কোহলিদের হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন মুস্তাফিজের হায়দরাবাদ

 

মাথাভাঙ্গা মনিটর: শেষ বলে ব্যাটসম্যান স্কুপ শটে বল পাঠালেন বাউন্ডারিতে। কিন্তু বলের দিকে তাকায় কে! বলটি হতেই ডানা মেলে দিলেন ডেভিড ওয়ার্নার। মাঠের সব প্রান্ত থেকে মাঝে ছুটে এলেন বাকিরাও। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আনন্দবৃত্ত গড়ে চললো জয়নৃত্য। সানরাইজার্স হায়দরাবাদের শিরোপা জয়ের উৎসব! প্রথমবার ফাইনালে উঠেই আইপিএলের শিরোপা জিতলো হায়দরাবাদ। চারশ রান ছাড়ানো ফাইনালে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুকে ৮ রানে হারিয়েছে ওয়ার্নারের দল। তিন বার ফাইনাল খেলেও শিরোপা অধরা থাকলো বেঙ্গালুরুর। হায়দরাবাদের ২০৮ রানের জবাবে বিরাট কোহলির দল লড়াই করেছে শেষ পর্যন্ত; তবে পেরে ওঠেনি। আটকে গেছে ২০০ রানে। মহাতারকাদের ছাপিয়ে ফাইনালের মূল নায়ক অন্য একজন। ব্যাট হাতে দুর্দান্ত এক ইনিংসে বেঙ্গালুরুর বোলারদের কচুকাটা করেছেন বেন কাটিং। অস্ট্রেলিয়ার এই অলরাউন্ডার পরে বল হতে নিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ দুটি উইকেট। দল জিতলেও মুস্তাফিজুর রহমানের পারফরম্যান্স অবশ্য দারুণ কিছু ছিলো না। প্রথম ওভারটি পাওয়ার প্লেতে করে গেইল-কোহলিদের সামনে দিয়েছিলেন মাত্র ৪ রান। পরের তিন ওভারে গুনেছেন ৩৩ রান। তবে শেষ দিকে পেয়েছেন শেন ওয়াটসনের গুরুত্বপূর্ণ উইকেটটি। প্রথম আইপিএল অভিযান শেষ করলেন মুস্তাফিজ ১৬ ম্যাচে ১৭ উইকেট নিয়ে। ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন ৬.৯০। মাঠ যতোই ছোট হোক বা উইকেট যতোই হোক ব্যাটিং বান্ধব, ২০৯ রান তাড়া সহজ নয় কখনোই। ফাইনালে তো সঙ্গী আরও বাড়তি চাপ। কিন্তু বেঙ্গালুরুর শুরুর ব্যাটিংয়ে ছিলো না সেই চাপের ছিটেফোঁটা। টুর্নামেন্টের শেষ দিকে এসে নিজেকে ফিরে পাওয়া গেইল সেরাটা জমা রেখেছিলেন ফাইনালের জন্যই। শুরু থেকেই তুলেছেন ঝড়। আরেকপাশে টাইমিং ঠিকমতো পাচ্ছিলেন না দেখে বিরাট কোহলি দিয়ে গেছেন সঙ্গ। বেন কাটিংকে ছক্কা মেরে ২৫ বলে যখন অর্ধশতক করলেন গেইল, কোহলির রান তখন মোটে ১০। পরে হাত খোলেন কোহলিও। ১০ ওভার শেষে বেঙ্গালুরুর রান বিনা উইকেটে ১১২! গেইলের বিদায়ের পরই বদলে যায় দৃশ্যপট। কাটিংয়ের অফ কাটার গেইলের ব্যাটের কানা ছুঁয়ে চলে যায় থার্ডম্যানের হাতে। ৮ ছক্কায় ৩৮ বলে গেইল করেন ৭৬। রান রেট তখন নাগালের মাঝেই, উইকেটে কোহলি। তখনও ফেবারিট বেঙ্গালুরুই। কিন্তু রান বাড়াতে গিয়েই বারিন্দর স্রানের বল স্টাম্পে টেনে আনলেন বেঙ্গালুরু অধিনায়ক। ৩৫ বলে করেছেন ৫৪। টুর্নামেন্ট শেষ করলেন রেকর্ড ৯৭৩ রানে। বেঙ্গালুরুর আশা হয়ে তখনও ছিলেন এবি ডি ভিলিয়ার্স। তবে বেঙ্গালুরুর কোয়ালিফায়ার জয়ের নায়ক ফাইনালে পারেননি। আউট হয়েছেন বাঁহাতি স্পিনার বিপুল শর্মাকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে (৫)। গেইলের পর কাটিং দারুণ এক স্লোয়ারে বোল্ড করেছেন লোকেশ রাহুলকে (১১)। তারপরও যিনি পারতেন, সেই ওয়াটসন ধরা পড়েছেন মুস্তাফিজের স্লোয়ারে। আরেকটি উইকেট পেতে পারতেন মুস্তাফিজ। কিন্তু তার বলে ক্রিস জর্ডানের সহজ ক্যাচ ছাড়েন স্রান। বড় কোনো ক্ষতি তাতে হয়নি। চেষ্টা করেও পারেননি শচিন বেবি (১০ বলে ১৮*)। বেঙ্গালুরু থেমেছে দুশ ছুঁয়েই। হায়দরাবাদকে বড় রানের ভিত্তি গড়ে দিয়েছিলো উদ্বোধনী জুটি। ওয়ার্নার ও ধাওয়ান ইনিংসের শুরুতে গড়েন ৪০ বলে ৬৪ রানের জুটি। ২৫ বলে ২৮ করে ফেরেন ধাওয়ান। প্রথম ৪ ওভারে বেশি স্ট্রাইক পাননি ওয়ার্নার। পঞ্চম ওভার থেকে তোলেন ঝড়। আউট হয়েছেন ৩৮ বলে ৬৯ রান করে। কোহলির মতো আলোচিত না হলেও অসাধারণ এক টুর্নামেন্ট কাটালেন ওয়ার্নারও। ১৭ ইনিংসে ৯টি অর্ধশতক, টুর্নামেন্ট শেষ করলেন ৮৪৮ রান নিয়ে! চারে নেমে ২৩ বলে ৩৮ করেছেন যুবরাজ। দ্রুত কয়েকটি উইকেট হারানোয় এক পর্যায়ে খানিকটা থমকে গিয়েছিলো রানের গতি। সেই গতিতে তুমুল জোয়ার আনেন বেন কাটিং। ইনিংসের শেষ দিকে বেঙ্গালুরুর বোলারদের কচুকাটা করেছেন কাটিং। ৪টি ছক্কা ও ৩ চারে অপরাজিত ছিলেন ১৫ বলে ৩৯ রানে। শেন ওয়াটসনের করা ইনিংসের শেষ ওভার থেকেই ৩ ছক্কায় নিয়েছেন ২৪ রান। একটি ছক্কায় বল আছড়ে ফেলেছেন স্টেডিয়ামের বাইরে! শেষ ৩ ওভারে হায়দরাবাদ তোলে ৫২ রান। ওয়াটসনের ৪ ওভার থেকে রান আসে ৬১! শেষ পর্যন্ত সেই শেষের ঝড়ই গড়ে দিয়ছে ব্যবধান। হায়দরাবাদের জয়োৎসব দীর্ঘায়িত হয়েছে ম্যাচ শেষের অনেক পরও। সেই উৎসবে স্বতঃস্ফুর্ত উপস্থিতি হাস্যোজ্জ্বল মুস্তাফিজের।