স্বামীর নির্যাতন : যৌতুকের বলি হলেন সাবানা খাতুন

 

কার্পাসডাঙ্গা প্রতিনিধি: দামুড়হুদা কার্পাসডাঙ্গার সদাবরী গ্রামের গৃহবধূ সাবানা খাতুনের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল রোববার দুপুরে পিতার বাড়ি একই ইউনিয়নের পীরপুরকুল্লা থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের ফলে সপ্তাখানেক ধরে সে পিতার বাড়ি পীরপুরকুল্লা গ্রামে অবস্থান করছিলো। গত ৫ দিন ধরে স্বামী সোহেলও সাবানার সাথে সেখানেই ছিলো। গতকাল রোববার দুপুরে সোহেল তার শ্বশুরবাড়ি থেকে চলে যাওয়ার পরপরই সাবানার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের পীরপুরকুল্লা ঈদগাপাড়ার সামসুলের মেয়ে সাবানা খাতুনের (২০) বিয়ে হয় একই ইউনিয়নের সদাবরী গ্রামের মিজানের ছেলে সোহেলের (২৩) সাথে। গত ৮ মাস আগে বিয়ের সময় যৌতুক হিসাবে ৬০ হাজার টাকা, আসবাবপত্র ও সাংসারিক জিনিসপত্র দেয় সাবানার পরিবার। তা সত্বেও কিছুদিন পর থেকে যৌতুকের দাবিতে সাবানার ওপর নির্যাতন শুরু করে স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে সপ্তাহখানেক আগে শ্বশুরবাড়ি থেকে পিতার বাড়ি পীরপুরকুল্লা গ্রামে চলে আসে সাবানা খাতুন।

এদিকে সাবানা যাওয়ার ২ দিন পর শ্বশুরবাড়ি পীরপুরকুল্লা গ্রামে যায় জামাই সোহেল রানা। তারপর থেকে ৫ দিন সেখানেই ছিলো সে। গতকাল রোববার দুপুরে সোহেল রানা বাইসাইকেলযোগে শ্বশুরবাড়ী থেকে চলে যায়। এ সময় সাবানার মা সোহেলের চলে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে কোনো উত্তর না দিয়ে দ্রুত সটকে পরে। কিছুক্ষন পর ঘরের দরজা বন্ধ দেখে সাবানাকে ডাকাডাকি করে তার মা। ডেকেও কোনো সাড়া-শব্দ না পেয়ে জানালা দিয়ে মেয়েকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান তিনি। পরে সাবানার মায়ের চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে আসে। দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে সাবানার গলাই ওড়না পেঁচানো অবস্থায় ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে তারা। তবে সাবানার দুই গালে আঘাতের চিহ্ন আছে বলেও মন্তব্য করেছে স্থানীয়রা। আঘাতের চিহ্ন থাকায় এটি হত্যা না আত্মহত্যা তা নিয়েও শুরু হয় গুঞ্জন। স্বামী সোহেল তাকে মারধর করার কারণে সাবানা আত্মহত্যা করতে পারে বলেও ধারণা করছে এলাকাবাসী। সোহেল চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই এ ঘটনা ঘটার কারণে স্বামী সোহলকেও সন্দেহ করছেন স্থানীয়দের অনেকে। তবে ঘটনার পর থেকেই স্বামী সোহেল পলাতক রয়েছে বলে জানা গেছে। খবর পেয়ে দামুড়হুদা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত), কার্পাসডাঙ্গা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরে ঘটনাস্থল পীরপুরকুল্লা থেকে সাবানার লাশ উদ্ধার করে দামুড়হুদা মডেল থানায় নেয়া হয়। আজ সোমবার ময়নাতদন্তের জন্য তার লাশ চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে পাঠানো হবে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে দামুড়হুদা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিহাদ ফখরুল আলম খান বলেন, সাবানার শরীরের বাইরে নির্যাতনের কোনো লক্ষণ নেই। তবে ভেতরে কোন আঘাত থাকলে তা ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলেই মৃত্যর কারণ জানা যাবে। এ বিষয়ে দামুড়হুদা থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হবে বলেও জানান তিনি।

Leave a comment