স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলার মর্তুজাপুরে কবিরাজির নামে প্রতারণা করে আসছেন এলাকারই বিধবা নারী হাসিনা পারভীন। মর্তুজাপুরের পাঁচপীরতলায় পবিত্র পাঁচপীরের নাম ভাঙিয়ে কবিরাজি চিকিৎসা করছেন তিনি। চিকিৎসার নামে মানুষকে বোকা বানিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অঙ্কের টাকা। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ঝাঁড়ফুঁক ও জিন তাড়ানোর জন্য আসনে বসিয়ে চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা দিচ্ছেন ভণ্ড কবিরাজ হাসিনা পারভীন। এছাড়া পাঁচপীরের নামে খাসজমি রয়েছে বলে প্রচার করেন তিনি। ওই খাসজমি দখল করার জন্য হাসিনা কবিরাজের কাছে ধরনা দিচ্ছেন অনেকেই। পাঁচপীরের নামে আস্তানা গেড়ে মাদকব্যবসারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। স্থানীয় কতিপয় ক্ষমতাসীন নেতাদের সহযোগিতায় কবিরাজি ব্যবসা করার জন্য প্রতারণার টাকার কিছু অংশ দিতে হয় ওই নেতাদের পকেটে।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের মর্তুজাপুর গ্রামের মৃত আইনাল সর্দারের বিধবা মেয়ে হাসিনা পারভীন পুলিশ ফাঁড়ির রান্না-বাড়ার কাজ করতেন। হঠাত একদিন রান্নার কাজ শেষে বাড়ি ফেরার সময় শাদা পোশাকের এক দরবেশ হাসিনার সামনে হাজির হয়। এ সময় হাসিনাকে মানুষের পাশে থেকে মানুষের সেবা করার কাজ করতে বলেন ওই দরবেশ। তিনি আরও বলেন, তুই খুব কষ্টে আছিস, আমার নাম-জপ করে কোনো অসুস্থ মানুষের শরীরে পানি ছিটিয়ে দিবি তাহলে সে সুস্থ হয়ে যাবে। এছাড়া এখানে সরকারি খাসসম্পত্তি আছে। ওই সম্পত্তি দখল করে এলাকার গরিব-দুখি মানুষের ঘর-বাড়ি করার কথাও বলেন। এই গল্প দ্রুত ছড়িয়ে দেয়া হয় গ্রামের মধ্যে। গ্রামের সাধারণ মানুষ অন্ধ বিশ্বাস করে তাদের কথা। মর্তুজাপুর গ্রামে অবস্থিত পাঁচপীরতলায় আস্তানা গেড়ে বসেন হাসিনা পারভীন। একপর্যায়ে দূর-দূরান্তের লোকজনও এই গল্পে মজে চিকিৎসা নিতে হাসিনা কবিরাজের কাছে আসেন। শুরু হয় হাসিনা কবিরাজের চিকিৎসার নামে প্রতারণা। পাঁচপীরের নামে খাসসম্পত্তি দখল করার পাশাপাশি কবিরাজ হাসিনার আস্তানায় রাত-দিন মাদকদ্রব্য সেবন ও বিক্রির স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
হাসিনা পারভীনের কবিরাজির আস্থানায় খাদেম হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় এলাকার চিহ্নিত গাঁজাব্যবসায়ী রেজাউল হককে। তাবিজ বিক্রেতা রিপন, আবেদা বেগম ও জলসা আসনের দায়িত্ব দেয়া হয় মহর আলীকে। তারা তাদের মাদকব্যবসার পাশাপাশি ভণ্ড কবিরাজির চামচাগিরি শুরু করে। কবিরাজি ও অপচিকিৎসা ব্যবসা জমজমাট করতে গ্রামের ক্ষমতাসীন নেতা ও স্থানীয় পুলিশের সহযোগিতা নেন হাসিনা পারভীন। প্রতি মঙ্গলবার সকালে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে যাওয়া মানুষের চিকিৎসার নামে হাতিয়ে নিচ্ছেন মোট অঙ্কের টাকা।
সিঁন্দুরিয়া গ্রামের মসজিদের এক ইমাম জানান, হাসিনা পারভীন ঝাঁড়ফুঁক বাবদ প্রতি রোগীর কাছে ১০৫ থেকে ১২২ টাকা করে নিয়ে থাকেন। এক বোতল খাঁটি ঘানি সরিষার তেল ও লোহার মাদলি, ডাবের পানি পড়া এবং গাছের শিকড় দিয়ে কবিরাজি ব্যবসা করে আসছেন ভণ্ড কবিরাজ হাসিনা পারভীন।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, পাঁচপীরের নামে রোগীরা ছাগল ও মুরগি জবাই করে বিতরণ করতে গেলে হাসিনার লোকেরা জোরজুলুম করে ছাগলের মাংস ও ভুড়ি কেড়ে নিয়ে যায়। তাদের বিরুদ্ধে কথা বললেই স্থানীয় নেতা ও পুলিশ দিয়ে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দেয়া হয় বলেও অভিযোগ করেন অনেকে। এজন্য গ্রামের সাধারণ মানুষ তাদের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলে না। প্রতিদিন নিজ বাড়িতে কবিরাজির পাশাপাশি ভণ্ড কবিরাজ মর্তুজাপুর গ্রামে অবস্থিত পাঁচপীরতলায় পবিত্র পাঁচপীরের নাম ভাঙিয়ে দিনের পর দিন প্রতারণা করে আসছেন।
চিকিৎসা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে কবিরাজ হাসিনা পারভীন বলেন, সরিষার তেলপড়া, গাছের শেকড় দিয়ে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন তিনি। বোবা মানুষের কথা বলানো, টিউমার, বাত-ব্যাথা, কিডনি, হাঁপানি, স্বামী-স্ত্রীর মনের মিল, অবাধ্য প্রেমিক-প্রেমিকাকে বশ করা, লটারিতে বিজয়ী করা ও জিন-ভুতের আছড় ছাড়ানোসহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন বলে জানান হাসিনা পারভীন। তার চিকিৎসা নিয়ে ওষুধ সেবন করে অনেক রোগী সুস্থ হয়েছে বলে হাসিনা দাবি করলেও সুস্থ হওয়া কোনো ব্যক্তির নাম এখনও পর্যন্ত শোনা যায়নি। পাঁচপীরের নামে খাসসম্পত্তির বিষয়ে তিনি বলেন, স্বপ্নের মধ্যে দরবেশ তাকে জানায়, এখানে প্রায় ৫ বিঘা খাসসম্পত্তি প্রভাবশালীদের দখলে রয়েছে। যার কোনো দলিলপত্র কিছুই নেই। এসব সম্পত্তি সম্পর্কে এলাকার ভূমিহীদের জানানো হয়। ওই সম্পত্তি দখল নেয়ার জন্য ভূমি অফিস ও হাসিনার কাছে ধরনা দিচ্ছেন ভূমিহীনদের অনেকেই।
পাঁচপীরের খাসসম্পত্তি দখলদাররা জানায়, মর্তুজাপুর গ্রামের এক মাদকসম্রাট খাসসম্পত্তি দখল নেয়ার জন্য হাসিনা কবিরাজের আস্তানায় ধরনা দিয়েছেন।
এ বিষয়ে স্থানীয় সিঁন্দুরিয়া পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. কাজী বায়েজিদ আহমেদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রতিবেদককে জানান, সিঁন্দুরিয়ার পাশে মর্তুজাপর গ্রামের হাসিনা নামের একটি মেয়ে দীর্ঘদিন ধরে কবিরাজ ব্যবসা করছে বলে আমি শুনেছি, যদি পাঁচপীরের নামে গাঁজাব্যবসা ও প্রশাসনের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করে আইনের মাধ্যমে কঠিন ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কুতুবপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলামের মোবাইলফোনে যোগাযোগ করা হলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। এলাকার সচেতন মহলের দাবি এই ভণ্ড মহিলা কবিরাজের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জেলা পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ অতি প্রয়োজন।