গাংনীর প্রবাসী মিলন হত্যা মামলা সিআইডিতে : স্ত্রীসহ তিন আসামি পাঁচ দিনের রিমান্ডে

 

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর গাংনীতে কুয়েত প্রবাসী মিলন হোসেন (৩৪) হত্যা মামলাটি তদন্তভার এখন সিআইডিতে। হত্যাকাণ্ডের জট খুলতে মাঠে নেমেছেন সিআইডি কর্মকর্তারা। আদালতের নির্দেশে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রধান আসামিসহ তিন আসামি এখন মেহেরপুর সিআইডিতে পাঁচ দিনের রিমান্ডে রয়েছে। হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উদঘাটন করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আদালতে চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে বলে জানিয়েছেন মামলা তদন্ত সংশ্লিষ্ট সিআইডি কর্মকর্তারা।

নিহত মিলন হোসেন সদর উপজেলার শ্যামপুর গ্রামের আব্দুল হামিদ মল্লিকের ছেলে। কুয়েত থেকে ছুটিতে বাড়ি ফিরে স্ত্রী ও এক সন্তান নিয়ে গাংনী শহরের বন বিভাগ পাড়ায় নিজ বাড়িতে বসবাস করছিলেন। গত ২৪ এপ্রিল রাতে বাড়ি থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দুরে গাংনীর ঝিনেরপুর এলাকায় দুর্বৃত্তরা তাকে হত্যা করে লাশ ফেলে রেখে যায়।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের পিতা বাদি হয়ে মিলনের স্ত্রীর পরকীয়া প্রেমিক গাংনী হাসপাতাল বাজারের হার্ডওয়ার ব্যবসায়ী মোজাম্মেল হক ও স্ত্রীসহ কয়েকজনকে আসামি করে গাংনী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় নিহতের স্ত্রী মানছুরা খাতুন ও তার বোন মসনুয়ারা খাতুন এবং ভগ্নিপতি আব্দুর রশিদকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলো গাংনী থানা। কিন্তু আসামিরা কোন স্বীকারোক্তি প্রদান করেনি। হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনও হয়নি। এর কিছুদিন পরে মামলাটি সিআইডিতে ন্যাস্ত হয়। এর পরেই মামলা তদন্তে মাঠে নামে সিআইডি। ঘটনাস্থল, নিহতের পরিবার, স্থানীয় বিভিন্ন মাধ্যমে তদন্তের পর আসামিদের জিজ্ঞাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করেন সিআইডি কর্মকর্তা। বিজ্ঞ আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গতকাল বুধবার জেলা কারাগার থেকে নিহত মিলনের স্ত্রী মানছুরা খাতুন, ভগ্নিপতি আব্দুর রশিদ ও মানছুরার পরকীয়া প্রেমিক গাংনী উপজেলার কাষ্টদহ গ্রামের আবু বক্করের ছেলে গাংনী হাসপাতাল বাজারের হার্ডওয়ার ব্যবসায়ী মোজাম্মেল হককে সিআইডি কার্যালয়ে নেয়া হয়। সেখানে বিভিন্নভাবে চলছে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ।

মেহেরপুর সিআইডি ইন্সপেক্টর হাসান ইমাম জানান, হত্যাকাণ্ডের বিভিন্ন বিষয় ধরে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। রিমান্ড শেষে তাদেরকে আদালতে সোপর্দ করা হবে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করে আদালতে চুড়ান্ত প্রতিবেদন (চার্জশিট) প্রদান করার কথা বলেন তিনি।

এদিকে হত্যাকাণ্ডের পরদিন সকালে লাশ উদ্ধারের পর জনমনে নানা গুঞ্জন শুরু হয়। নিহতের পিতাসহ পরিবারের লোকজন মিলনের স্ত্রীর পরকীয়ার বিষয়টি ফাঁস করে। মোজাম্মেলের সাথে পরিকীয়া প্রেমের সূত্র ধরে পথের কাটা সরাতেই তারা পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ তুলে মামলা দায়ের করেন। ঘটনাস্থলে লাশ দেখতে গিয়ে মিলনের পরিবারের রোষানলে পড়েন তার স্ত্রী, ভগ্নিপতি ও বোন। তাদেরকে মারধর করে পুলিশের সোপর্দ করা হয়। পুলিশ তাদেরকে উদ্ধার করে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করে।

হত্যাকাণ্ডের পর মিলনের স্ত্রী মানছুরা ও ব্যবসায়ী মোজাম্মেল হকের পরকীয়ার বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। স্থানীয় বিভিন সূত্রে জানা যায়, কুয়েতে দীর্ঘ সময়ে থাকার কারণে মোজাম্মেলের সাথে অন্তরঙ্গ হয়ে পড়েন স্ত্রী। মিলনের উর্পাজিত অর্থ দিয়েই মোজাম্মেল ব্যবসার পরিধি বাড়াতে থাকেন। মিলন দেশে ফিরে আসলে টাকার হিসাব ও পরকীয়া সম্পর্ক নিয়ে স্ত্রীর সাথে দাম্পত্য কলহ সৃষ্টি হয়। এসব কারণেই তারা পরিকল্পিতভাবে মিলনকে খুন করতে পারে বলে ধারণ পোষণ করছেন স্থানীয়রা ও নিহতের পরিবার।

মিলনের কিলিং মিশনে কারা অংশ নিয়েছিল? স্ত্রী ও তার পরকীয়া প্রেমিক মোজাম্মেল ও ভাইরা আব্দুর রশিদ কি হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ গ্রহণ করেছিলো? নাকি অর্থের বিনিময়ে ভাড়াটে কিলার দিয়ে হত্যা করা হয়েছে সেসব প্রশ্নের জট খোলেনি। হত্যাকাণ্ডের সন্ধ্যা রাতে ঘটনাস্থলে তিনজনকে দেখা গিয়েছিলো বলে স্থানীয় এক কিশোর জানিয়েছিলো। তাহলে ওই তিনজনের মধ্যে কি বর্তমান আসামিদের কেউ? নাকি অন্য কোনো ব্যক্তি তা নিশ্চিত করতে বলতে পারেনি ওই কিশোর। তবে নিহতের পরিবার ও স্থানীয় লোকজন সিআইডিতে মামলাটি ন্যাস্ত হওয়ায় হত্যাকাণ্ডের জট খোলার বিষয়ে আশাবাদি। সুষ্ট তদন্তের মধ্যদিয়ে সত্য ঘটনা পরিস্কার হওয়ার পাশাপাশি হত্যকারীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা হবে এমনটাই প্রত্যাশা করছেন নিহতের পরিবারসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।