দীর্ঘ সময়েও চালু হয়নি ঝিনাইদহ ২৫ শয্যার শিশু হাসপাতাল

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ১০ বছর আগে ঝিনাইদহের ২৫ শয্যার শিশু হাসপাতালটি প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ভবন নির্মিত হয়েছে। পড়ে থাকায় নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান যন্ত্রপাতি। জনবল নিয়োগ হয়নি। ফলে দীর্ঘ সময়েও চালু হয়নি এ শিশু হাসপাতাল। দুজন সহকারী চিকিৎসা কর্মকর্তাসহ কয়েকজন কর্মীকে প্রেষণে নিয়ে চলছে বহির্বিভাগের কার্যক্রম।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঝিনাইদহবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিগত চারদলীয় জোট সরকার ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাশে একটি শিশু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়। ২০০৫ সালের শেষ দিকে ঝিনাইদহ বাসটার্মিনালের বিপরীতে এটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। বরাদ্দ দেয়া হয় ৬ কোটি ৩৪ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। পরের বছর আগস্টে ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হয়। ৬ সেপ্টেম্বর শিশু হাসপাতালটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানান, শিশু হাসপাতালটিতে বিদ্যুত-সংযোগ, পানির লাইনের কাজ বাকি থাকতেই উদ্বোধন করা হয়েছিলো। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজনকে অনুরোধ করে দ্রুত কাজ শেষ করিয়ে নেয়া হয়েছিলো। এ জন্য তখন হাসপাতালের প্রশাসনিক অনুমোদন দেয়া হয়নি।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১২ সালে ২৫ শয্যার শিশু হাসপাতালটি প্রশাসনিক অনুমোদন পায়। এটি চালুর জন্য ১০ জন চিকিৎসক, ১৩ জন নার্স, ২ জন ফার্মাসিস্টসহ মোট ৫৭টি পদ সৃষ্টির জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন পাঠানো হয়েছে, যা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন। লোকবল নিয়োগ হলেই হাসপাতালটি চালু করা সম্ভব হবে। বর্তমানে সেখানে প্রেষণে একজন মেডিকেল অফিসার, দুজন সহকারী মেডিকেল অফিসার, দুজন এমএলএসএস ও দুজন নৈশপ্রহরী কর্মরত।

গত শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, দোতলা হাসপাতাল ভবনটির একটি কক্ষে রোগী দেখছেন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার শহিদুর রহমান। বাইরে আরও কয়েকজন অপেক্ষা করছেন। তিনি জানান, প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত কার্যক্রম চলে। সাপ্তাহিক ছুটি শুক্রবার। বহির্বিভাগে রোগীদের শুধু ব্যবস্থাপত্র দেয়া হয়। ওষুধ সরবরাহ বা রোগ নির্ণয়ের কোনো ব্যবস্থা নেই। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর আরেক উপসহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা রোখসানা ওয়াসিমের সাথে দেখা হয়। তারা জানান, ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ফাল্গুনী রাণী সাহা মাঝেমধ্যে এখানে রোগী দেখেন।

মূল হাসপাতাল ভবন ছাড়াও রয়েছে তিনতলাবিশিষ্ট ৫টি কোয়ার্টার ভবন। দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থাকায় এসব ভবনের চারপাশে লম্বা ঘাস ছেয়ে গেছে। দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে। দরজা-জানালা ভেঙে গেছে, লোহার গ্রিলে মরিচা ধরেছে। সিভিল সার্জন আবদুস সালাম বলেন, হাসপাতালটির জন্য বরাদ্দ কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। সম্প্রতি সেসব যন্ত্রপাতি হাসপাতালের ভবন থেকে গুদামে পাঠানো হয়েছে। ভবনের অবস্থাও খারাপের দিকে। লোকবল নিয়োগ দেয়া সম্ভব না হওয়ায় এটি ঠিকমতো চালু করা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।

Leave a comment