চুয়াডাঙ্গাসহ সারাদেশ ভারতীয় পণ্যে বাজার সয়লাব

 

ক্ষতিগ্রস্ত দেশীয় শিল্প : সরকার হারাচ্ছে শত কোটি টাকার রাজস্ব

স্টাফ রিপোর্টার: ভারত থেকে বৈধ পথে আমদানি কমে গেছে। অবৈধ পথে শুল্ক না দিয়ে আসছে শত শত কোটি টাকার পণ্য। বিশেষ করে ঈদকে সামনে রেখে চলছে রমরমা চোরাই পণ্য বাণিজ্য। চুয়াডাঙ্গা জেলাসহ রাজধানীর প্রতিটি ছোট-বড় শপিংমল, মার্কেট, বিপণি বিতান এখন ভারতীয় পণ্যের দখলে। লাখ টাকা দামের শাড়ি, লেহেঙ্গা, থ্রিপিস থেকে শুরু করে সব বয়সীদের শার্ট, প্যান্ট, পাঞ্জাবি, জুতা, সেন্ডেল প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে। বাহারি নামের এসব পোশাকের চাহিদা ও লাভ অনেক বেশি হওয়ায় ব্যবসায়ীরা এসব পণ্য মজুদ ও বিক্রিতে বেশি আগ্রহী। রাজধানীর বাইরেও প্রতিটি জেলা শহরে অবাধে বিক্রি হচ্ছে ভারতীয় পণ্য। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে নিয়ে আসা এসব পণ্যের আগ্রাসনে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশীয় শিল্প। সরকার হারাচ্ছে শত শত কোটি টাকার রাজস্ব।

ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদ উপলক্ষে এ বছর কয়েক হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি হয়েছে। এর ৮০ ভাগই ভারত থেকে এসেছে। কিন্তু এসব পণ্য বৈধ পথে আসেনি। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলার বিভিন্ন সীমান্তসহ অন্য সীশান্ত দিয়ে অবাধে ঢুকছে ভারতীয় পণ্য। আর এসবের মূল্য পরিশোধ করা হচ্ছে হুণ্ডিতে। এভাবে কয়েক হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা দেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে।

জানা গেছে, ভারতীয় পণ্যের অবৈধ আমদানির কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশীয় শিল্পোৎপাদন। অবৈধ পথে আমদানিকারকদের শুল্ক পরিশোধ করতে হয় না। ভারত-বাংলাদেশের শক্তিশালী একাধিক সিন্ডিকেট এ কাজে জড়িত। রাজনৈতিক প্রভাব থাকায় ভারতীয় পণ্য এ দেশে বাজারজাতকরণে তাদের খুব একটা বেগ পেতে হয় না। ব্যবসায়ীরা জানান, চোরাই পণ্য বিক্রিতে লাভ বেশি। শুল্ক ছাড়া এসব পণ্যের বাজার মূল্য অনেক কম থাকে। এ কারণে দেশীয় উৎপাদনমুখী শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ভারতীয় পণ্যের কাছে মূল্য ও মানে অনেক দেশীয় পণ্য মার খাচ্ছে। এ ছাড়া বৈধ পথে আমদানিকারকরাও এতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। বেশি লাভজনক হওয়ায় বৈধ আমদানির চেয়ে অবৈধ আমদানির দিকেই ঝুঁকছেন তারা।

জানা গেছে, ভারত থেকে সীমান্ত পথেই অধিকাংশ পণ্য আমদানি হয়। মূলত বেনাপোল বন্দর দিয়েই বৈধ পথে সিংহভাগ পণ্য বাংলাদেশে আসে। কিন্তু এ বছর অবস্থা খুবই খারাপ। শুল্ক না দিয়ে চোরাই পথে পণ্য আমদানির কারণে বেনাপোল শুল্ক বন্দরের রাজস্ব আদায়ও বিপর্যয়ের মুখে। বেনাপোল শুল্ক কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছে, অবৈধ আমদানি বন্ধে কড়াকড়ির কারণে চোরাচালান চক্র ভিন্ন কৌশল নিয়েছে। তারা বিভিন্ন অরক্ষিত সীমান্ত এলাকা দিয়ে শুল্ক না দিয়েই পণ্য আমদানি করছে। এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে রাজস্ব আদায়ে। যুগান্তরের বেনাপোল প্রতিনিধি জানান, গত এক মাসে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে মাত্র ১০ কনসাইনমেন্ট তৈরি পোশাক ও বিভিন্ন ধরনের কাপড় ভারত থেকে আমদানি হয়েছে। অথচ গত বছর একই সময়ে এ আমদানির সংখ্যা ছিল প্রায় ১০ গুণ বেশি। শুল্ক কর্তৃপক্ষের কড়াকড়ির কারণে এ বছর বেনাপোল দিয়ে তৈরি পোশাকের আমদানি প্রায় শূন্য বলে জানা গেছে।

অভিযোগ উঠেছে, কমপক্ষে ১২ জেলার সীমান্তে নিয়োজিত কতিপয় আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের যোগসাজশে চোরাচালানি সিন্ডিকেট অবৈধভাবে ভারতীয় পণ্য আনছে। আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে এ সিন্ডিকেট এখন আরও সক্রিয়। দেদারসে দেশে ঢুকছে ভারতীয় পোশাক। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অভিজাত মার্কেটের ব্যবসায়ীরা এখন থেকেই ভারতীয় শাড়ি, থ্রিপিস থেকে শুরু করে বিভিন্ন ঈদ পণ্যের মজুদ শুরু করেছেন।

জানা গেছে, বছরজুড়েই চোরাই পথে দেশে ঢোকে প্রায় শতাধিক ভারতীয় পণ্য। এর মধ্যে রয়েছে- পোশাক, মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল, যন্ত্রাংশ, ইলেকট্রনিক্স, বিভিন্ন মশলা জাতীয় পণ্য, শিশুখাদ্য, শুঁটকি, চিনি, মাদকদ্রব্য, অস্ত্র ইত্যাদি। তবে ঈদকে সামনে রেখে ভারতীয় কাপড় (ফেব্রিক্স), শাড়ি, থ্রিপিস, লেহেঙ্গা, ওড়না, শাল, পাঞ্জাবি, শার্ট, জুতা, সেন্ডেল ও বিভিন্ন কসমেটিকসের চোরাচালান এখন তুঙ্গে। এদিকে বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় মাঝে মাঝে কিছু চোরাচালান জব্দ করা হলেও যে পরিমাণ পণ্য পাচার হয় তা তার এক সিকি ভাগও নয় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। অভিযোগ উঠেছে, সীমান্তে নিয়োজিত কতিপয় আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের যোগসাজশে চোরাচালানি সিন্ডিকেট অবৈধভাবে এসব পণ্য আনছে।

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা সীমান্তের ৭টি রুট দিয়ে অবৈধভাবে দেশে ঢুকছে ভারতীয় শাড়ি, থান কাপড়, সুতা, থ্রি-পিস, প্যান্ট, শার্ট, টি-শার্ট, শাল ও জুতা-সেন্ডেলসহ বিভিন্ন কসমেটিকস। জানা গেছে, স্থানীয়ভাবে চোরাচালানিদের লাগেজ পার্টি বলা হয়। এ পার্টির মূল মালিক বা মহাজনরা অধিকাংশই ঢাকা, পোড়াদহ ও ঈশ্বরদীর। তারা বৈধ পথে কোলকাতায় গিয়ে লাখ লাখ টাকার পণ্য কিনে ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকার নির্দিষ্ট ব্যক্তির হেফাজতে রেখে আসে। পরে সময় সুযোগ বুঝে ভারত ও বাংলাদেশের দালালরা কমিশনের মাধ্যমে ওইসব পণ্য ৫০০ টাকা জোন (লেবার/কামলা) হাজিরায় সড়ক ও রেল পথে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে দেয়। অভিযোগ আছে, টাকার বিনিময়ে এসব অবৈধ মালামালের অলিখিত বৈধতা দিচ্ছে কতিপয় অসৎ বিজিবি-পুলিশ সদস্য ও কাস্টমসের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী। লাগেজপ্রতি বিজিবির নামে তোলা হয় ৩ হাজার টাকা, পুলিশের নামে ১ হাজার ২৫০ টাকা, কাস্টমসের নামে ১ হাজার ৫০০ টাকা। চেকপোস্ট দিয়ে প্রতিদিন ৫টি থেকে ৫০টি পর্যন্ত লাগেজ আসে। এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার মো. রশীদুল হাসান জানান, আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। জানা গেছে, লাগেজগুলো প্রথমে বাংলাদেশী সীমান্তবর্তী জয়নগর গ্রামে পৌঁছায়। সেখান থেকে জোন (লেবার/কামলা) হাজিরায় পুরুষ ও মহিলারা বস্তায় ভরে এসব পণ্য দর্শনা হল্ট স্টেশন হয়ে ট্রেনে বা সড়ক পথে গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। স্থানীয়রা জানান, মালামালের মূল মালিকরা এখানে কেউ থাকেন না। ব্যবসাটা চলে বিশ্বাসের ওপর কমিশনের মাধ্যমে।

বেনাপোল ও যশোর : ঈদকে সামনে রেখে যশোরসহ দেশের সীমান্ত অঞ্চল দিয়ে তৈরি পোশাক, শাড়ি, থ্রিপিস, থান কাপড়ের চোরাচালান বেড়ে গেছে। এভাবে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার পোশাক আসছে। এছাড়া সীমান্তের প্রায় সব হাট-বাজারে এখন ভারতীয় পোশাক প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে। আগে বেনাপোল কাস্টমে আমদানিকৃত বিভিন্ন পণ্যের মধ্যে শাড়ি, থ্রিপিস, লেহেঙ্গা, ওড়না এবং কাপড় (ফেব্রিক্স) জাতীয় পণ্য আসত শত শত কনসাইনমেন্ট। জানা গেছে, শার্শা, বেনাপোল ও চৌগাছা সীমান্তের ২৫ থেকে ৩০টি পয়েন্ট দিয়ে সড়ক ও নৌ পথে ভারতীয় ঈদপণ্য দেশে ঢুকছে। কলকাতার পার্শ্ববর্তী ডায়মন্ড হারবারে চোরাচালানিদের শক্ত ঘাঁটি। ওই ঘাঁটি থেকে কয়েকটি সিন্ডিকেট পণ্য পাচার নিয়ন্ত্রণ করে। সেখান থেকে ট্রলারে শাড়ি, থ্রিপিস ইত্যাদি সুন্দরবন হয়ে বঙ্গোপসাগর দিয়ে বাগেরহাট, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, বরিশালে এ দেশীয় সিন্ডিকেটের হাতে পৌঁছে দেয়া হয়। পরে তা মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার ও ট্রাকে চলে যায় ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার শপিং মলে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, সীমান্তের জিরো পয়েন্ট পার হওয়ার পরই অপেক্ষমাণ দেশীয় ট্রাক, ভ্যান, বাইসাইকেলসহ নানা রকমের যানবাহনে পণ্য তুলে দেয়া হয়। নিরাপদে পারাপারের জন্য পথে থাকে সিন্ডিকেট সদস্যরা। জানা গেছে, একটি ট্রাকে ৯০ বেল শাড়ি, থ্রিপিস থাকে। ৯০ বেল কাপড়ের দাম এক কোটি টাকা। আর এ পণ্যের আমদানি শুল্ক ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা। কলকাতা থেকে বৈধভাবে ওই পণ্য আমদানি করতে কাস্টমস খরচ, বন্দর চার্জ, ট্রাক ভাড়া, সিএন্ডএফ কমিশন ইত্যাদি দিয়ে প্রায় দ্বিগুণ মূল্য পড়ে। তা ছাড়া সময়ও লাগে এক মাসের মতো। বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি আলহাজ নূরুজ্জামান বলেন, এ স্থলবন্দর দিয়ে আগে যেসব পণ্য বৈধভাবে আমদানি হতো, এখন তা আসছে চোরাই পথে।

জানা গেছে, পাচারকারী সিন্ডিকেট মাত্র কয়েক লাখ টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন পণ্য কলকাতা থেকে বাংলাদেশের যে কোনো স্থানে পৌঁছে দিচ্ছে মাত্র তিন থেকে চার দিনে। গুদাম ঘরে পণ্য পৌঁছে দেয়ার পর টাকা পরিশোধ করা হচ্ছে। ঈদ উপলক্ষে সিন্ডিকেট এখন বাকিতেও পণ্য সরবরাহ করছে। ভারতীয় মহাজনরাও বাকিতে কোটি কোটি টাকার শাড়ি, থ্রিপিস সরবরাহ করছে। এ ছাড়া লাগেজ ব্যবসায়ীরাও এসব পণ্য নিয়ে আসছে নির্বিঘ্নে।

রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, দিনাজপুর, নওগাঁ, জয়পুরহাটসহ উত্তরাঞ্চলের সীমান্ত পথে আসছে ভারতীয় ফেব্রিক্স, শাড়ি, বাচ্চাদের জামা-কাপড়, ধুতি, পাঞ্জাবির কাপড়, গেঞ্জি, শার্ট ইত্যাদি। আর ভারতীয় থ্রিপিসের বড় উৎসই হচ্ছে রাজশাহী অঞ্চলের বিভিন্ন সীমান্ত লাগোয়া পশ্চিমবঙ্গের বাজারগুলো। শিবগঞ্জের উজ্জ্বল নামের একজন চোরাকারবারী জানান, রোজা শুরুর আগেই রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলার শপিং মল থেকে চাহিদা জানিয়ে দেয়া হয়েছে সীমান্তের চোরাচালানি মোকামগুলোতে। তারা এখন এসব পণ্য বাস-ট্রাকে বা অন্য মাধ্যমে পাঠিয়ে দিচ্ছে।

জানা গেছে, সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে বিভিন্ন আমদানি পণ্যের সঙ্গে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে নিরাপদে আসছে ভারতীয় পোশাক। এছাড়া লাগেজ পার্টি প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ পোশাক আনছে। পাসপোর্টধারী এক শ্রেণীর চোরাকারবারী ভ্রমণের নামে ঘন ঘন ভারতে যাচ্ছে। তারা একদিন পরেই বড় বড় ব্যাগ ভর্তি করে ভারতীয় কাপড় নিয়ে ফিরছে। একজন ব্যাগেজ পার্টির সদস্য জানান, ভারতে গিয়ে একজন যাত্রী কয়েক লাখ টাকার মালামাল নিয়ে আসতে পারে। শুধু দুই পারের শুল্ক বিভাগ ও সীমান্তরক্ষীদের একটু ম্যানেজ করলেই কোনো সমস্যা হয় না। এসব পোশাক এনে সরাসরি ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়া হয়।

দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়েও শুল্ক ছাড়া ভারতীয় পোশাক আনছে চোরাচালানিরা। হিলি দিয়ে আসা বিভিন্ন কাপড় ট্রেনে খুব সহজেই রাজশাহীতে আসছে। আবার ঢাকায়ও যাচ্ছে। কয়েক মাস আগে রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে বিপুল পরিমাণ ভারতীয় কাপড় উদ্ধার করা হয়।

রাজশাহীর নিউমার্কেটের একজন পোশাক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে এরই মধ্যে রাজশাহীসহ বিভিন্ন জেলার বিপণি বিতানগুলো ভারতীয় পোশাকের দখলে চলে গেছে। গুণগত মান যাই হোক ভারতীয় পোশাক শুধু আকর্ষণীয় নামের কারণেই ক্রেতাদের বেশি আকর্ষণ করছে।’

কুমিল্লা জেলার ৫টি উপজেলার সীমান্তের অর্ধশতাধিক পয়েন্ট দিয়ে অবাধে দেশে আসছে ভারতীয় শাড়ি, থ্রিপিস, থান কাপড় ও কসমেটিকস সামগ্রী। শুধু কুমিল্লা ১০ বিজিবির অভিযানে গত ১০ মাসে ৯৪ কোটি ২৭ লাখ ৯২ হাজার ৬৫ টাকার বিভিন্ন ভারতীয় পণ্য আটক করা হয়।জানা যায়, জেলার আদর্শ সদর, বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, সদর দক্ষিণ ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় ১২৫ কিমি. এলাকাজুড়ে ভারত সীমান্ত। এর মধ্যে ১১ কিমি. এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া নেই। অন্য এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া থাকলেও চোরাকারবারীরা বিকল্প রাস্তা তৈরি করেছে। এসব এলাকা দিয়ে প্রতিদিনই অবাধে আসছে ভারতীয় ঈদপণ্য।

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাত যতো গভীর হয় এপার-ওপারের চোরাকারবারীদের মিলনমেলায় পরিণত হয় কুমিল্লার বিভিন্ন সীমান্ত। চলে বাংলা ও ভারতীয় রুপির লেনদেন। হুণ্ডি, বিকাশের মাধ্যমেও অর্থের লেনদেন হয়। ভারতের কিছু এলাকায় বাংলাদেশের মোবাইল নেটওয়ার্ক থাকায় চোরাকারবারীদের বিশেষ সিগন্যাল দেয়া হয় মোবাইলেই। স্থানীয় সিন্ডিকেটের সহায়তায় মালামাল লোড-আনলোড করার পর তা কাভার্ডভ্যান, ট্রাক, মাইক্রোবাস, অটোরিকশা, ভ্যান ও রিকশায় কাছের কিংবা দূরের গন্তব্যে পৌঁছে যায়। লোড-আনলোডের কাজে থাকে শিশু থেকে বৃদ্ধরাও। এছাড়া স্থানীয় প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের সঙ্গে বিজিবির সখ্য থাকায় চোরাই পথে ভারতীয় পণ্য আসা কমছে না। মাঝে মধ্যে বিজিবি, পুলিশ, ৱ্যাব ও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর অভিযান চালিয়ে কিছু মালামাল আটক করে। কিন্তু অধিকাংশ অভিযানেই মূলহোতা আটক হয় না।

এছাড়া নগরীর সব অভিজাত বিপণি বিতান এবং ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের বিপণি বিতানেও একটি সিন্ডিকেট পৌঁছে দেয় ঈদ পোশাক। নগরীর কান্দিরপাড় এলাকার আধুনিক মার্কেট সাত্তার খান কমপ্লেক্স, খন্দকার হক ম্যানশন, সমবায় মার্কেট, রেসকোর্স এলাকার ইস্টার্ন ইয়াকুব প্লাজাসহ অভিজাত বিপণি বিতানগুলোতে অবাধে বিক্রি হচ্ছে ভারতীয় বাহারি ডিজাইনের শাড়ি, থ্রিপিসসহ রকমারি পোশাক। এসব দোকানে দেশীয় কাপড়, থ্রি-পিস, টু-পিসসহ অন্যান্য কাপড় নেই বললেই চলে।

প্রায় দুশ কিলোমিটারজুড়ে কাঁটাতার বেষ্টিত সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাট। এ কাঁটাতার গলিয়েই দেদারসে আসছে ভারতীয় কাপড়। জেলার ৫ উপজেলার ২০টি পয়েন্টে সক্রিয় চোরাচালানিরা। কাঁটাতার পেরিয়ে আসা ভারতীয় কাপড় সাধারণত রংপুর নিয়ে পার্সেল করা হয়। তারপর পার্সেল সার্ভিস, বাসের লকার বা ট্রেনে তা ঢাকায় পাঠানো হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সীমান্ত এলাকার কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, ভারতীয় কাপড় কম দামে কিনে রাজধানীতে বেশ উচ্চ মূল্যে বিক্রি করা যায়। ঢাকার ইসলামপুরে কাটা কাপড় বা থান কাপড়ের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ভারতীয় টি-শার্ট যাচ্ছে কালীগঞ্জ বাজারে। শাড়ি, থ্রি-পিস যাচ্ছে ঢাকার নিউমার্কেট ও বঙ্গবাজারে। মাঝে মধ্যে পুলিশ বা বিজিবির অভিযানে ভারতীয় কাপড় উদ্ধার হলেও তা অতি সামান্য বলে জানান তারা।