হল্টস্টেশনের দালালচক্রের হাতে জিআরপি পুলিশ লাঞ্ছিত : মামলা : গ্রেফতার ১

 

দর্শনা অফিস: দর্শনা হল্টস্টেশন এলাকা দিনদিন ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করছে। কোনভাবেই রোধ করা যাচ্ছেনা দালালচক্রের দৌরাতœ। কতিপয় দালালের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে পড়েছে স্টেশন এলাকার মানুষ। বেপরোয়া এ চক্রের সদস্যরা একের পর এক অঘটন ঘটালেও তাদের বিরুদ্ধে কঠোর কোনো আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। মাত্র ১ মাসের ব্যবধানে দালালচক্রের হামলার স্বীকার হতে হয়েছে পৌর কাউন্সিলর খালেক, সাংবাদিক চঞ্চল মেহমুদ ও পুলিশ কনস্টেবল জিয়াকে। মাইক্রোবাসযোগে ফিলমি স্টাইলে হামলাকারীরা পুলিশ সদস্যকে কর্মরত অবস্থায় মারধর করে নির্বিঘেœ ঘটনাস্থল ত্যাগ করেছে। ১১ হামলাকারীর বিরুদ্ধে পুড়াদাহ জিআরপি থানায় দায়ের করা হয়েছে মামলা। হামলাকারীদের মধ্যে পুলিশ গ্রেফতার করেছে সুজনকে। দর্শনা জিআরপি ফাড়ির সদস্য (কনস্টেবল নং ২৫৯) জিয়াউল হুদার অভিযোগে জানা গেছে, পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন বেলা ৫টার দিকে পুলিশি পোষাকে জিআরপি ফাঁড়ির সেন্ট্রি ডিউটি করছিলেন। এ সময় দর্শনা হল্টস্টেশন দালালচক্রের সদস্য ফারুক, জাহাঙ্গীরসহ ৩ জন মোটরসাইকেলযোগে স্টেশনের ওপর দিয়েই সজোরে চালিয়ে যাচ্ছিলো। স্টেশনের ওপরে মোটরসাইকেল চালনোয় বাধা দেন জিয়াউল হুদা। এতে ক্ষিপ্ত হয় ফারুক, জাহাঙ্গীর ও তাদের সঙ্গীরা। ঘটনার ১৫ মিনিটের মাথায় ১২/১৩ জন শাদা মাইক্রোবাসযোগে স্টেশনে ফিল্মি স্টাইলে জিআরপি ফাঁড়িতে হামলা চালায় দালালচক্রের সদস্যরা। হামলাকারীরা জিয়াউল হুদাকে মারধর করে নির্বিঘেœ পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে দামুড়হুদা থানার ওসি (তদন্ত) আব্দুল খালেক সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান। সন্ধ্যার পর থেকে দামুড়হুদা থানা, দর্শনা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র ও জিআরপি ফাঁড়ি পুলিশ যৌথ অভিযান শুরু করে স্টেশন এলাকায়। এ অভিযান পুলিশ হামলা ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করেছে ফারুকের ভগ্নিপতি সুজনকে। কুষ্টিয়া মিরপুর এলাকার সিমারুল ইসলামের ছেলে সুজনকে জিআরপি পুড়াদাহ থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। ওই রাতেই কনস্টোবল জিয়াউল হুদা বাদি হয়ে ১১ জনের বিরুদ্ধে পুড়াদাহ থানায় দায়ের করেছেন মামলা। এদিকে অভিযোগ উঠেছে, সারাদেশে ফেনসিডিল, লাগেজ মালামাল পাচারের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে দর্শনা হল্টস্টেশন। যে কারণে হল্টস্টেশন এলাকায় দালালচক্রের আধিপাত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে চলছে দুপক্ষের দ্বন্দ্ব। মাস তিনেক আগে মাসুম বাহিনীকে হটিয়ে স্টেশন এলাকায় আধিপাত্য বিস্তার করেছে মিনারুল, রানা ও ফারুক বাহিনী। প্রায় প্রতিটি ট্রেনে লাগেজের মালামাল ও ফেনসিডিল পাচারের টোল আদায় করে থাকে ওই বাহিনীর সদস্যরা। ফলে দর্শনা হল্টস্টেশন জিআরপি ফাঁড়ির ইনচার্জ এএসআই ফজলুল করিমের সাথে ওই বাহিনীর মাসিক অলিখিত চুক্তি রয়েছে ৩৫ হাজার টাকা। সম্প্রতি এ চুক্তির টাকার অঙ্ক বাড়ানোর দাবি তোলেন ফজলুল করিম। এতে সৃস্টি হয় পুলিশ ও দালালচক্রের দ্বন্দ্ব। এ দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করেই হামলার ঘটনা কি-না তা খতিয়ে দেখা উচিত বলে অনেকেই দাবি তুলেছে। পুলিশের ওপর হামলা ঘটনার পর স্টেশন এলাকায় ভিড় জমানো উৎসুক জনতার মধ্যে রশিক বেশ কয়েকজন বলেই বসলেন, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক ও পুলিশের ওপর হামলার পালা শেষ, ওই চক্রের হামলার লক্ষ্য এবার কে?

উল্লেখ্য, গত মাসের ৬ তারিখ রাতে দালালচক্রের হামলায় মারাত্মœকভাবে আহত হন দর্শনা পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসান খালেকুজ্জামান। এ হামলার প্রতিবেদন পত্রিকায় প্রকাশ হওয়ায় পরদিনই সকালে হামলাকারীরা সাংবাদিক চঞ্চল মেহমুদের ওপর হামলা চালায়। মাসের ব্যবধানে ঈদের দিন হামলার স্বীকার হলেন পুলিশ কনস্টোল জিয়াউল হুদা। এখনই দালালচক্রের দৌরাত্মের লাগাম টেনে না ধরলে ঘটতে পারে বড় ধরণের দুর্ঘটনা।

Leave a comment