স্টাফ রিপোর্টার: ঐতিহ্যবাহী দর্শনা হল্ট স্টেশনটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। স্টেশনটি এখন পরিণত হয়েছে চোলাচালান পণ্য পাচারের অন্যতম রুটে। প্রতিদিন এ স্টেশনের রেলপথে ভারত থেকে চোরাই পথে বহন করে আনা বিভিন্ন ধরণের মাদকদব্য, কাপড়-চোপড়, জুতা-স্যান্ডেল, কসমেটিকসসহ প্রচুর পরিমাণ ভারতীয় মালালাল চোরাই পণ্য ঢাকা, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাচার হয়ে থাকে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিদিন মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে জিআরপি, পুলিশ, বিজিবির নাম ভাঙিয়ে এক শ্রেণির দালাল প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে করে আসছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে স্টেশনের প্লাটফর্ম ও আশপাশ এলাকায় স্থানীয় চোরাকারবারী ও দালালদের দৌরাত্ব চরম আকার ধারণ করেছে। স্থানীয় চোরাচালানীদের কয়েকটি গ্রুপ এ স্থানের আধিপত্য বিস্তারে প্রায়ই প্রকাশ্যে চলে দেশি-বিদেশি অস্ত্রের মহড়া। ফলে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হয় ট্রেনের যাত্রী সাধারণসহ এলাকার নিরীহ জনসাধারণকে। স্টেশনে নিরাপত্তার অভাবে দিনদিন হ্রাস পাচ্ছে ট্রেনের যাত্রী সংখ্যা। স্টেশন এলাকায় চোরাচালানীদের নিয়ন্ত্রণের আধিপত্ত বিস্তারে মেতে উঠেছে কয়েকটি পক্ষ। এক পক্ষ অপর পক্ষকে ঘায়েল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। যে কারণে যেকোন সময় বড় ধরণের দুর্ঘটনার আশঙ্কা বিরাজ করছে। দালালচক্রের অত্যাচারে অতিষ্ঠ শুধু স্টেশন এলাকার মানুষই নয়, এদের অত্যাচারের শিকার হতে হয়েছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সাংবাদিক। সম্প্রতি পৌর কাউন্সিলর হাসান খালেকুজ্জামানকে পিটিয়ে আহত করেছে দালালরা। এ প্রতিবেদন প্রকাশের কারণে সাংবাদিক চঞ্চল মেহমুদকে অপহরণ ও মারধরের ঘটনা ঘটিয়েছে। কোনো অদৃশ্য হাতে ইশারায় তারা প্রকাশ্য এ ধরণের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নির্বিঘ্নে চালাচ্ছে তা খতিয়ে দেখা জরুরি। আর কতো অপরাধ করলে তাদের দৌরাত্ব বন্ধ হবে এমনটাই প্রশ্ন দর্শনাবাসীর। বর্তমানে দর্শনা হল্ট স্টেশনের ওপর দিয়ে প্রতিদিন নকশিকাঁথা, কপোতাক্ষ, রূপসা, চিত্রা, মহানন্দা, সাগরদাঁড়ি, সুন্দরবন ও সীমান্ত এক্সপ্রেস ও রকেট মেইলসহ কমপক্ষে ২৫টি যাত্রীবাহি ট্রেন চলাচলা করে থাকে। যে কারণে দর্শনা হল্ট স্টেশনটি খুবই ব্যস্ততম জনবহুল ও গুরুত্বপূর্ণ। রেলের যাত্রীসাধারণের নিরাপত্তার জন্য জিআরপি পুলিশ ফাঁড়ি থাকলেও নিরাপত্তাদানের ক্ষেত্রে এ ফাঁড়ির সদস্যদের তেমন কোনো ভূমিকা দেখা যায় না। প্রায় সময় স্টেশনের প্লাটফর্মে অবস্থানরত যাত্রীদের ব্যাগ, টাকা-পয়সা ও গহনাসহ বিভিন্ন ব্যাবসায়িক মালামাল ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এছাড়া সন্ধ্যার পর স্টেশন ও তৎসংলগ্ন এলাকাটি পরিণত হয় অসামাজিক কার্যকলাপ, মাদক ও চোরাকারবারীদের অভয়রাণ্যে। ফলে দিনরাত স্টেশন এলাকায় চলে চোরাচালানী ও বখাটেদের দৌরাত্ব। অভিযোগ আছে, মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে স্টেশনে অবস্থানরত জিআরপি পুলিশের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় এ স্টেশন থেকে চোরাকারবারীরা ভারত সীমান্ত দিয়ে অবৈধপথে পাচার করে আনা মাদকদ্রব্যসহ নানাপ্রকার চোরাই পন্য রেলযোগে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাচার করে থাকে। ফলে ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যরা যাত্রীদের পরিবর্তে চোরাকারবারী ও তাদের মালামালের নিরাপত্তা দিতেই বেশি ব্যাস্ত থাকে। ষ্টেশনে কর্মরত পুলিশ সদস্যদের পোষাক পরার নিয়ম থাকলেও বেশির ভাগ সময় তাদের দেখা যায় সাদা পোশাকে।
উল্লেখ্য, নিরাপত্তাজনিত কারণে ঢাকাগামী ৭২৫ আপ সুন্দরবন ও খুলনাগামী ৭৬৪ ডাউন চিত্রা ট্রেন দুটি রাতে চলাচল করায় এখানে যাত্রী বিরতী দেয়া হয়নি। ফলে ভারত হতে চোরাইপথে পাচার হয়ে আসা জামা-কাপড়, জুতা-স্যান্ডেল, কসমেটিকস ইত্যাদি দেশে প্রবেশের ফলে একদিকে যেমন দেশি শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অপরদিকে ফেনসিডিল, মদ, গাঁজা, হেরোইন, ইয়াবাসহ যৌন উত্তেজক বড়ি ও নানারকম মাদকদ্রব্য প্রবেশের কারণে ধ্বংস হচ্ছে দেশের যুবসমাজ। এদিকে সাংবাদিক চঞ্চল মেহমুদের ওপর হামলা মামলায় পুলিশ মিনারুলকে গ্রেফতার করলেও বর্তমানে সে জামিনে মুক্ত আছে। তবে ওই হামলাকারীরা চঞ্চল মেহমুদকে অব্যাহতভাবে হুমকি দিচ্ছে মামলা তুলে নেয়ার জন্য। এ ঘটনার প্রতিবাদে দর্শনা প্রেসক্লাবের সাংবাদিকরা আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত রাখলেও হামলাকারীদের দাপট কমেনি। দালালচক্রের হোতাদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারসহ দর্শনা হল্টস্টেশন এলাকাকে দালাল মুক্ত করতে চুয়াডাঙ্গা-৬ বর্ডার গার্ডের অধিনায়ক, পুলিশ সুপার, জিআরপির উর্দ্ধতন কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষন করেছে এলাকাবাসী।