চুয়াডাঙ্গার শতবর্ষী ঐতিহ্যবাহী গড়াইটুপি মেলা এ বছর এখনও শুরু হয়নি

 

প্রস্তুতি সত্ত্বেও ভেস্তে যেতে বসেছে আয়োজন : লোকসানের আশঙ্কায় ব্যবসায়ীরা

স্টাফ রিপোর্টার: ঐতিহ্যবাহী চুয়াডাঙ্গা জেলার গড়াইটুপি মেলা বন্ধের উপক্রম হয়েছে। মেলাটি বন্ধ হলে সরকার হারাতে পারে প্রায় অর্ধকোটি টাকার রাজস্ব। মেলা শুরু হবার আগে প্রতি বছরের ন্যায় মেলায় আসা সার্কাস, যাত্রাপালা, মিষ্টির দোকানসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী পড়েছেন বিপাকে। ম্লান হতে বসেছে এলাকার মানুষের মেলা আনন্দ। ঐতিহ্যবাহী এ মেলাটি এখনও শুরু না হওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।

প্রতিবছর বাংলা সনের ৭ আষাঢ় চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়নের গড়াইটুপিতে সরকারি ১৬ শতক খাস জমির ওপর বসে এই মেলা। গড়াইটুপির এ মেলা কবে কখন শুরু হয়েছে সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্টভাবে কেউ কিছু বলতে না পারলেও দীর্ঘদিন থেকে এলাকার মানুষের বিনোদনের খোরাক হিসেবে আনন্দ দিয়ে আসছে। ৯০’র দশকের পর এ মেলাটি বাণিজ্যিকভাবে রূপ নিলে সরকারের দৃষ্টি পড়ে। সামান্য ১৬ শতক জমি ইজারা দিয়ে প্রতিবছর লাখ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করে থকে সরকার। এ বছর মেলাটি ৪০ লাখ টাকা ইজারা এবং আয়কর ভ্যাট বাবদ আরও ৮ লাখ মোট ৪৮ লাখ টাকা রাজস্ব পেয়েছে। ৭ আষাঢ়ে রমজান মাস হওয়ায় ইজারাদারেরা মেলাটি ঈদের পরে বসানোর জন্য ইচ্ছা পোষণ করেন। সে কারণে ঈদের আগে থেকেই সার্কাস, যাত্রা প্যান্ডেলসহ দোকানিরা দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এখানে তাদের দোকান বসিয়েছেন। প্রচার ছিলো ঈদের তিন দিন পর উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে মেলাটি যাত্রা শুরু করবে। মেলা নিয়ে ইজারাদার এবং পুলিশ প্রশাসনের মধ্যে টানপোড়েন চলে আসছে। গড়াইটুপি মেলাতে দি সোনালী সার্কাস নিয়ে আসা নওগাঁ জেলার জাহিদুল ইসলাম বললেন, ১৫ জুন থেকে ২০ জুন পর্যন্ত নিজ জেলা থেকে সার্কাসের প্যান্ডেলটি গড়াইটুপিতে আনতে প্রায় ২ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। তখন থেকে প্রতিদিন ৬০ জন মানুষের আহার যোগান দিতে হচ্ছে। এর মধ্যে ৩০ জন রয়েছে বেতনভুক্ত। তাদেরকে মাস শেষে ২ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে আমার। আর যদি মেলা না হয় তাহলে ১০-১২ লাখ টাকা গুনতে হবে আমাকে। মেলায় মনোহারী দোকানি মোড়েগঞ্জের রনি জানালেন, খুলনা থেকে ঈদের আগের দিন ৫ জন লোক নিয়ে এখানে এসেছি। এখন পর্যন্ত মেলা শুরু হয়নি। খুব দুশ্চিন্তায় আছি। শেষমেশ যদি মেলা শুরু না হয় তাহলে আমাকে গুনতে হবে মোটা অঙ্কের লোকসান।

মেলার ইজারদার শুকুর আলী জানান, সরকারকে প্রায় অর্ধকোটি টাকা রাজস্ব দিয়েছি। মেলাটি যদি সংশ্লিষ্টরা করাতে ব্যর্থ হয় তা হলে আমার ইজারার টাকা ফেরত চাইবো। ইতোমধ্যে সে প্রক্রিয়াও শুরু করে দিয়েছি। এ মেলাটি দীর্ঘদিন থেকে এলাকার মানুষের আনন্দের খোরাক হিসেবে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। আর্থিক ব্যাপারাটা যে নেই তা নয়। এখানে সরকারও বেশ লাভবান হচ্ছে। তবে এবারের মেলার আয়োজন ছিলো ভিন্ন রকম। যে সমস্ত বিষয় নিয়ে প্রশ্ন উঠবে যেমন পুতুল নাচ, ভ্যারাইটি শো, জাদু, যাত্রার নামে অশ্লীলতা, জুয়া ইত্যাদি বিষয়গুলো প্রথম থেকেই বাদ দেয়া হয়েছে। সুস্থ বিনোদনের আয়াজন ছিলো এবারের মেলায়। রমজানের পবিত্রতা রক্ষার্থে মেলার শুরুটা একটু পিছিয়ে ছিলাম। এ নিয়ে যখন প্রশ্ন উঠেছে তাই আজ-কালের মধ্যে আমার ইজারার টাকা ফেরত পাবার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করবো।

তবে একটি সূত্র বলেছে, বিভিন্ন কারণে মেলা নিয়ে জেলা প্রশাসন এবং পুলিশ প্রশাসেন মধ্যে সমন্বয় না হওয়ায় এবার হয়তো মেলা নাও হতে পারে। ফলে দীর্ঘ দিনের ঐতিহ্যবাহী এ মেলাটি বন্ধের উপক্রম হয়েছে। এদিকে শত বছরের ঐতিহ্যে লালিত মেলাটি শুরুর জোর দাবি জানিয়েছে এলাকার মেলাপ্রেমী মানুষ।

উল্লেখ্য, খাজা মালিক-উল-গাউস (র.) মাজারকে কেন্দ্র করে আগে এখানে মানুষ তাদের মনের বাসনা পূরণ করতে মানত করতো এবং একত্রিত হতো। আস্তে আস্তে স্থানটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ফলে আজ বাণিজ্যিক আকার ধারণ করেছে। যার কারণে প্রতি বছর সরকার এখান থেকে মোটা অঙ্কের রাজস্ব আদায় করে থাকে।

একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রতি বছরই গড়াইটুপির মেলায় অনুমোদনের বাইরের কিছু বিতর্কিত আয়োজন করা হয়। অনুমোদন পত্রে মেলা চলার সময়-সীমা নির্ধারিত থাকলেও তা আমলে নেন না আয়োজকরা। তারা বাড়তি টাকা আয়ের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। এবার পুলিশ প্রশাসন এ ব্যাপারে কোনো ছাড় দিচ্ছে না বলেই নাকি মেলা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হচ্ছে না। জেলা পুলিশ মেলায় অবৈধ কিছু করতে দিতে রাজি নয়। একটি সূত্র জানায়, পুলিশ চায় অনুমোদনহীন কিছু করতে দেয়া হবে এখানে। কোনো অবৈধ আবদারও শুনবে তারা।