পকেটের টাকা ছিনিয়ে নিতেই প্রতিবেশীর গলায় ধারালো অস্ত্রের পোঁচ

 

স্টাফ রিপোর্টার: আলমডাঙ্গার শালিকা গ্রামের খাইরুল আলমের গলা কেটে দিয়েছে প্রতিবেশী মাদকাসক্ত রুম্মন। পকেটের টাকা ছিনিয়ে নিতেই খাইরুলের গলায় ধারালো অস্ত্রের পোঁচ দেয় সে। মাথা টিপে দেয়ার ছলে পাশে বসিয়ে খাইরুলের গলায় ছুরি মেরে পকেটে থাকা ৬০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায় রুম্মন। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বাড়ির পার্শ্ববর্তী উত্তরপাড়ায় খালের ধারে এ ঘটনা ঘটে। আহত খাইরুলকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।

খাইরুল আলমের স্ত্রী ফুলজান বেগম জানান, সন্ধ্যায় পিতার বাড়ি মেহেরপুর গাংনীর ধানখোলা গ্রামে নিজের ভাগের জমি বিক্রির ৬০ হাজার টাকা নিয়ে বাড়ি আসেন তিনি। এ সময় ৬০ হাজার টাকা একটি তাড়া দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন স্বামী পানব্যবসায়ী খাইরুল ইসলাম। কিছুক্ষণ পকেটে রাখার ইচ্ছাও করেন তিনি। তাতে বাধা না দিয়ে ওই টাকা স্বামীর হাতে দিয়ে দেন তার স্ত্রী ফুলজান বেগম। সন্ধ্যার পর ওষুধ কেনার জন্য পার্শ্ববর্তী বাজারে যান খাইরুল (৪৫)। এ সময় দেখা হয় প্রতিবেশী রুম্মনের সাথে। একই গ্রামের হাফিজুর রহমানের ছেলে রুম্মন (২২) বেশ কিছুদিন ধরেই খাইরুলের পানবরজে কাজ করে আসছিলো। অনেক সময় খাওয়া-দাওয়াও করে তার বাড়িতে। যার ফলে পকেটে থাকা ৬০ হাজার টাকার কথা রুম্মনের সাথে বলেন খাইরুল। অনেক টাকা পাওয়ার কারণে কিছু টাকা চেয়ে বসে রুম্মন। তার মাথা টিপে দিলে হাত খরচের জন্য কিছু টাকা দেবেন বলে জানান খাইরুল। তাতে রাজি হয় রুম্মন। বাজার থেকে ফেরার পথে বাড়ির পার্শ্ববর্তী খালপাড়ের রাস্তার পাশে বসে তারা। মাথা টিপে দেয়ার একপর্যায়ে খাইরুলের চুল টেনে ধরে তার গলায় ধারালো অস্ত্রের পোঁচ দেয় রুম্মন। প্রথম পোঁচেই তার গলা কেটে যায়। দ্বিতীয় পোঁচ ঠেকাতে গেলে খাইরুলের হাত ও মুখে লাগে। শুরু হয় রক্তক্ষরণ। পকেটে থাকা ৬০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায় মাদকাসক্ত রুম্মন। এ সময় নিজের জীবন বাঁচাতে হাত দিয়ে তার কাটা গলা ধরে কোনোরকমে পার্শ্ববর্তী বাজারে যান খাইরুল। তার চিৎকারে বাজারে থাকা লোকজন তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে। খবর পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে এসব জানতে পারেন স্ত্রী ফুলজান বেগম। তবে রুম্মনের সাথে কোনো শত্রুতা নেই, মাদকে আসক্ত হওয়ায় টাকার জন্যই রুম্মন এই কাজ করেছে বলেও জানান তিনি।

প্রতিবেশী কালামের ছেলে রনি জানায়, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে খাইরুল আলম চিৎকার দিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় বাজারের দিকে আসছিলেন। এ সময় বাজারের লোকজন ছুটে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। পরিবারে খবর দেয়। স্থানীয়রা রক্তাক্ত অবস্থায় খাইরুল আলমকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।

স্থানীয় অনেকেই জানিয়েছেন, রুম্মনের পিতা হাফিজুর রহমান দ্বিতীয় বিয়ের পর থেকে চুয়াডাঙ্গায় অবস্থান করেন। এ কারণে সে মাদকাসক্ত হলেও পরিবারের বাধা-নিষেধ না থাকায় তার মাত্রা বৃদ্ধি পায়। রুম্মন নেশার তাড়নায় খাইরুলকে জখম করে থাকতে পারে বলেও জানান তারা।

গতকাল সোমবার রাত ৮টার দিকে আলমডাঙ্গার শালিকা গ্রামের উত্তরপাড়ার মৃত খোরশেদ আলমের ছেলে খাইরুল ইসলামকে (৪৫) গুরুতর জখম অবস্থায় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। তার গলা, মুখ ও হাতে প্রায় ২০টি সেলাই দেয়া হয়। খবর পেয়ে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) ছুফি উল্লাহ, গোয়েন্দা পুলিশের ওসি এএইচএম কামরুজ্জামান খাঁন হাসপাতালে গিয়ে ঘটনার বর্ণনা শোনেন।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক নাজমুল হোসাইন বলেন, গলায় পোঁচ লাগার কারণে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। এছাড়া মুখ ও হাতে ক্ষত রয়েছে। ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার গলায় পোঁচ দেয়া হয়েছে। খাইরুল আলমকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালেই ভর্তি রাখা হয়েছে। কনসালটেন্ট চিকিৎসক তাকে দেখে পরবর্তী চিকিৎসা দেবেন।

Leave a comment