চুয়াডাঙ্গায় ৪৩৬ প্রাইমারি স্কুলে স্লিপ বরাদ্দ এক কোটি ৭৪ লাখ টাকা : অধিকাংশ স্কুলের টাকাই সুষ্ঠু কাজে না লাগানোর অভিযোগ

 

চুয়াডাঙ্গায় ৩য় প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় পিইডিপি-৩ স্লিপ (স্কুল লেভেল প্লানিং) বরাদ্দের টাকা জেলার অধিকংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যথাযথ ব্যবহার হয়নি। কেউ পুরোনো মালামাল নতুন করে কেনা দেখিয়ে দিয়েছেন। অনেক প্রধান শিক্ষক কমিটির সাথে বিষয়টি সমন্বয় করলেও অনেক সভাপতি তা জানেনই না।

জানা গেছে, জেলায় মোট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৪৪১। এর মধ্যে স্লিপ বরাদ্দ পেয়েছে ৪৩৬ প্রতিষ্ঠান। ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে প্রতিটি স্কুলে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৪০ হাজার টাকা। স্লিপ অ্যাকাউন্টের টাকা ছাড়াও বিদ্যালয় প্রতি প্রাক-প্রাথমিকের মালামাল কেনার ৫ হাজার ও রুটিন মেরামতের জন্য আরও ৫ হাজার মোট ৫০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেয় সরকার। জেলায় বরাদ্দের পরিমাণ এক কোটি ৭৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় স্কুল রয়েছে ১২০টি। এর মধ্যে স্লিপ বরাদ্দ পেয়েছে ১১৫ স্কুল। বাকি ৫ স্কুল পরে জাতীয়করণ হওয়ায় স্লিপ বরাদ্দ পায়নি বলে সংশ্লিষ্ট অফিসসূত্রে জানা যায়। বরাদ্দ না পাওয়া ৫ স্কুল হচ্ছে পিরোজখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মোহাম্মদজমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খাসপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মুসলিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শ্রীকোল বোয়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সদর উপজেলার প্রাইমারি স্কুলগুলোর জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৪৬ লাখ টাকা। দামুড়হুদা উপজেলার ১১৬ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সবকটিই এ বরাদ্দ পেয়েছে। এ উপজেলার স্কুলগুলোর বরাদ্দের পরিমাণ পরিমাণ ৪৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা। জীবননগর উপজেলার ৭১ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বরাদ্দ পেয়েছে ২৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা। আলমডাঙ্গা উপজেলার ১৩৪ প্রাথমিক বিদ্যালয়েই এ বরাদ্দ পেয়েছে। এ উপজেলায় বরাদ্দের পরিমাণ ৫৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ইতোমধ্যেই বরাদ্দের টাকা খরচের মেয়াদও সম্পন্ন হয়েছে বলে প্রধান শিক্ষকরা জানান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের দুজন কর্মচারী জানান, জেলার অধিকংশ প্রাইমারি স্কুলেই স্লিপ বরাদ্দের কাজ সঠিকভাবে হয়নি। ২০-২৫ হাজার টাকা খরচ করে বাকি টাকা পকেটস্থ করেছেন প্রতিষ্ঠান প্রধানরা। আবার কিছু কিছু স্কুলে কাগজে-কলমেই খরচ শেষ হয়েছে। বিভিন্ন এলাকার স্থানীয়রা অভিন্ন কথা জানিয়ে বলেছেন, কিছু কিছু স্কুলের প্রধান শিক্ষক গত বছরের উপকরণ নতুন করে কেনা দেখিয়েছেন। স্ব-স্ব স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও স্কুলের ম্যানিজিং কমিটির সভাপতি মিলে এ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। আবার অনেক স্কুলের সভাপতি বরাদ্দের বিষয়ে কিছু জানেনই না।

কয়েকজন প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বললে তারা জানান, অনিয়ম-দুর্নীতি হয়ে থাকতে পারে, তাই বলে ঢালাওভাবে সবাইকে দোষারোপ করা ঠিক নয়। তারা জানান, এ জন্য প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে তদন্ত করে দেখা উচিত। যারা অনিয়ম-দুর্নীতির সাথে জড়িত বলে প্রমাণ হবে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তির ব্যবস্থা করা দরকার। বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ প্রসঙ্গে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার রমেন্দ্রনাথ পোদ্দার জানান, আমার কাছে কেউ সরাসরি এ ধরনের অভিযোগ করেননি। তাছাড়া টাকা খরচের সময়-সীমা চলতি মাস পর্যন্ত রয়েছে।