মাথাভাঙ্গা মনিটর: প্রতি আক্রমণে দুর্দান্ত গতিতে বল নিয়ে ছুটছিলেন রেনাতো সানচেজ। বলতে গেলে ক্রোয়েশিয়ার বুক চিরে, মাঠের মাঝ দিয়ে। ডানপাশে চিতার ক্ষিপ্রতায় ছুটতে থাকা রোনালদো বারবার বলটা তাকে পাস দেয়ার জন্য চিৎকার করছিলেন। কিন্তু সানচেজের সেদিকে নজরই নেই। ১৮ বছর বয়সী পর্তুগাল মিডফিল্ডার উলটো পাস দিলেন বাঁয়ে থাকা নানিকে, ক্রোয়েশিয়ার দুই-তিন ডিফেন্ডার যাকে ঘিরে ধরে ছিলেন। সে সময় মনে হচ্ছিলো, আক্রমণটা বুঝি এবারও বিফলে গেল। কিন্তু নানির দুর্বল শটটা ঠিকই বক্সের মাঝ দিয়ে চলে গেল বাঁ থেকে ডানে। গেল তো কার কাছে? ক্রোয়েশিয়ার জন্য মূর্তিমান আতঙ্ক ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো! পুরো ম্যাচে প্রায় অচেনা হয়ে থাকা পর্তুগিজ অধিনায়কের জোরালো শট ফিরিয়েও দিয়েছিলেন ক্রোয়াট গোলকিপার সুবাচিচ। কিন্তু সেটি গিয়ে পড়ল আগুয়ান রিকার্ডো কারেসমার দিকে। পর্তুগাল উইঙ্গারের আলতো ছোঁয়ায় বল জড়িয়ে গেল জালে। গোল! ম্যাচের তখন ১১৭ মিনিট। অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধেরও শেষ দিকের এ গোলেই ইউরোর শেষ ষোলোতে আজ ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়েছে পর্তুগাল (১-০)। কোয়ার্টার ফাইনালে পোল্যান্ডের মুখোমুখি হবে রোনালদোর দল। দু দলের এ ম্যাচটাকে ঘিরে প্রত্যাশা ছিল অনেক। গ্রুপের শেষ ম্যাচে ৬ গোলের ম্যাচে ড্র করে শেষ ষোলোয় এসেছিলো পর্তুগাল, অন্যদিকে ক্রোয়েশিয়া হারিয়েছিলো বর্তমান চ্যাম্পিয়ন স্পেনকে। সব মিলিয়ে আক্রমণ, প্রতি আক্রমণে জমজমাট এক ম্যাচেরই হয়তো আশা করছিলেন সবাই। কিন্তু তা আর হলো কই! নকআউট পর্বের ম্যাচ বলেই কি-না, উল্টো দু দল গুটিয়ে গেল সতর্কতার খোলসে। সেটি এত বেশি যে পুরো ৯০ মিনিটেও গোলে কোনো শট (শট অন টার্গেট) নেই! ম্যাচের প্রথম গোলে শটই হলো কারেসমার গোলের আগে রোনালদোর ওই শট, ১১৭ মিনিটে! ক্রোয়েশিয়ার ভাগ্যটা খারাপই বলতে হবে। ম্যাচজুড়ে দুর্দান্ত খেলেছেন মদরিচ-রাকিতিচরা। হয়তো পর্তুগালের চেয়েও বেশি ভালো খেলেছিলেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তের ওই নাটকীয়তায় বাদ পড়তে হলো টুর্নামেন্টে সবচেয়ে সুন্দর ফুটবল উপহার দেওয়া দলগুলোর একটিকে। পর্তুগালের গোল যে প্রতি আক্রমণ থেকে, তার আগের আক্রমণেই তো ক্রোয়েশিয়ার পেরিসিচের শট গিয়ে লেগেছিলো পর্তুগালের পোস্টে। ম্যাচজুড়েও সুযোগ বেশি পেয়েছে তারাই। কিন্তু পেরিসিচ-ব্রোজোভিচ-ভিদারা প্রতিপক্ষের বক্সে গিয়ে সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারলে হয়তো ক্রোয়াটরাই জিততে পারত ম্যাচটা। পর্তুগাল ম্যাচে আসলে খেলেছে দ্বিতীয়ার্ধে। প্রথম ৪৫ মিনিটে এক ফ্রি কিক থেকে ভেসে আসা বলে পেপের হেড ছাড়া আর তেমন সুযোগ পেল না দলটি। এর পেছনে একটা বড় কারণ ছিলো রোনালদোর নিষ্প্রভ হয়ে থাকা। পুরো ৪৫ মিনিটে বলে মাত্র ১৯ বার পা লাগাতে পেরেছেন পর্তুগাল ফরোয়ার্ড। দ্বিতীয়ার্ধে দলের খেলায় মূলত পরিবর্তন এসেছে বদলি হয়ে রেনাতো সানচেজ নামায়। অনেকটা ৪-২-২-২ ফর্মেশনে খেলতে থাকা পর্তুগাল তখন ফিরে আসে ৪-৩-৩ ফর্মেশনে। তাতে মিডফিল্ডে খেলার নিয়ন্ত্রণও ফিরে আসে অনেকটা। তবে এ নিয়ন্ত্রণটাও প্রতিপক্ষের বক্সের সামনে কেন যেন খেই হারিয়ে ফেলছিল। কখনো শেষ পাসটা ঠিকমতো না হওয়া, কখনো প্রতিপক্ষের বক্সে অপেক্ষাকৃত ভালো অবস্থানে দাঁড়িয়ে থাকা খেলোয়াড়কে পাস না দেয়ার মাশুলই গুনতে হবে বলে মনে হচ্ছিলো তখন।