ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক দাবি
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহ সদর ও শৈলকুপার ২১টি ইউনিয়নের নির্বাচনে সরকার দলীয় লোকজন রামদা ও হাতুড়ি নিয়ে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি-ধামকি, পোলিং এজেন্ট দিতে বাধা, ভোটকেন্দ্র দখলের হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে জেলা বিএনপি। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী ২৮মে’র নির্বাচন বর্জন করতে বাধ্য হবে বলেও জানান বিএনপি নেতারা। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবে জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এসব অভিযোগ করেন দলের সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল মালেক।
সাংবাদিক সম্মেলনে বিএনপি নেতারা অভিযোগ করে বলেন, ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে প্রার্থীদের নিয়ে নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভা হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে হরিণাকুণ্ডু উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল হান্নান মোল্লাকে হত্যার উদ্দেশে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে পঙ্গু করে দিয়েছে।
হরিণাকুণ্ডুর নবনির্বাচিত আওয়ামী লীগের সকল চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে সন্ত্রাসী মহড়া চালানো হচ্ছে। বিএনপির সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট কেন্দ্রে যেতে নিষেধ করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে ভোট কেন্দ্রে গেলে পরের দিন লাশ পড়ে যাবে। এ অবস্থায় হরিণাকুণ্ডুর চাঁদপুর ইউনিয়নের ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সাগান্না ইউনিয়নে ৪টি মাইক্রোবাস নিয়ে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতা বিএনপি প্রার্থী ও নেতা-কর্মীদের ভোট কেন্দ্রে গেলে হাত-পা ভেঙে ফেলার হুমকির পাশাপাশি মা-বাপ তুলে গালি-গালাজ করছে। সাগান্না ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শাহজান সিরাজের ছেলেকে মারধর করা হয়েছে। ক’বছর আগে শাহজান সিরাজকে হত্যা করা হলেও এখনো পরিবারটি বিচার পায়নি।
কুমড়াবাড়িয়া ইউনিয়নে জেলা আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতা সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করছে এবং নিজে ধানের শীষের প্রচার মাইকের রেকর্ডিং কেড়ে নিয়েছে। ওই ইউনিয়নে নৌকার সন্ত্রাসী বাহিনীর কাছে ভোটাররা জিম্মি হয়ে পড়েছে। মহারাজপুর ইউনিয়নে ধানের শীষের প্রচার প্রচরণা বন্ধ করার জন্য আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ মাইকে ঘোষণা দিয়ে সময় বেঁধে দিয়েছে এবং ধানের শীষের ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য হুমকি দেয়া হয়েছে। বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী খুরশিদ আলমকে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তেতুলতলা বাজারে আ.লীগ সভা আহ্বান করে ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে না যেতে হুমকি দিয়েছে। বুধবার ধানের শীষের মাইক ছিনিয়ে নেয় নৌকার সমর্থকরা।
মধুহাটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর নৌকা বিদ্রোহী প্রার্থীদের সমর্থকরা পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় উল্টো বিএনপির ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। অথচ পত্রিকায় রিপোর্ট বেরিয়েছে নৌকায় আগুন দিয়েছে নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকরা। মিথ্যা মামলার কারণে বিএনপির সমর্থকরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। সাধুহাটি ইউনিয়নে ধানের শীষের ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য হুমকি দেয়া হচ্ছে। সাধুহাটী, ডাকবাংলা, বংকিরাসহ বিভিন্ন বাজারে মটরসাইকেল ও মাইক্রোবাসে করে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী পাঠিয়ে নৌকায় ভোট না দিলে ভোটের পর ঠ্যাং ভেঙে ফেলার হুমকি দেয়া হচ্ছে।
হলিধানি ইউনিয়নে ধানের শীষের প্রচার মাইক বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। প্রার্থীকে জীবন নাশের হুমকি দেয়া হচ্ছে। তাকে প্রচার প্রচরণা চলাতে দেয়া হচ্ছে না। গান্না ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থীর সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে ভোটাররা অতিষ্ট হয়ে পড়েছে। ধানের শীষের কোন প্রতীক টাঙ্গাতে দেয়া হচ্ছে না। ইতিমধ্যে স্বতন্ত্র এক প্রার্থীকে এলাকা ছাড়া করা হয়েছে। গান্না, বেলেখাল, শৈলমারী, চন্ডিপুর, বেতাইসহ বিভিন্ন বাজারে প্রচার প্রচারণা চালাতে বাধা দেয়া হচ্ছে। পথে পথে লাঠি নিয়ে মহড়া দিচ্ছে নৌকার সমর্থকরা। আ.লীগের নেতারা রামদা হাতে নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট কেন্দ্রে না যেতে হুমকি দিচ্ছে। চন্ডিপুর গ্রামের বিএনপি কর্মী কামাল ও জাহাঙ্গীরকে এলাকার সন্ত্রাসী কামরুল মীর ডেকে নিয়ে মারধর করেছে।
সাংবাদিক সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, শৈলকুপা উপজেলায় আগামী ৪ জুন ৭ম দফা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থীদেরকে কোন ধরনের প্রচার প্রচারণার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ তাদেরকে ডেকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। শৈলকুপার ১৪টি ইউনিয়নে আ.লীগে আ.লীগে মারামারি করে উল্টো বিএনপির নামে মামলা সাজানো হচ্ছে। বগুড়া, দুধসর, উমেদপুর, মির্জাপুর, ত্রীবেনী, ফুলহরি, আবাইপুর, হাকিমপুর, কাচেরকোল, ধলহরাচন্দ্রসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছে।
সাংবাদিক সম্মেলনে আরো বলা হয়, বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে বলেই ইউপি নির্বচনে অংশ নিয়েছে। কিন্তু এ সরকার গণতন্ত্রের কবর রচনা করে গ্রাম থেকে রাজধানী ঢাকা পর্যন্ত স্বৈরতন্ত্র কায়েম করেছে। মহল্লায় মহল্লায় গডফাদার তৈরী করে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সম্প্রীতি বিনষ্টের মাধ্যমে স্বেরাচারী রাজত্ব কায়েম করেছে। দেশের প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন দুটোই সরকারের পদলেহী। তাদের কাছে কোন সুবিচার পাওয়া যাচ্ছে না। এ সময় ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি মো. মসিউর রহমান, শ্রমিক নেতা আবু বক্কার, এড মুন্সি কামাল আজাদ পাননু, আনোয়ারুল ইসলাম বাদশা, আবুল বাশার বাশি, আকতারুজ্জামান প্রমুখ নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।