অযত্ন অবহেলায় বিলীনঝুঁকিতে বাংলাভাষা

 

বাংলাভাষা এতোটাই সমৃদ্ধ যে, উপযুক্ত শব্দ প্রয়োগে একটি বাক্যে বিশদ বোঝানো সম্ভব। কারো ভাড়াটে শব্দ সঙ্কট থাকলে তাকে তো ঘুরিয়ে নাক দেখানোর মতোই সহজ বিষয়টি কঠিন করতেই হবে। বহু ক্ষেত্রে হচ্ছেও তাই। বিশেষ করে দেশের গণমাধ্যমে নিযুক্ত কিছু দায়িত্বশীলের কাণ্ডজ্ঞানহীন শব্দ প্রয়োগ কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। অথচ এই ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছি আমরা।

মানুষের সন্তান হয়, ছাগলের হয় বাচ্চা। হরিণের হয় মিশুক, আর বাঘের? শাবক। কালের বিবর্তনে সময়ের স্রোতে বাঙালিরা না হয় সন্তান আর বাচ্চার পার্থক্যটা গুরুত্ব দিলেন, জেলহাজত, কারাগার আর নিরাপত্তা হেফাজতের মধ্যে যে পার্থক্য তাও আমলে নেবেন না? দেশের শীর্ষ স্থানীয় সিংহভাগ সংবাদপত্রে বিচারাধীন মামলার আসামিকে হরহামেশায় কারাগারে পাঠিয়ে দেন। অথচ জেল-হাজত আর কারাগারে প্রেরণের মধ্যে যেমন বিস্তার ফাঁরাক, তেমনই কারাগার আর নিরাপত্তা হেফাজতের মধ্যেও শব্দগত দূরত্ব অনেক। যদিও স্থানটা একই। যেমন একই এজলাসে একই বিচারক যখন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে আনীত মামলার বিচার করেন তখন তিনি জেলা জজ বা দায়রা জজ থাকেন না। কারাদণ্ডে দণ্ডিত না হলে তাকে কারাগারে প্রেরণ বলা কতোটা শুদ্ধ? এরকম বহু ক্ষেত্রে শব্দের ভুল প্রয়োগের কারণে অনেক শব্দ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তাতে বাংলাভাষার ক্ষতি হয়েছে নাকি লাভ?

সময়ের স্রোতে যা প্রবাহমানতার বিবর্তন রেখা অসম্ভব। ভাষাও তাই। তারপরও যদি শব্দের অপপ্রয়োগ বেড়ে যায়, শব্দের অপমৃত্যুর হার একটি ভাষা বিলীন ঝুঁকিতে পড়ে তাহলে বুঝতে হবে অবহেলা রন্ধ্রে রন্ধ্রে। যত্নবান হতে হবে। এ তাগিদ সবার আগে গণমাধ্যমকর্মীদেরই উপলব্ধি করতে হবে। কেননা, ধারক-বাহকের দায়িত্বটা তাদের ওপরই বর্তায়।