স্টাফ রিপোর্টার: সাভারের আশুলিয়ায় আলোচিত কমার্স ব্যাংকে ডাকাতি এবং আটজনকে হত্যার ঘটনায় ছয় জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালত। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হচ্ছে বোরহান উদ্দিন, সাইফুল ওরফে আল আমিন, মাহফুজুল ইসলাম ওরফে সুমন ওরফে জামিল, মো. জসিমউদ্দিন, মিন্টু প্রধান ও পলাশ ওরফে সোহেল রানা। এদের মধ্যে পলাশ পলাতক। ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ এসএম কুদ্দুস জামান গতকাল মঙ্গলবার এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে আসামি উকিল হাসানকে যাবজ্জীবন দণ্ড, আব্দুল বাতেন ও শাহজাহান জমাদ্দারকে তিন বছর করে কারাদণ্ড এবং মোজাম্মেল হক ও বাবুল সরদারকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে।
রায়ে বিচারক কুদ্দুস জামান বলেন, এই ঘটনা শুধু প্রকাশ্য দিনের আলোয় ডাকতি ছিলো না, বরং এটা ছিলো সুপরিকল্পিতভাবে আটজন বেসামরিক নাগরিককে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা। এর মধ্যে চারজনকে ব্যাংক কার্যালয়ের মধ্যেই কোনো প্রকার উসকানি বা প্রতিরোধ না হলেও নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। বিচার চলাকালে আসামিদের কাঠগড়ায় দেখার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বিচারক বলেন, আমি তাদের চেহারা, অভিব্যক্তিতে, আচরণে অনুশোচনার চিহ্ন দেখিনি। পরিস্থিতির চাপে পড়ে তারা এই ঘটনা ঘটায়নি। সে কারণে সাক্ষ্য ও নথিপত্র পর্যালোচনা করে তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়াই উপযুক্ত মনে করছি। অমানবিক ও নিষ্ঠুরভাবে আটজন নির্দোষ মানুষকে হত্যার জন্য একটি নজির সৃষ্টি করা দরকার। অন্যদের জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপনে এ রকম দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়াই যুক্তিযুক্ত।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালের ২১ এপ্রিল আশুলিয়ার জামগড়া বাজারে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ডাকাতদের গুলি ও চাপাতির আঘাতে ব্যাংক ম্যানেজার অলিউল্লাহসহ আটজন নিহত হন। ডাকাতরা ছয় লাখ ৮৭ হাজার ১৯৩ টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় বোরহানউদ্দিন ও সাইফুল নামের দুই ডাকাতকে জনতা হাতেনাতে ধরে পিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে। গণপিটুনি দেয়া ওই দুজনের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে বাবুল সরদার ও মিন্টু প্রধানকে আটক করে পুলিশ। জঙ্গি অর্থায়নে তহবিল গঠনের জন্য এ ডাকাতি করা হয় বলে গ্রেফতারকৃতদের জবানবন্দিতে উঠে আসে। গ্রেফতার ১০ আসামির মধ্যে জেএমবির সাত সদস্য দোষ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। ২০১৫ সালের ১ ডিসেম্বর ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত। মামলার ৯৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ৬৪ জন আদালতে সাক্ষ্য দেন। সাক্ষ্যগ্রহণের পর গত ২৫ মে আসামিদের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায়ের জন্য এই দিন ধার্য করে দেয়। ধার্যকৃত দিনে আসামিদের মধ্যে পলাশ বাদে অন্য ১০ জনকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। দুপুরে জনাকীর্ণ আদালতে রায় ঘোষণা করা হয়। রায় ঘোষণার সময় নিহত ব্যক্তির স্বজন ও ভুক্তভোগীরা আদালতে হাজির ছিলেন। তারা রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
এদিকে ঘটনার এক বছরের মাথায় ২৮ কার্যদিবসে মামলার রায় ঘোষণায় সন্তোষ প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আব্দুল মান্নান বলেন, খুব দ্রুত এই মামলার রায় হলো। অন্য মামলাগুলোর ক্ষেত্রেও এ রকম হওয়া উচিত। রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে বলে জানান আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহমেদ।