কুষ্টিয়ায় খ্রিস্টধর্ম প্রচারক হোমিও চিকিৎসককে হত্যার দায় স্বীকার আইএসের

কুষ্টিয়া প্রতিনিথি: কুষ্টিয়ায় হোমিও চিকিত্সক মীর সানাউর রহমান হত্যাকাণ্ডের ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও পুলিশ কোনো ক্লু উদ্ধার করতে পারেনি। ঘটনায় জড়িত কেউ গ্রেফতারও হয়নি। হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে আন্তর্জাতিক ইসলামিক জঙ্গি সংগঠন আইএস। তবে দায় স্বীকারের বিষয়টি পুলিশের কাছে স্পষ্ট ও বিশ্বাসযোগ্য নয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। এদিকে এ ঘটনায় গতকাল শনিবার বিকালে অজ্ঞাত তিন আসামির নামে কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলা হয়েছে। হত্যার প্রতিবাদে এবং খুনিদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী।

কুষ্টিয়ায় হোমিও চিকিৎসককে কুপিয়ে হত্যার দায় স্বীকার করেছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক ইসলামি জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)। আইএসের সহযোগী সংবাদ সংস্থা ‘আমাক’র এক বিবৃতিতে আরবি ভাষায় লেখা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের কুষ্টিয়ায় খ্রিস্টধর্ম প্রচার করেন এমন এক চিকিৎসককে হত্যা করেছে ইসলামিক স্টেটের যোদ্ধারা।’ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি পর্যবেক্ষণ সংস্থার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি এ তথ্য জানিয়েছে। গত শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বটতৈল এলাকায় সানোয়ার রহমান (৬০) নামের এক হোমিও চিকিৎসককে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।

পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার সকালে সানোয়ার রহমান ওরফে সানাউর কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার বটতৈল এলাকার শিশিরমাঠের নিজ বাগানবাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ওই সময় একটি মোটরসাইকেলে করে ৩ দুর্বৃত্ত ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে কোপায়। দুর্বৃত্তরা সানোয়ারের পাশে থাকা কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাইদুজ্জামানকেও (৫৮) কুপিয়ে দ্রুত মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায়। এএফপি জানায়, এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা প্রকাশের পর বাংলাদেশের পুলিশ প্রথমে জানিয়েছিলো, এর আগে ইসলামিক স্টেটের সদস্যদের হাতে হত্যার ঘটনাগুলোর সাথে এ হত্যাকাণ্ডটির মিল রয়েছে। তবে ব্যক্তিগত বিরোধ থেকেও এই হত্যাকাণ্ড ঘটনো হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চিকিৎসক ছানোয়ার রহমানের পরিবারের সদস্যদের দাবি, গরিব ও অসহায় রোগীদের মধ্যে বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণের কারণে এলাকায় তিনি বেশ জনপ্রিয় ছিলেন। প্রতি শুক্রবার সকালে নিজের বাগান বাড়ির সামনে গ্রামবাসীর মধ্যে প্রয়োজনীয় হোমিওপ্যাথিক ওষুধ বিতরণ করতেন তিনি। তার কোনো শত্রু থাকতে পারে বলে বিশ্বাস করতে পারছেন না পরিবারের সদস্যরা। এদিকে গুরুতর আহত শিক্ষক সাইদুজ্জামানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় নেয়া হয়েছে। সানোয়ার রহমান ও সাইদুজ্জামান  দুজনেই কুষ্টিয়ার বিখ্যাত বাউল গানের ভক্ত ছিলেন। হোমিও চিকিৎসক মাঝে মাঝে নিজের বাড়িতে বাউল গানের আসরের আয়োজন করতেন বলে এএফপিকে জানিয়েছেন তার শ্যালক ওবায়দুর রহমান। বার্তা সংস্থা এএফপি তাদের প্রতিবেদনে বলছে, বাংলাদেশে মুক্তচিন্তার অধিকারী, ধর্মনিরপেক্ষ লেখক, ব্লগার এবং সংখ্যালঘু হত্যার ধারাবাহিকতায় এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। গত কিছুদিনের মধ্যে এক বৌদ্ধভিক্ষু, একজন সমকামী অধিকারকর্মী, একজন নাট্যকর্মী, একজন উদারপন্থী অধ্যাপক, একজন হিন্দু ধর্মাবলম্বী দর্জি এবং সুফি মুসলিম নেতাকে হত্যা করা হয়েছে।  ইসলামিক স্টেট এবং বাংলাদেশে আল-কায়েদার শাখা এসব হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে।

তবে বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ সরকার বারবারই বলে আসছে যে, দেশটিতে এ ধরনের ইসলামিপন্থী জঙ্গি সংগঠনের কোনো কার্যক্রম নেই। এমনকি এসব ঘটনার জন্য আইএস বা আল কায়েদার দায় স্বীকারকেও সরকার অস্বীকার করছে বলে জানিয়েছে এএফপি। তাদের দাবি দেশের ভেতরে গড়ে ওঠা কোনো জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা এসব হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে।

এদিকে গতকাল বিকালে নিহতের পরিবারবর্গ ও পূর্ব মজমপুর এলাকাবাসী এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে কুষ্টিয়া সার্কিট হাউজের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন। এতে বক্তারা অবিলম্বে হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন। এর আগে সকাল ১০টায় কুষ্টিয়া কালেক্টরেট ঈদগাহ ময়দানে জানাজা শেষে পৌর গোরস্থানে মীর সানাউরের দাফন সম্পন্ন হয়। বিকেল সোয়া ৫ টার দিকে নিহতের বড়ভাই আনিসুর রহমান বাদী হয়ে অজ্ঞাত তিনজনকে আসামি করে কুষ্টিয়া মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন। থানার ওসি শাহাবুদ্দিন চৌধুরী মামলার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। শীঘ্রই হত্যায় জড়িতদের চিহ্নিত করা সম্ভব হবে বলে তিনি দাবি করেন।

কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার প্রলয় চিসিম এ প্রসঙ্গে বলেন, তদন্তে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি না হলেও হত্যাকাণ্ডের ক্লু উদ্ধার ও জড়িতদের আটক করতে পুলিশ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তবে আইএস’র বিবৃতির কোনো সত্যতা নেই বলে তিনি জানান।