মেহেরপুর এলজিইডিতে রহমানের দাপট!

 

স্টাফ রিপোর্টার: আব্দুর রহমান চৌধুরী। মেহেরপুর ইলজিইডির উপসহকারী প্রকৌশলী। পদ পদবী যাই থাক মেহেরপুর এলজিইডিতে তার দাপটে দিশেহারা কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ঠিকাদাররা। রহমানের কথা ছাড়া এখানে কোনো কিছুই করা সম্ভব নয়। ক্ষমতার পালা বদলে নিজের খোলস পাল্টে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কয়েকজনকে ম্যানেজ করে তিনি দাপট টিকিয়ে রেখেছেন বলে জানান কয়েকজন ভুক্তভোগী ঠিকাদার। টেন্ডার থেকে শুরু করে বিল উত্তোলন পর্যন্ত কোনো কিছুই রহমানের সন্তুষ্টি ছাড়া সম্ভব নয়। তিনি এতোটাই ক্ষমতাধর যে নির্বাহী প্রকৌশলীর সরকারি গাড়ি ও সহকারি প্রকৌশলীদের বাস ভবন ব্যবহার করছেন।

জানা গেছে, প্রায় দেড় যুগ ধরে মেহেরপুর এলজিইউডিতে উপ সহকারি প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত আব্দুর রহমান চৌধুরী। অন্যান্য পদের চাকরিজীবীদের নিয়মিত বদলি হলেও আব্দুর রহমানের বদলি নেই। বিগত বিএনপি সরকারের শাসনামলে এমপি ও নেতাদের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত ছিলেন আব্দুর রহমান। কোনো কাজ তার ইশারা ছাড়া হয়নি। সকলে তাকে বিএনপির সমর্থক হিসেবেই জানতেন। ক্ষমতার পালা বদলে আব্দুর রহমান আওয়ামী লীগের সমর্থক বনে যান। মেহেরপুরের কতিপয় নেতা ও দুজন ঠিকাদারকে ম্যানেজ করে অফিসে তার কর্তৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। এতে প্রকৃতপক্ষে আওয়াম লীগ সমর্থক ঠিকাদারকে পাত্তা দেন না তিনি।

এলজিইডিতে নির্বাহী প্রকৌশলী পদে কেউ যোগদান করলে রহমানকে তেমন পাত্তা দেন না। কিন্তু বিভিন্নভাবে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে তিনি নির্বাহী প্রকৌশলীকে ম্যানেজ করেন। ঠিকাদাররা নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে কোনো কাজের জন্য গেলে আব্দুর রহমানের সাথে কথা বলতে বলেন। আব্দুর রহমানকে অফিসে ডাকা হয় রহমান সাহেব বলে। এতে অবশ্য নির্বাহী প্রকৌশলীরও লাভ। কোনো ঝামেলা ছাড়াই আব্দুর রহমানের মাধ্যমে পেয়ে যান সব কাজের হিস্যা।

দাফতরিক হিসেবে আব্দুর রহমানের কাজ হচ্ছে উপজেলা থেকে কোনো বিল গেলে তা যাচাই করে সহকারী প্রকৌশলীদের কাছে প্রেরণ করা। কিন্তু এতে তিনি ক্ষান্ত নন। সব কাজেই তিনি নাক গলাতে অভ্যস্ত। কোনো ঠিকাদারের কাজ দেয়া হবে, কোন কোন টেন্ডার সমঝোতা হবে এবং কোন ঠিকাদার কতো ভাগ দেবেন তার সবই নিয়ন্ত্রণ করেন আব্দুর রহমান। এমন অভিযোগ বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী ঠিকাদারের।

কয়েকজন ঠিকাদার জানান, নির্বাহী প্রকৌশলীকে স্যার সম্বোধন না করা হলেও আব্দুর রহমানকে স্যার বলা অঘোষিত বাধ্যতামূলক। তা না হলে তিনি ঠিকাদারদের কাজ আটকে দেন। অথচ অন্যান্য উপসহকারী প্রকৌশলীদেরকে কোনো ঠিকাদার স্যার সম্বোধন করেন না। আব্দুর রহমান সরকারি ছুটির দিনে নির্বাহী প্রকৌশী ও সহকারী প্রকৌশলীর সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে থাকেন।

রহমানের কেনো বদলি হয় না এমন তথ্য খুঁজতে গিয়ে পাওয়া গেছে বেশ চাঞ্চল্যকর তথ্য। কয়েকজন ঠিকাদার জানান, মেহেরপুর জেলার আম ও লিচু সু-স্বাদু। প্রতি বছর ফলের মরসুমে ঝুড়ি ঝুড়ি আম-লিচু প্রেরণ করেন এলজিইউডির প্রধান কার্যালয়সহ যশোর ও খুলনা কার্যালয়ে। এর জন্য ঠিকাদারদের কাছ থেকে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করেন তিনি। এ কারণে তার বদলি হয়না বলে মনে করেন ভুক্তভোগীরা।

এদিকে দাফতরিক হিসেবে মেহেরপুর এলজিইউডি অফিস প্রাঙ্গণে সহকারী প্রকৌশলী ভবনে সহকারী প্রকৌশলীদের পরিবার নিয়ে বসবাসের কথা। কিন্তু ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে আব্দুর রহমান ওই কোয়ার্টারে দীর্ঘদিন ধরে সপরিবারে বসবাস করছেন। এ কারণে বাইরে বাসা নিয়ে বসবাস করতে হচ্ছে বলে জানান সহকারী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম।

এছাড়াও সরকারি নিয়ম নীতির প্রতি বৃদ্ধাঙ্গলী দেখিয়ে ওই ভবনে এসি ব্যবহার করছেন আব্দুর রহমান। বাসায় রয়েছে আলিশান ফার্নিচার। উচ্চ বিত্তদের মতোই তার জীবন-যাপন। গড়ে তুলেছেন বিত্ত-বৈভব। এসব কোথা থেকে আসে তা নিয়ে এলাকার মানুষের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে।

জানতে চাইলে মেহেরপুর এলজিইউডি নির্বাহী প্রকৌশলী আজিম উদ্দীন সরদার বলেন, অনেক সময় তার নির্দেশে অফিসে কাজে গাড়ি ব্যবহার করে থাকে আব্দুর রহমান। ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করে কি-না তা জানা নেই। রহমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, অফিসে আসেন সামনা সামনি বসে কথা বললে ভাল হয়। তবে বাসা বরাদ্দ ও এসি ব্যবহারের বিষয়ে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অভিযোগের বিষয়ে আব্দুর রহমান চৌধুরী বলেন, আমার জন্য যে বাসা বরাদ্দ আমি সেখানেই থাকি আর নিয়মিত ভাড়া পরিশোধ করি। সরকারি গাড়ি ব্যবহার করা হলেও সেটি স্যারের আদেশে ব্যবহার হয়। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ উঠেছে তা উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলেও তিনি দাবী করেন।

এদিকে আব্দুর রহমানের অভিযোগের বিষয়ে এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা, ঠিকাদারসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের মাঝে ক্ষোভ ও মিশ্র প্রতিক্রিয়া থাকলেও তাতে কর্ণপাত করেনি তার দফতর। তাই এলজিইডির ইমেজ রক্ষায় রহমানের বিষয়ে কার্যকরী সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা।