সহিংসতা নিয়েই পঞ্চম ধাপের ভোট আজ : গোলাগুলিতে নিহত ২

 

স্টাফ রিপোর্টার: সহিংসতা নিয়েই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) পঞ্চম ধাপের ভোটগ্রহণ হচ্ছে আজ। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ৭১৭ ইউপিতে টানা ভোটগ্রহণ চলবে। তৃণমূলের সবচেয়ে জনপ্রিয় এ ভোট উৎসবে অংশ নিচ্ছেন দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। ভোটকে কেন্দ্র করে কয়েকটি স্থানে সহিংসতা ও গোলাগুলির খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় দুজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অনেকে। গ্রাম-গঞ্জের এ নির্বাচনে লড়াই হবে মূলত প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীদের মধ্যে। ভোটপ্রিয় জনগণ একে উৎসব হিসেবে নিচ্ছে। তবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের সাংঘর্ষিক অবস্থান সাধারণ মানুষের মাঝে উৎকণ্ঠা ও শঙ্কার জন্ম দিয়েছে। কয়েকদিন থেকে দফায় দফায় বিভিন্ন ইউপিতে দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেই চলেছে। গতকাল ভোটের আগের দিনেও নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পুরুলিয়া ইউপিতে আওয়ামী লীগের দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকের মধ্যে গোলাগুলি হয়েছে। এতে বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকের হামলায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ১০ সমর্থক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এ উপজেলায় নির্বাচনী সংঘাতে বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থীর এক আহত সমর্থক মারা গেছেন। এছাড়া কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় নির্বাচনী বিরোধের জেরে এক হোটেল ব্যবসায়ীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, পঞ্চম ধাপে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী রয়েছেন ৩ হাজার ২৫৪ জন। এর মধ্যে ১৫টি দলের প্রার্থী ১ হাজার ৭২৭ আর স্বতন্ত্র ১ হাজার ৫২৭ জন। এ ধাপে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নৌকা প্রতীকের ৪১ প্রার্থী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। প্রায় সব ইউপিতে প্রার্থী রয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। ১০০ ইউপিতে প্রার্থী নেই বিএনপির। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির ১৭৭, জাসদের ২১, বিকল্পধারার ২, ওয়ার্কার্স পার্টির ১৩, ইসলামী আন্দোলনের ১২২, জেপির ২, ইসলামী ফ্রন্টের ১১, এলডিপির ৬, সিপিবির ৫, জেএসডির ১, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের ৭, অন্য দলের কয়েকজন প্রার্থী রয়েছেন। এদিকে বৃহস্পতিবার ৱ্যাব, পুলিশ, কোস্টগার্ড, আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা টহল শুরু করেছেন। তারা থাকবেন ভোটের পরদিন পর্যন্ত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে রয়েছেন নির্বাহী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। গতকাল ভোটগ্রহণের জন্য বিশেষ নিরাপত্তায় জেলা থেকে কেন্দ্র কেন্দ্রে ব্যালট বক্স, পেপারসহ নির্বাচনী সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে। এ নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টায়। তাই এদিন ভোর থেকেই গ্রাম-পাড়া-মহল্লায় ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটেছেন চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্য প্রার্থীরা। স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে এবারই প্রথম চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে ভোট হচ্ছে। ইসির কর্মকর্তারা বলেছেন, ভোট সামনে রেখে সব ধরনের অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ডিসি-এসপি-রিটার্নিং অফিসারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

প্রচার-প্রচারণা শেষ: ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখা জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে বন্ধ হয়েছে নির্বাচনী প্রচার। ভোট শুরুর ৩২ ঘণ্টা আগে সব ধরনের প্রচার, সভা-সমাবেশ ও শোডাউন নিষিদ্ধ করা হয়। ভোটের পর ৪৮ ঘণ্টার আগে কোনো মিছিল করা যাবে না।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঠে: গোলযোগ-সহিংসতার মধ্যে স্থানীয় পর্যায়ের দলীয় এ নির্বাচনে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বৃহস্পতিবারই মাঠে নেমেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশনাসংক্রান্ত পরিপত্র জারি করা হয়েছে। প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে ২০ জন করে নিরাপত্তা সদস্য নিয়োজিত থাকছেন। ভোটের আগের দুই দিন থেকে ভোটের পরদিন পর্যন্ত চার দিন থাকবেন তারা। ইসি কর্মকর্তারা জানান, ইউপি ভোটের নিরাপত্তা পরিকল্পনায় উপজেলাভিত্তিক মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে তিন প্লাটুন করে বিজিবি রাখা হয়েছে। সঙ্গে থাকছে ৱ্যাবের তিনটি টিমও। প্রতি ইউনিয়নে পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসার সমন্বয়ে একটি করে মোবাইল এবং স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকছে। ভোটের পরিবেশ নির্বিঘ্ন করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ও বিধি লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

শঙ্কায় প্রার্থীরা: ইউপিতে ভোট কেন্দ্র দখলের শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিএনপি ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। প্রায় প্রতিটি ইউপিতেই বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা এ শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এ ছাড়া স্বতন্ত্র ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরাও সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। সম্প্রতি অনেক প্রার্থী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে সুষ্ঠু ভোট গ্রহণের ব্যবস্থা নিতে অনুরোধও জানিয়েছেন।

যান চলাচল বন্ধ: পঞ্চম ধাপের ইউপি ভোট উপলক্ষে বুধবার থেকে নির্বাচনী এলাকায় মোটরসাইকেল চালানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা চলছে। এ নিষেধাজ্ঞা থাকবে আজ মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত। এ ক্ষেত্রে ভোট গ্রহণের পূর্ববর্তী তিন দিন আগে থেকে ভোটের দিন মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত মোটরসাইকেল চালানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি রাখতে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়কেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গতকাল রাত ১২টা থেকে আজ মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত বেবিট্যাক্সি, অটোরিকশা, ইজিবাইক, ট্যাক্সিক্যাব, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ, কার, বাস, ট্রাক, টেম্পো প্রভৃতি যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমতিসাপেক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী/তাদের নির্বাচনী এজেন্ট, সাংবাদিক, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকের (পরিচয়পত্র থাকতে হবে) ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা শিথিল থাকবে।

উল্লেখ্য, ছয় ধাপে ৪ হাজার ২৭৯ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করেছে ইসি। ২২ মার্চ প্রথম, ৩১ মার্চ দ্বিতীয়, ২৩ এপ্রিল তৃতীয়, ৭ মে চতুর্থ ধাপের ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। আজ ২৮ মে পঞ্চম ধাপের ভোট গ্রহণ হচ্ছে। এ ছাড়া ৪ জুন শেষ ধাপে ৬৬০টি ইউপিতে ভোট হওয়ার কথা।

বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা: গতকালও বেশ কয়েকটি স্থানে নির্বাচনী সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো বিবরণ নড়াইল: কালিয়া উপজেলার পুরুলিয়া ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গতকাল আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আমিরুল ইসলাম মনির সমর্থকদের হামলায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী এস এম হারুনার রশীদের ১০ সমর্থক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। সকাল ৯টার দিকে পুরুলিয়া মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। গুলিবিদ্ধরা হলেন সরফরাজ, হুমায়ুন, জিল্লুর, ওমর, আকসির, ফুরকান, শরফু, আবদুল্লাহ, সাইফুল শেখ ও জাকির শেখ। এ ছাড়া ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় উভয় পক্ষের আরও পাঁচজন আহত হয়েছেন। এদিকে বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ভোমবাগ এলাকায় কুপিয়ে আহত করা বিদ্রোহী প্রার্থী গোলাম মোহাম্মদের সমর্থক কাশেম শেখ (৪০) গতকাল সকালে মারা গেছেন। তাকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শেখ ফিরোজ আহমেদের সমর্থকরা দা দিয়ে কুপিয়ে জখম করেছিলেন। নিহত কাশেম বিষ্ণুপুর গ্রামের চান শেখের ছেলে।