দৈনিক মাথাভাঙ্গার আজ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

 

পঁচিশ পেরিয়ে আজ ছাব্বিশে পৌঁছুলো দৈনিক মাথাভাঙ্গা। যদিও মহাকালের কাছে ৯ হাজার ১২৫ দিন নিতান্তই নগণ্য। কাল-পুরুষ ভেদে? অবশ্যই অনেকগুলো দিন। দিনগুলো  কুম্ভঘুমে কাটালে কি চুয়াডাঙ্গা থেকে প্রকাশিত দৈনিক মাথাভাঙ্গা মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ কুষ্টিয়ার একাংশের পাঠকপ্রিয়তার শীর্ষে উঠে আঞ্চলিক সংবাদপত্রের স্বীকৃতি পেতো? দৈনিক মাথাভাঙ্গা পরিবারকে সজাগ রেখে প্রতিদিন দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়ার মতো যোগ্য করে তোলার কৃতিত্ব যে পাঠকূলেরই তা অনিস্বীকার্য। ফলে আজকের শুভক্ষেণ সকল পাঠককে দৈনিক মাথাভাঙ্গা পরিবারের পক্ষে কৃতজ্ঞচিত্তে সালাম, শুভেচ্ছা ও অভিভাবদন।

১৯৯১ সালের প্রথম দিকে একদল টগবগে তরুণের হৃদয়ে একটি দৈনিক সংবাদপত্র প্রকাশের স্বপ্ন দানাবাঁধে। ২৬ মার্চ প্রকাশিত হয় প্রস্তাবিত সংখ্যা। ছাড়পত্র নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নিয়মিত যাত্রা শুরু করে ১০ জুন। ২৫ বছর আগে আজকের এই দিনে যার যাত্রা শুরু, সে এখন পরিপূর্ণ তারুণ্যে ভরপুর। দিনটি মাথাভাঙ্গা পরিবারের কাজে স্মরণীয়ই শুধু নয়, বরণীয়ও।  সৃষ্টি সুখের উল্লাসে আজ মাতোয়ারা। যৌবনে পৌঁছুনোর আনন্দও ছড়িয়েছে আকাশে বাতাসে। পাঠককূলের হৃদয়ে? রঙের ছটা না ছড়িয়ে কি পারে? অসংখ্য পাঠক, শুভানুধায়ী এবং বিজ্ঞাপনদাতার অকৃত্রিম ভালোবাসা পেয়েছে বলেই এতোগুলো দিন সগৌরবে পেরিয়ে মহাকালের পথে শক্ত চিহ্নি রাখার হিম্মত দেখে মাথাভাঙ্গা পরিবার।

তখন সত্যিই যা ছিলো দুঃসহাস, তা এখন স্বীকৃত সাহসী যোদ্ধা। প্রতিষ্ঠা লগ্নের সেই ঘোষিত যুদ্ধের লক্ষ্য ছিলো সমাজে সচেতনতার আলো ছড়িয়ে কুসংস্কারের অন্ধকার তাড়ানো, দুর্নীতি অনিয়মের মাথাভাঙ্গার পাশাপাশি সন্ত্রাস তাড়িয়ে প্রগতির ছোঁয়ায় সুন্দর সমাজ গঠন। দৈনিক মাথাভাঙ্গা পরিবার এসবের কাতোটা পেরেছে, কতোটা বাকি তা বিচারের ভার সব সময়ই মাথাভাঙ্গার পাঠকূকলের ওপর। মাথাভাঙ্গা পরিবার পাঠককূলের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে দক্ষতার রায় পক্ষে পাওয়ার প্রত্যয় কাজ করে। সকলের মনের কথা বলতে গিয়ে শুধু শাসকদের শাসানি-ই নয়, নানান রক্তচক্ষুর রোষানলে পড়তে হয়েছে বহুবার, বহুভাবেই সহ্য করতে হয়েছে অসহনীয় যন্ত্রণাও। হয়রানি? সেটাও যেনে মাঝে মাঝে বারো মেসে হয়ে ওঠে। সব ঘেরাটোপ টপকে, বাঁধা বিপত্তি উতরে সত্য সুন্দরের পথে চলার সাহস পাঠককূল।

দৈনিক মাথাভাঙ্গা ২০০৭ থেকে অনলাইন সংস্কারণের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে প্রতিদিন। সে হিসেবে পত্রিকার পাঠকসংখ্যা বর্তমানে কতো লাখ? না, আমরা অন্যদের মতো ভাওতাবাজিতে বিশ্বাসী নই। মাথাভাঙ্গা’র পাঠকপ্রিয়তা কতোটা গভীরে, তা পাঠকদের সামনে নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না। কোনো রাজনৈতিক দলের গণ্ডিবদ্ধ না হয়ে সকলের মুখপত্রের গৌরব গায়ে মেখে সকলের কথা সঠিকভাবে বলতে চায় মাথাভাঙ্গা পরিবার। বস্তুনিষ্ঠতায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাতে ঘাটতি কিম্বা অন্যকোনো ত্রুটি? যতো দ্রুত সম্ভব তা স্বীকার করে নিজেদের সুধরে ভ্রান্তদূর করার বিষয়েও মাথাভাঙ্গা পরিবার সব সময়ই উদার। হিংসা-বিদ্বেষ? সব সময়ই মাথাভাঙ্গা পরিবার চায় সুস্থ ধারার প্রতিযোগিতা। বদলে প্রতিহিংসা পরায়ণতায় মেতে ওঠে ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত যেন ঘুরে ফিরেই সামনে এসে দাঁড়ায়। হৃদয়ে রক্তঝরায়। এতোকিছুর পরও দৈনিক মাথাভাঙ্গার অগ্রযাত্রায় সব সময়ই পাঠক, শুভানুধ্যায়ী ও বিজ্ঞাপনদাতাদের সর্বাত্মক সহযোগিতায় পত্রিকাটি ছাপা হয় নিজস্ব ছাপাখানায়। প্রধান কার্যালয়? সেটাও কয়েক মাস ধরে নিজস্ব স্থাপনায়।

কুসংস্কারের অন্ধকার তাড়িয়ে সুন্দর সমাজ গঠনের প্রত্যয়ে মাথাভাঙ্গার চলার পথ কখনই মসৃণ ছিলো না। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গেলে সে পথ কখনো মসৃণ হয়নি, হয় না। সেরকম আশা করাও অবান্তর। যে সময় প্রতিদিন চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ কুষ্টিয়ার মাটি ভিজতো রক্তে। পুলিশকে থাকতো হতো লাশ কুড়োনোর কাজে, সেই জনপদে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কলম ধরা কি চাট্টিশখানি কথা। যে সমাজে স্বপ্নের অজুহাতে বা ভূত-পেত্নী, জিন-পরীর নাম ভাঙিয়ে প্রতারণার দোকান খোলার হিড়িক ছিলো, সেই সমাজে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোটাও কম কথা নয়।

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত যাদের অক্লান্ত পরিশ্রম আর অকৃত্রিম ভালোবাসায় দৈনিক মাথাভাঙ্গা এগিয়ে যাচ্ছে তাদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা। প্রয়াত প্রধান সম্পাদক সাইফুল ইসলাম পিনু, পিনুপত্নী মমতাজ, সদরুল নিপুল, হাফিজ উদ্দীন মাস্টার, সাইদুল্লা আল সাহেদসহ যাদেরকে এহকাল থেকে বিদায় নিতে হয়েছে তাদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা। দৈনিক মাথাভাঙ্গার অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সকল পাঠক, শুভানুধ্যায়ী, বিজ্ঞাপনদাতার সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়ে আবারও সকলকে প্রতিষ্ঠাবাষির্কীর শুভেচ্ছা, সশ্রদ্ধ সালাম।