপজেলার ওইসব গ্রামে কমপক্ষে ২০টি চার্চ অব বাংলাদেশ, রোমান ক্যাথলিক, এজি চার্চ, প্রেস বিট্যারিয়াম চার্জের গীর্জা আছে। মেহেরপুর শহরে একটি গীর্জা থাকলেও গাংনী উপজেলার ওইসব গ্রামে রয়েছে আরো এক ডজনের মতো গীর্জা। এছাড়া জেলার বিভিন্ন গ্রাম জুড়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রায় একশত মন্দির রয়েছে। বিদেশিসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন গীর্জা ও মন্দিরের পুরোহিত হত্যার ঘটনায় মেহেরপুর জেলায় বসবাসরত সংখ্যালঘু হিন্দু ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের গীর্জা ও মন্দিরের পুরোহিতদের মধ্যে বিরাজ করছে আতঙ্ক।
মুজিবনগর উপজেলার বল্লভপুর চার্চের পুরোহিত রেভা. বিলিয়ম সর্দ্দার জানান, ঢাকার গুলশানে বিদেশি নাগরিক হত্যা, কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদের জামায়াতে নারকীয় ঘটনা ও সরাদেশের বিভিন্ন জেলায় গীর্জা ও মন্দিরের পুরোহিত হত্যার ঘটনায় আমাদের মতো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় নেতা ফাদার, পালক, অঞ্চল প্রধান ও পুরোহিতদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করা স্বাভাবিক।
মেহেরপুর সদর উপজেলার কুতুবপুর শ্রী শ্রী গুরুধামের সেবায়েত স্বামী অখাণ্ডানন্দ সরস্বতী বলেন- বর্তমান সময়ে দেশের বিভিন্ন মন্দির ও গীর্জার পুরোহিত হত্যাসহ বিদেশি হত্যায় আমরা আতঙ্কিত। এতে সুষ্ঠুভাবে কোনো কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এখানে এসেছেন এবং আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য বলেছেন।
মুজিবনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী কামাল হোসেন জানান, গতকাল বুধবার আমি উপজেলার বিভিন্ন গীর্জা ঘুরে দায়িত্ব প্রাপ্তদের সাথে কথা বলেছি। তারা আতঙ্কিত নন। তবে বাড়তি নিরাপত্তা কিংবা সতর্কতার জন্য ১০ জন সাব ইন্সপেক্টরের নেতৃত্বে পুলিশ তাদের খোঁজ খবর রাখবেন। প্রত্যেক গীর্জা একটি করে পরিদর্শন বইও দেয়া হয়েছে। যেখানে দায়িত্ব প্রাপ্ত অফিসার স্বাক্ষর করবেন।
মেহেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইকবাল বাহার চৌধুরী জানান, আমি সদর উপজেলার কুতুবপুর শ্রী শ্রী গুরুধামসহ সদর উপজেলার বিভিন্ন মন্দিরে গিয়েছি। প্রতি মহুর্তে বিভিন্ন মন্দির, গীর্জা ও মঠের সাথে পুলিশের যোগাযোগ রক্ষা হচ্ছে। তাদের আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। আমরা জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে কাজ করে যাচ্ছি।
মেহেরপুর জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট পল্লব ভট্টাচার্য বলেন, মেহেরপুর জেলা প্রশাসক পরিমল সিংহ, পুলিশ সুপার হামিদুল আলম, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মঈনুল হাসান ও মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার হেমায়েত উদ্দিন ইতোমধ্যে জেলার বিভিন্ন মন্দির ও গীর্জা পরিদর্শন করেছেন এবং তারা পুরোহিতের নিরাপত্তা দেয়ার বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন।