মেহেরপুরের গাংনী-বামন্দী বৈদ্যুতিক নতুন লাইন স্থাপন ভুল নকশায় শ শ গাছের জীবন বিপন্ন

 

মাজেদুল হক মানিক: সরকার যখন বৃক্ষ রোপণে নানাভাবে দেশের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করছে ঠিক সেই সময়ে মেহেরপুর গাংনীতে বৈদ্যুতিক লাইন স্থাপনের জন্য গাছের জীবন বিপন্ন। লাইনের তার টানতে গিয়ে কেটে ফেলা হচ্ছে বড় বড় গাছের ডালপালা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে গোড়া থেকে কাটতে হবে পরিবেশের ভারসম্য রক্ষাকারী এসব বৃক্ষ। গাছ না কেটে লাইন স্থাপনের সুযোগ থাকলেও নকশা তৈরির সময় বৃক্ষ রক্ষার বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া হয়নি। তাই ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে এলাকাবাসীর মাঝে।

মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গাংনী উপকেন্দ্র (সাব স্টেশন) থেকে বামন্দী উপকেন্দ্র পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার ৩৩ কেভি নতুন লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। এ লাইন নির্মাণ হলে গাংনী ও বামন্দী এলাকার মধ্যে বৈদ্যুতিক সম্পর্ক উন্নয়ন হবে। ইতোমধ্যে খুঁটি পোতার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখন চলছে তার টাননোর কাজ। মেহেরপুর-কুষ্টিয়া প্রধান সড়ক ঘেষে এসব খুঁটি স্থাপন করা হয়েছে। গাংনী থেকে বামন্দী পর্যন্ত সড়কের দু পাশে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির বিপুল সংখ্যক গাছগাছালী। জেলা পরিষদ দীর্ঘদিন ধরে এখানে বৃক্ষ রোপণ করে আসছে। এছাড়াও স্থানীয়দের হাতে লাগানো বেশ কিছু শতবর্ষী বট পাকুড় গাছ রয়েছে। এগুলোর ওপর দিয়ে আবার কোনোটির পাশ ঘেষে বৈদ্যুতিক তার যাচ্ছে তাই শুরু হয়েছে ডালপালা নিধন।

জোড়পুকুরিয়া বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, বাজারে ওপরে রয়েছে শতবর্ষী পাকুড় গাছ। এর ছায়াতলে বিশ্রাম করেন অসংখ্য পথিক। যাত্রীরাও পরিবহনের অপেক্ষায় পাকুড় গাছের ছায়াতলে অপেক্ষা করেন। এ গাছ ঘিরেই বাজার সৃষ্টি। শতবর্ষী এসব বৃক্ষ বাজারের দোকানপাট ঝড় থেকে রক্ষা করে। বৈদ্যুতিক খুঁটি এই গাছ ঘেষে পুতে দেয়ায় গাছের জীবন এখন বিপন্ন। খুঁটি পুঁততে গিয়ে গাছের কয়েকটি ডাল কেটে ফেলা হয়েছে। তার টানানোর সময় গাছের প্রায় ৭০ ভাগ ডালপালা কাটা পড়বে। এতে গাছটি মেরে ফেলা ছাড়া উপায় থাকবে না। বিষয়টির প্রতিবাদ করলেও খুঁটি স্থাপনকারী কিংবা পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ কর্ণপাত করছে না।

জোড়পুকুরিয়া বাজারের মতই পূর্ব মালসাদহ, ফতাইপুর, তেরাইল, মুন্দা ও অলিনগর গ্রামসহ আশেপাশের মাঠগুলোতে সড়কের পাশে প্রচুর গাছ কাটতে হবে। এ সড়কের দুপাশে বট, পাকুড়, মেহগনি, ইপিল ইপিল, রেইনট্রি কড়ুই, শিশু, আম, কাঠালসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রয়েছে। সড়কের পাশে গাছের সারি দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। পথচারীরা পাচ্ছেন ছায়া। বেঁচে থাকার জন্য মিলছে পর্যাপ্ত অক্সিজেন। গাছ থেকে নানাভাবে উপকৃত হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ব্যক্তি মালিকানায় লাগানো গাছ যত্রতত্র কাটা হলেও সড়কের পাশের গাছ পরিবেশের ভারসম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই শুধুমাত্র বিদ্যুতের লাইন স্থাপন করতে গিয়ে এতোগুলো গাছের ক্ষতি সাধনের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মাঝে। বিষয়টি নিয়ে আন্দোলনের কথাও ভাবছেন পরিবেশবাদী কয়েকটি সংগঠনের কর্মীরা।

যেখানে খুঁটি স্থাপন করা হয়েছে তা সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গা। গাছগুলোর ক্ষতি না করেই খুঁটি স্থাপন করা সম্ভব ছিলো। লাইন নির্মাণের নকশা তৈরির সময় যদি খুঁটিগুলো রাস্তা থেকে আরো কয়েক হাত সরিয়ে দেয়া হতো তাহলে একটি গাছও কাটা পড়তো না। কিন্তু সড়ক থেকে আরো দুরে খুঁটি স্থাপনের সুযোগ থাকলেও সড়কের কোল ঘেষে কেন স্থাপনের নকশা করা হয়েছিলো তার সদুত্তোর মেলেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে।

এ বিষয়ে মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গাংনী জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) রমেন্দ্র চন্দ্র রায় জানান, গাছের মধ্যে যেভাবে খুঁটি স্থাপন করা হচ্ছে তাতে সমস্যায় পড়বেন তারা। লাইন চালু হলে এতগুলো গাছের ডালপালা কেটে-ছেটে লাইন রক্ষনাবেক্ষণ করা দুরুহ হয়ে পড়বে। লাইন স্থাপনে প্রকৌশলী উপদেষ্ট লি. এর দায়িত্বপ্রাপ্তরা হটকারী সিদ্ধান্তে নকশা করেছেন বলেও মনে করেন তিনি।

সূত্রমত্রে প্রকৌশলী উপদেষ্টা লি. লাইন নির্মাণের নকশা তৈরি করলেও তা অনুমোদন দেয় পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। আরইবি মেহেরপুর আর.ই থেকে নকশাটি কুষ্টিয়া নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে প্রেরণের পর তা অনুমোদন ও ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। তাহলে মেহেরপুর আর.ই অফিস কেন নকশাটি না দেখেই অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করে, নাকি দায়িত্বের গাফলতিতে এতগুলো গাছের জীবন আজ বিপন্ন হচ্ছে সে প্রশ্ন এখন এলাকার সচেতন মানুষের মুখে মুখে।

যোগাযোগ করা হলে মেহেরপুর আর.ই কুমারেশ বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তার কাছে বিষয়টির কোনো সঠিক উত্তর মেলেনি। তবে বিষয়টি সরজমিন দেখে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বস দিলেন গাছের মালিকানা প্রতিষ্ঠান মেহেরপুর জেলা পরিষদ প্রশাসক অ্যাড. মিয়াজান আলী।

স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ও পরিবেশবাদী সংগঠনের কর্মীদের মাঝে বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ দানা বেঁধে উঠেছে। যারা লাইন নির্মাণের নকশা তৈরি করেছেন তাদের মাথায় গাছ রক্ষার বিষয়টি কেন আসেনি তা ভেবে পাচ্ছেন না এলাকাবাসী। তাই বন ও পরিবেশ মন্ত্রণনালয়সহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হক্ষক্ষেপে বিষয়টির সুরাহা দাবি করেছেন এলাকাবাসী।