আগুনের ফুলকির মতো হিংসা উড়ছে দিগ্বিদিক

 

ওদের একজনও অশিক্ষিত বা অসচ্ছল পরিবারের সন্তান নয়। যতোটুকু পরিচয় মিলেছে তাতে ষ্পষ্ট, তারা শিক্ষিত,অভিজাত পরিবারেরই সন্তান। যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ওদের লেখাপড়া তাও যার তার পক্ষে করা সম্ভব নয়। অথচ ওরা আত্মঘাতী হামলা চালিয়েছে। নির্বিচারে খুন করেছে বিদেশি ১৭ জনসহ ২০ জনকে, যৌথবাহিনীর অভিযানে তাদের ৬ জন প্রাণ হারিয়েছে। ওদের ছবি দেখে তাদের সহপাঠী বা পরিচিতদের কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে যে পরিচয় তুলে ধরেছে তা চমকে ওঠার মতোই। দেশবাসী হতবাক, বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড়।

ঢাকায় ইংরেজি মাধ্যমের নামি স্কুল স্কলাসটিকা কিংবা মালয়েশিয়ার মোনাশ ইউনিভার্সিটিতে তাদের লেখাপড়া। মাদরাসা থেকে পড়ে আসা উগ্রপন্থি তারা নন। বিত্তে, বিচরণে তাদের সবার যোগাযোগ সমাজের উঁচু স্তরে। অভিজাত এলাকা গুলশানের যে ক্যাফেতে রোমহর্ষক হামলা হয়েছে, সেই হলি আর্টিজান বেকারিতে ওই শ্রেণিরই যাতায়াত বেশি। যে পাঁচজনের ছবি আইএস প্রকাশ করেছে, এদের নিকটজনদের মাধ্যমে গণমাধ্যমে যে বিষয়টি উঠে এসেছে তা হলো ওরা ৫/৬ মাস ধরে নিখোঁজ ছিলো। কয়েকজনের অভিভাবক থানায় জিডিও করেছেন। বয়স ২০ থেকে ২৬ বছরের মধ্যে। শিক্ষিত, উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানই শুধু নয়, ওদের লেখাপড়াও দেশে-বিদেশে বিশ্বমানের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠনে। অথচ ওরা জঙ্গি। যদিও ওদের অমসৃণ পথে প্রভাবিত করাদের কাছে তাদের পরিচয় অন্য। তারপরও ঘুরে ফিরে যে প্রশ্নটি শান্তিপ্রিয় মানুষের মনে তা হলো, শান্তির ধর্ম ইসলাম। ইসলাম ধর্ম কি ওই ধরনের কোনো হামলাকে সমর্থন করে? তাহলে কেন, কার স্বার্থ হাসিলে এ হিংস্রতা? তাছাড়া যে বা যারা মেধা শক্তি প্রয়োগের বদলে পেশিশক্তি প্রয়োগের পথে পা বাড়ায়, কোন বিশ্বাসে অন্ধত্ব স্থান, কাল, পাত্রের পার্থক্যটুকুও করতে পারে না তাকে বা তাদের আর যাই হোক প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত বলা চলে না।

বিশ্বজুড়েই অভিন্ন একটি বিপদ ঘুরছে। যে বিপদ থেকে কেউই নিরপদ নন। সকলের ঘাড়ের কাছে ঘুর ঘুর করা বিপদের নাম হিংসা। যার বীজ বহু গভীরে। আগুনের ফুলকির মতো হিংসা উড়ছে দিগ্বিদিক। কে কখন কীভাবে আক্রান্ত হবেন তা আনুমান করাও কঠিন হয়ে পড়ছে। তার পর যদি দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা স্থায়ী রূপ নেয় তাহলে ওই হিংসার ফুলকি পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়ার সুযোগ নেয়। আমাদের দেশেও সেই সুযোগটা নিচ্ছে কি? গুলশান সংকট এ প্রশ্নটাই জোরালো করে তুলেছে যেমন, তেমনই সম্প্রীতির প্রকৃত শিক্ষায় ঘাটতির বিষয়টিও প্রাসঙ্গিকতা পেয়েছে।

পুনশ্চঃ সকলের আকাশেই সিঁদুরে মেঘ। সজাগ, সতর্ক হতে হবে সকলকে।