প্রিয়জনের কাছে লাশ হয়ে ফিরলেন শ্যামানন্দ

 

স্টাফ রিপোর্টার: মন্দিরের পূজা শেষে সন্যাসীর প্রিয়জনের কাছে যাওয়ারই কথা। কিন্তু প্রিয়জনের কাছে গেলো সন্যাসী শ্যামানন্দ দাসের লাশ। ঘরে ৮০ বছরের বৃদ্ধা মা চারুবালা। ভাই, ভাইদের বউ আর তাদের ছেলে-মেয়ে আর ভগবানের সেবায় সময় কাটতো শ্যামানন্দের। গতকাল শুক্রবার ভোর সোয়া ৫টার দিকে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার শ্রী শ্রী রাধামদন গোপাল বিগ্রহের (মঠ) কাছে পূজার ফুল তোলার সময় মোটরসাইকেলে আসা তিন যুবক শ্যামানন্দকে কুপিয়ে খুন করে। শ্যামানন্দ দাসের গ্রামের বাড়ি নড়াইল সদর উপজেলার মুশুড়িয়া গ্রামে চলছে শোকের মাতম। ছেলে হত্যার খবর শুনে মা চারুবালা (৮০) বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। নিহতের স্বজনদের আহাজারিতে এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে। নড়াইল সদর উপজেলার কলোড়া ইউনিয়নের মুশুড়িয়া গ্রামে নিহতের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষ ওই বাড়িতে আসছেন। শ্যামানন্দ দাসের নিজের কোনো ঘর না থাকলেও তার ভাইয়ের ঘরে বসে আছেন আত্মীয়স্বজনরা। বাড়িতে চলছে আহাজারি।

গতকাল দুপুরে নড়াইল সদর উপজেলার মুসুড়ি গ্রামে শ্যামানন্দের বাড়ি গিয়ে দেখা গেছে, আশপাশের এলাকা থেকে মানুষ ভিড় করছেন। শ্যামানন্দর নিজের কোনো ঘর না থাকায় তার ভাইয়ের ঘরে বসছেন স্বজনরা। তারা জানান, শ্যামানন্দ দাসের বাবার নাম কিরণ সরকার। দুই বোন ও চার ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন শ্যামানন্দ। বাবা-মায়ের দেয়া নাম প্রদ্যোত্ সরকার। দীক্ষা গ্রহণ সূত্রে গুরুর দেয়া নামেই পরিচিত শ্যামানন্দ।

বড় ভাই বিশ্বনাথ সরকার বলেন, ধর্মীয় শিক্ষা-দীক্ষার জন্য ছোটবেলাই বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে শ্যামানন্দ। বিভিন্ন স্থানে সেবায়েতের দায়িত্ব পালন শেষে তিন বছর আগে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কাষ্ঠসাগরা গ্রামের ওই মঠে সেবায়েত হিসেবে কাজ শুরু করে শ্যামানন্দ। তার বৌদী তৃষ্ণা সরকার বলেন, অবিবাহিত শ্যামানন্দ সময় পেলেই নড়াইলে আসতো। পরিবারের সদস্য ও হিন্দু ধর্মাবলম্ব্বীদের মাঝে ধর্মীয় বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করতো। গত বৃহস্পতিবার রাতেও শ্যামানন্দের সাথে ফোনে কথা হয় বলে তিনি জানান। গতকাল সকালেই ওর বাড়ি আসার কথা ছিলো। সেই সকালেই মোবাইলে মৃত্যুর খবর পেলাম।

তার বড় ভাই বিশ্বনাথ বলেন, বিভিন্ন স্থানে একের পর এক ধর্মযাজকদের হত্যা করা হচ্ছে। আগে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচার হলে ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটত না। আমি আমার ভাই হত্যার ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি দাবি করছি।

নড়াইল জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি অশোক কুমার কুণ্ডু বলেন, একের পর এক সেবায়েত খুনের ঘটনায়  দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় আতঙ্কিত। অনেকেই মন্দিরে পূজা-অর্চনা করতে ভয় পাচ্ছেন। পূজারিরাও ভয় পাচ্ছেন। এ ব্যাপারে সরকারের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

 

Leave a comment