শিক্ষার্থীদের বিড়ম্বনার দায় কে নেবে?

 

জটিলতা নিরসনে অনলাইনের মাধ্যমে কলেজে ভর্তির উদ্যোগ নেয়া হলেও নানামাত্রিক জটিলতার কবলে পড়েছে এ প্রক্রিয়া। গত বছর ভর্তির ক্ষেত্রে অনলাইন চালুর পর থেকেই একের পর এক সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। দুঃখজনক বাস্তবতা হলো এ বছরও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, এসএমএসের মাধ্যমে ফি পরিশোধের ক্ষেত্রে কোনো ‘রেসপন্স’ পাচ্ছেন না শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ এবং ভর্তি কার্যক্রমের কারিগরি সহযোগিতা দেয়া বুয়েট সংশ্লিষ্টরা বলছেন ‘যথেষ্ট হিট পড়লেও’ সার্ভারে কোনো সমস্যা নেই, কিন্তু টেলিটক পেমেন্টে দেরি হচ্ছে। অন্যদিকে টেলিটকের সাথে কথা বলে দায়িত্বশীলমহল শিগগিরই জটিলতা কেটে যাবে বলে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছেন। এর পরও নির্দিষ্ট সময়ে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পাদন নিয়ে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবক উভয়েই শঙ্কায় রয়েছেন। শিক্ষার্থী ভর্তির এ বিড়ম্বনা অবিলম্বে নিরসন হওয়া জরুরি।

বলার অপেক্ষা রাখে না, একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি একজন শিক্ষার্থীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ। কারণ এই ধাপটি সফলতার সাথে অতিক্রমের ওপরই নির্ভর করে তার আগামী। কিন্তু উচ্চশিক্ষা গ্রহণের প্রাথমিক ধাপেই যদি এ ধরনের জটিলতার কবলে পড়তে হয় তবে তা তাদের জন্য নিশ্চয়ই হিতোকর হবে না। গত বছরের মতো এবারো সামনে এসেছে কারিগরি ত্রুটিসহ ও দুর্বল ব্যবস্থাপনার বিষয়টি। উদ্ভূত সমস্যার সমাধান কীভাবে হবে এর কোনো নিশ্চয়তা না থাকায় ইতোমধ্যে অনেকেই হতাশা প্রকাশ করেছেন। আবার পুরো বিষয়টিকে নিয়ন্ত্রণ করতে কোনো ধরনের অস্বচ্ছতা রয়েছে কি-না এমন আশঙ্কাও একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। সে ক্ষেত্রে প্রক্রিয়াটি নতুন বিতর্কের সূত্রপাত ঘটাবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। সুতরাং বিষয়টি যে গুরুতর তা সহজেই অনুমেয়।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন টেলিটক টাইম কমানো নিয়ে কাজ করছে। কিছুক্ষণের মধ্যে এটা ঠিক হয়ে যাবে। এরপরও একই সমস্যায় পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রতিটি ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার আবশ্যকতা নিশ্চয়ই রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রেও এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু প্রক্রিয়াটি হতে হবে স্বচ্ছ এবং কোনো বিড়ম্বনা ছাড়াই শিক্ষার্থীরা যাতে এটি সম্পাদন করতে পারে সে ব্যবস্থা করা। ফলে দায়িত্বশীলদের আরো যত্নশীল হওয়ার প্রশ্নটিই সামনে চলে আসে। আর বর্তমানে শিক্ষার্থীদের এই বিড়ম্বনার কারণে সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতা স্পষ্ট। এতে শিক্ষার্থীরা যে ক্ষতির শিকার হচ্ছে, তাতে প্রশ্ন ওঠা অমূলক নয়, এই বিড়ম্বনার দায় কে নেবে? শুধু যে শিক্ষার্থীরাই বিভ্রান্ত হচ্ছে তা নয় পুরো প্রক্রিয়াটিই এতে বিতর্কিত হয়ে পড়েছে। সুতরাং এসব বিষয়ের সুরাহা হওয়া দরকার।

স্মর্তব্য যে, ভর্তির ক্ষেত্রে সনাতনী পদ্ধতি ছেড়ে অনলাইন পদ্ধতি চালু অর্থ হলো ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে আরেক ধাপ এগিয়ে যাওয়া। কিন্তু তা যে এতো দুর্ভোগের কারণ হবে, আগে বোঝা যায়নি। গত বছর অনলাইন ভর্তির শুরু থেকে ফল প্রকাশ পর্যন্ত একই অবস্থায় পড়েছিলো শিক্ষার্থীরা। দেরিতে ফল প্রকাশ হলেও তাতে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর পছন্দের প্রতিফলন ঘটেনি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পছন্দের তালিকায় প্রথম ও দ্বিতীয় অবস্থান বাদ দিয়ে তৃতীয় পছন্দের প্রতিষ্ঠানের জন্য অনেককে বাছাই করা হলেও দেখা গেছে সে প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর পছন্দের বিষয় পড়ানোই হয় না। কিন্তু অনলাইনে তা দেখানো হয়েছে এবং শিক্ষার্থী বিষয় ও প্রতিষ্ঠান পছন্দ করে আবেদনও করেছেন। এতে অভিযোগ উঠেছিলো সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বহীনতা নিয়েও। লাখ লাখ শিক্ষার্থী ভর্তির মতো একটি বিশাল কর্মযজ্ঞের ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা কেন এতো উদাসীন তাও ভাবনার বিষয়। নতুন এবং প্রযুক্তির সাথে সম্পর্কিত একটি প্রক্রিয়া এতো হেলাফেলার হতে পারে, ভাবা যায় না।

বলতে চাই, গত বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে এ বছর অনলাইন ভর্তি প্রক্রিয়া আরো স্মার্ট হওয়ার প্রয়োজন ছিলো। লাখ লাখ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যতের প্রশ্নে ‘স্মার্ট অ্যাডমিশন সিস্টেম’ লেজেগোবরে অবস্থায় পতিত হলে তা অত্যন্ত পরিতাপেরই জন্ম দেয়। ফলে সিস্টেমের বিড়ম্বনা দূরীকরণে সংশ্লিষ্টরা আরো সজাগ হবেন এটাই প্রত্যাশা।

 

Leave a comment