রাধামদন মঠের সেবায়েত শ্যামানন্দ দাসকে কুপিয়ে খুন : আইএস’র টুইট বার্তা

 

স্টাফ রিপোর্টার: ঝিনাইদহে আবারও এক মন্দিরের সেবায়েতকে কুপিয়ে খুন করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল শুক্রবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে এই ঘটনা ঘটে। নিহত সেবায়েতের নাম শ্যামানন্দ দাস ওরফে বাবাজি। তিনি উপজেলার উত্তর কাষ্ট সাগরা গ্রামের শ্রী শ্রী রাধামদন গোপাল বিগ্রহে (মঠ) কর্মরত ছিলেন। শ্যামানন্দের বাড়ি নড়াইল সদর উপজেলার মুসুরিয়া গ্রামে। তার বাবার নাম নাম কিরণ চন্দ্র। যেভাবে গত মাসে পুরোহিত আনন্দ গোপালকে হত্যা করা হয়েছিলো, শ্যামানন্দ দাসকেও সেভাবেই খুন করা হয়েছে। মোটরসাইকেলে আসা তিন যুবক এ হত্যাকাণ্ড ঘটায়। নিহত শ্যামানন্দ দাস (৫০) সদর উপজেলার উত্তর কাষ্ঠসাগরা গ্রামের শ্রী শ্রী রাধামদন গোপাল বিগ্রহের (মঠ) সেবায়েত হিসেবে কাজ করে আসছিলেন গত তিন বছর ধরে। যেভাবে যে কৌশলে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে, তার সাথে সম্প্রতি বিভিন্ন জঙ্গি হামলা ও হত্যার ঘটনার মিল রয়েছে বলে জানিয়েছেন ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার শেখ আলতাফ হোসেন।

এদিকে ঝিনাইদহে হিন্দু পুরোহিত ও বান্দরবানে এক বৌদ্ধ নেতাকে হত্যার দায় স্বীকার করেছে আইএস। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জঙ্গি তৎপরতা পর্যবেক্ষণকারী ওয়েবসাইট সাইট ইন্টিলিজেন্সের প্রধান রিটা কাটয তিনটি টুইট বার্তায় আইএস’র দায় স্বীকারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার ভোরে মঠের গেটে পূজার জন্য ফুল তুলছিলেন শ্যামানন্দ। এ সময় ডিসকভারি ব্র্যান্ডের ১০০ সিসির একটি লাল রঙের মোটরসাইকেলে তিন দুর্বৃত্ত মঠের গেটের পাশে যায়। পরে তারা শ্যামানন্দকে এলোপাতাড়িভাবে কুপিয়ে পালিয়ে যায়। খোঁজ পেয়ে স্থানীয় লোকজন গুরুতর অবস্থায় শ্যামানন্দকে উদ্ধার করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান হাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, দুর্বৃত্তরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে শ্যামানন্দকে গুরুতরভাবে জখম করে। ঘটনাস্থলে তাঁর মৃত্যু হয়। কে বা কারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।

নাম প্রকাশ না করে এক নারী প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্য, প্রতিদিনের মতো আজও পূজার জন্য ফুল তুলতে মঠ থেকে বের হয়েছিলেন শ্যামানন্দ। এ সময় শহরের দিক থেকে একটি মোটরসাইকেলে করে আসা তিন ব্যক্তি শ্যামানন্দকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে চলে যায়। মোটরসাইকেলের আরোহীদের মুখ গামছা দিয়ে বাঁধা ছিলো। মাথায় ছিলো ক্যাপ। মাঝের জনের হাতে ছিলো একটি রামদা। মঠ পরিচালনা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মণি কুমার রায় বলেন, গত তিন বছর ধরে সেবায়েতের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন শ্যামানন্দ। তিনি ভালো মানুষ ছিলেন। পূজা-অর্চনায় সব সময় ব্যস্ত থাকতেন। তার বাইরে যাওয়া-আসা খুব কম ছিলো। গত দুই বছরে এভাবে একের পর এক হত্যাকাণ্ডে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এসেছে, খুন হয়েছেন সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী লেখক, ব্লগার, প্রকাশক; ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও ভিন্ন মতাবলম্বীরা। সেবায়েত শ্যামানন্দ দাসকে নিয়ে কেবল ঝিনাইদহেই এ ধরনের হত্যার শিকার হয়েছেন চারজন।

এদিকে ঝিনাইদহ হিন্দু পুরোহিত ও বান্দরবানে এক বৌদ্ধ নেতাকে হত্যার দায় স্বীকার করেছে আইএস। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জঙ্গি তৎপরতা পর্যবেক্ষণকারী ওয়েবসাইট সাইট ইন্টিলিজেন্সের প্রধান রিটা কাটয তিনটি টুইট বার্তায় আইএসর দায় স্বীকারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। প্রথম টুইটে তিনি বলেন, আইএস’র আমাক বার্তাসংস্থা সংবাদ প্রকাশ করেছে: গতকাল আইএস যোদ্ধারা বাংলাদেশের বান্দরবান এলাকার একটি বৌদ্ধ দলের নেতাকে হত্যা করেছে। আর দ্বিতীয় টুইট বার্তায় রিটা কাটয বলেন, বাংলাদেশ বিষয়ে আইএস দ্বিতীয় দায় স্বীকার করেছে। বৌদ্ধ নেতাকে হত্যার দায় স্বীকারের পর, আইএস’র আমাকে ঝিনাইদহের হিন্দুকে হত্যার সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এ দুটি ঘটনার সংবাদের পৃথক ইংরেজি অনুবাদও আমাক প্রকাশ করেছে বলে জানান তিনি। এ অনুবাদে বলা হয়েছে, গতকাল সন্ধ্যায়, ইসলামিক স্টেটের যোদ্ধারা দক্ষিণপূর্ব বাংলাদেশের বান্দরবান এলাকায় একটি বৌদ্ধ দলের নেতাকে হত্যা করেছে। দ্বিতীয় অনুবাদে বলা হয়েছে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় বাংলাদেশের ঝিনাইদহের মধুপুর এলাকায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে এক হিন্দুকে হত্যা করেছে ইসলামিক স্টেটের যোদ্ধারা।

উল্লেখ্য, গত ৭ জুন সদর উপজেলার মহিষাডাঙ্গা গ্রামে মহিষের ভাগাড় মাঠে আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলী (৬৯) নামের এক হিন্দু পুরোহিতকে কুপিয়ে খুন করা হয়। নলডাঙ্গা দুর্গা মন্দিরের সাবেক পুরোহিত আনন্দ গোপাল করাতিপাড়ার বাড়ি থেকে সাইকেলে নলাডাঙ্গা গ্রামের সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দিরে যাওয়ার সময় আক্রান্ত হন। ওই ঘটনাতেও তিন যুবক মোটরসাইকেলে এসে তাকে কুপিয়ে হত্যা করে চলে যায়।

মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গি দল আইএস আনন্দ হত্যাকাণ্ডেও দায় স্বীকার করে বার্তা দিয়েছে বলে সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ জানালেও ওই হত্যার পেছনে বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির জড়িত থাকার সন্দেহের কথা বলেছে আসছে পুলিশ। ১৫ মার্চ  ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের একাংশের ঝিনাইদহ জেলা শাখার সেক্রেটারি আব্দুর রাজ্জাককে (৪৫) কালীগঞ্জ উপজেলার নিমতলা বাসস্ট্যান্ডে কুপিয়ে খুন করা হয়। রাজ্জাক পেশায় ছিলেন হোমিও চিকিৎসক। আইএস ওই হত্যার দায় স্বীকার করেছে বলে সে সময় খবর আসে। ৭ জানুয়ারি সদর উপজেলার বালেখাল বাজারে হোমিওপ্যাথ চিকিৎসক সমির আলীকে হত্যা করা হয়, যিনি ২০০১ সালে খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। খুনিরা চেম্বারে ঢুকে সমিরকে ছুরি মেরে পালিয়ে যায়। পরে আইএস’র দায় স্বীকারের বার্তা আসে।

Leave a comment