ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু : আঘাত হানতে পারে আজ

স্টাফ রিপোর্টার: উপকূলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে গভীর সমুদ্রে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু। আজ শনিবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা নাগাদ যে কোনো সময় নোয়াখালী ও চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকা অতিক্রম করতে পারে এটি। গতকাল শুক্রবার বিকেল থেকেই আগের ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সঙ্কেত নামিয়ে ৫, ৬ থেকে ৭ নম্বর বিপদ সঙ্কেত টানিয়ে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে ৭ নম্বর বিপদ সঙ্কেত দেয়া হয়েছে। এছাড়া কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৫ নম্বর বিপদ সঙ্কেত দেয়া হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে অতিসত্তর নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

এদিকে আবহাওয়া অফিসের সতর্ক সঙ্কেত অনুযায়ী ঘূর্র্ণিঝড় রোয়ানু আজ শনিবার বিকেল অথবা সন্ধ্যা নাগাদ বাংলাদেশের উপকূল এলাকায় আসতে পারে। তাদের পর্যবেক্ষণ ও সঙ্কেত অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড়টি মংলা ও পায়রাবন্দরকে বামদিকে রেখে এবং কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ডানদিকে রেখে চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর বা নিকট দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আজ ঘূর্ণিঝড়টি দেশের উপকূল অতিক্রম করার সময় দুর্বল না হলে এর আঘাতে উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ঝঞ্ঝা সৃষ্টি হতে পারে। এর আঘাতে উপকূলীয় এলাকায় ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। তারা ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য আঘাত মোকাবেলায় আগেই উপকূলীয় এলাকা থেকে লোকজনকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার কথা বলেন।

এদিকে উপকূলীয় বিভিন্ন জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও উপকূলীয় এলাকায় সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় তারা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন বলে বিভিন্ন জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। দুর্যোগ মোকবেলায় জরুরি সভাও করেছেন। এদিকে সম্ভাব্য ঘূর্র্ণিঝড়ের কারণে উপকূলীয় এলাকার লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। বৃহস্পতিবার থেকে এলাকায় ভারি বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। নদ-নদীতে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বাড়ছে বলে জনকণ্ঠের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন। এদিকে ঘূর্র্ণিঝড় রোয়ানুর কারণে ঢাকা ও নারায়গঞ্জ নদীবন্দর থেকে চাঁদপুর ও বরিশালগামী সব লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এদিকে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামাল শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ঘূর্র্ণিঝড় রোয়ানুর কারণে উপকূলীয় ১৮ জেলার প্রায় ২১ লাখ লোককে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু হয়েছে শুক্রবার রাত ৮টা থেকে।

শুক্রবার আবহাওয়া অফিসের ঘূর্র্ণিঝড় ও সাইক্লোন সংক্রান্ত ১২ নম্বর বিশেষ বুলেটিনের মাধ্যমে এই বিপদ সঙ্কেতের কথা জানানো হয়েছে। এছাড়াও আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে আগামী ২৪ ঘণ্টায় খুলনা, বরিশাল সিলেট ও ঢাকা বিভাগে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ঘূর্র্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে শুক্রবার দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারি বৃষ্টিপাতের খবর পাওয়া গেছে। ঢাকায় প্রায় সারাদিন গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত হয়েছে। আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, আবহাওয়া অধিদফতর ঘূর্র্ণিঝড় রোয়ানুকে সর্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের মধ্যে রেখেছে। তিনি জানান, তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে রোয়ানু তীব্রগতিতে উপকূলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আপাতত ঘূর্র্ণিঝড়টি দুর্বল মনে হচ্ছে না।

আবাহওয়া অফিসের বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, পশ্চিম- মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ল এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু সামান্য উত্তর,উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে। এটি শুক্রবার দুপুর ১২ টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৬৫ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৪৫ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৭৫ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৮১০ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর, উত্তর-পূর্বদিকে অগ্রসর হয়ে আজ শনিবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা নাগাদ যে কোন সময় চট্টগ্রাম, নোয়াখালী উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিমির মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিমি যা দম্কা অথবা ঝড়োহাওয়া আকারে ৮৮ কিমি পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। এ কারণে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সঙ্কেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৭ নম্বর পুনঃ ৭ নম্বর বিপদ সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। ৭ নম্বর বিপদ সঙ্কেত এলাকার মধ্যে রয়েছের উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ। কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সঙ্কেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৬ নম্বর পুনঃ ৬ নম্বর বিপদ সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার এবং এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৬ নম্বর বিপদ সঙ্কেত (পুনঃ) ৬ নম্বর বিপদ সঙ্কেতের আওতায় থাকবে। এছাড়াও মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সঙ্কেতের পরিবর্তে ৫ নম্বর পুনঃ ৫ নম্বর বিপদ সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৫ নম্বর বিপদ সঙ্কেত পুনঃ ৫ নম্বর বিপদ সঙ্কেতের আওতায় থাকবে।

এতে উল্লেখ করা হয়েছে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর জেলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরে ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণসহ ঘণ্টায় ৬২-৮৮ কিমি বেগে দমকা অথবা ঝড়োহাওয়া বয়ে যেতে পারে।

আবহাওয়া অফিসের ৫নং বিপদ সংকেতে বলা হয়েছে, বন্দর ছোট বা মাঝারি তীব্রতার ঝঞ্ঝাবহুল এক সামুদ্রিক ঝড়ের কবলে নিপতি। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২-৮৮ কিমি। ঝড়টি বন্দরকে বামদিক রেখে উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ৬নং বিপদ সঙ্কেত অনুযায়ী বন্দর ছোট বা মাঝারি তীব্রতার ঝঞ্ঝাবহুল এক সামুদ্রিক ঝড়ের কবলে নিপতি। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২-৮৮ কিমি। ঝড়টি বন্দরকে ডানদিক রেখে উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ৭নং বিপদ সঙ্কেত বন্দর ছোট বা মাঝারি তীব্রতার ঝঞ্ঝাবহুল এক সামুদ্রিক ঝড়ের কবলে নিপতিত। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২-৮৮ কিমি। ঝড়টি বন্দরে ওপর বা নিকট দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

আগের চার নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সঙ্কেত নামিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই বিপদ সঙ্কেত দেয়া হয়েছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ঘূর্র্ণিঝড়টি এখনও দুর্বল হয়নি। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশের উপকূল থেকে ১২শ’ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে অবস্থান করছিল। তাদের হিসাবে অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঘূর্র্ণিঝড়টির অবস্থান ছিল চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৩৬৫ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে এটি ১ হাজার ৩৩৫ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ১৮৫ কিমি এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ঘূর্র্ণিঝড় রোয়ানু ১ হাজার ২১৫ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে। তবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তার উত্তর-পূর্বদিকে অগ্রসর হয়ে একই স্থানে অবস্থান করলে গত চব্বিশ ঘণ্টায় এটি আরও উত্তর-পূর্বদিকে অগ্রসর হয়েছে। বর্তমানে উড়িষ্যা উপকূলের কাছাকাছি অবস্থান করছে। আজ যে কোন সময় এটি দেশের চট্টগ্রাম বন্দর অতিক্রম করে মিয়ানমারের দিকে যেতে পারে। তবে দেশের উপকূল অতিক্রম করার সময় এটি দুর্বল না হলে সাইক্লোনের আঘাতে দেশের উপকূলীয় এলাকায় ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।

উপকূলীয় জেলাসমূহে ঘূর্র্ণিঝড় মোকাবেলায় প্রস্তুতি

চট্টগ্রাম: ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে উত্তাল বঙ্গোপসাগর। শুক্রবার বিকেলে বিপদ সঙ্কেত ৭ নম্বরে উন্নীত হওয়ার পর শুরু হয়ে গেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার প্রস্তুতি। জরুরি বৈঠকে বসে বন্দর কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন, রেড ক্রিসেন্টসহ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সাথে সংশ্লিষ্ট সরকারী ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলো। ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় বিভিন্ন নির্দেশনা জারি করা হয়েছে সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে। এদিকে, সকাল থেকেই চট্টগ্রামে চলছে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত। সকাল থেকে কিছুটা বাতাস থাকলেও বিকেলে হঠাৎ গুমোট হয়ে পড়ে আবহাওয়া। উপকূলীয় লোকজনও প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে বন্ধ রয়েছে পণ্য লাইটারিং। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত লাইটার জাহাজগুলোকে থাকতে হবে নিরাপদ আশ্রয়ে।

এদিকে, ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে উত্তাল অবস্থা বঙ্গোপসাগরে। উঁচু ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে তীরে। বহির্নোঙ্গরে পণ্য ওঠানামা বৃহস্পতিবারই বন্ধ হয়ে যায়। সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি এবং গুমোট আবহাওয়া ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আলামত ব্যক্ত করছে। বিশেষ করে বিকেলে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যেও এক ধরনের ভ্যাপসা গরম অনুভূত হচ্ছে। এ ধরনের অবস্থাকে ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস হিসেবে দেখে থাকে উপকূলবাসী।

আবহাওয়া দফতরের সতর্কতা মান্য করে গভীর সাগরে মাছ ধরারত জলযানগুলো তীরে ফিরতে শুরু করেছে। শুক্রবার বিকেলের মধ্যেই বিপুলসংখ্যক মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার কর্ণফুলী নদীর পোতাশ্রয়ে এসে নোঙ্গর করে। নতুন করে কোন জাহাজ বের হচ্ছে না। বরং সাগর থেকে ভেতরে ঢুকছে। বিকেলে কর্ণফুলীর মাঝিরঘাট এলাকায় অসংখ্য নৌকা ও ট্রলারকে নোঙ্গর করা অবস্থায় থাকতে দেখা যায়।

কক্সবাজার: ঘূর্ণিঝড় ও সম্ভাব্য দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবেলায় কক্সবাজারের সকল সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীর সপ্তাহিক ছুটি বাতিল করে কর্মস্থলে উপস্থিত থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রেয়ানুর প্রভাবে উপকূলে সকাল থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। সাগর ও উপকূলীয় এলাকায় জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। সেন্টমার্টিন-টেকনাফ রুটে চলাচলকারী সকল নৌযান বন্ধ রাখা হয়েছে। উপকূলীয় সব উপজেলার সাইক্লোন শেল্টারগুলো খোলা রাখার এবং পরিস্থিতি মোকাবেলায় রেড ক্রিসেন্ট কর্মী, মেডিক্যাল টিম ও উদ্ধার কর্মীদের নিয়োজিত রাখা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টসূত্রে জানা গেছে। শুক্রবার বিকেলে জেলা শহর উপকূলীয় এলাকায় সতর্কতামূলক মাইকিং করা হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর মোকাবেলায় সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসন।

নোয়াখালী: রোয়ানুর প্রভাবে বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে শুক্রবার দিনভর নোয়াখালীতে ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত। দুর্যোগ মোকাবেলা কমিটি এক জরুরী প্রস্তুতি সভা করেছে। সভায় জানানো হয়, ঘূর্র্ণিঝড় পূর্ববতী এবং পরবর্তী সকল প্রকার প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। জেলার সুবর্ণচর, কোম্পানীগঞ্জ ও হাতিয়াসহ ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন এলাকার আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পর্যাপ্ত শুকনো খাবার, সুপেয় পানি প্রস্তুত রাখতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্ব স্ব এলাকার রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবকদেরও প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে হাতিয়াসহ উপকূলীয় এলাকাসমূহে মাইকিং ও সাইরেন বাজানোর ব্যবস্থা করার জন্য উপজেলা প্রশাসন, বিভিন্ন এনজিও ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি উদ্যেগ নিয়েছে বলেও সভায় জানানো হয়। এ ছাড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে শুক্রবার থেকে সর্বক্ষণিক কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।

মংলা: ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে প্রশাসন। প্রতিঘণ্টায় মংলা পৌরসভায় মাইকিং করে সতর্কবার্তা দেয়া হচ্ছে। নাগরিকদের জানমাল রক্ষায় সতর্ক রয়েছে তার প্রশাসন। কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিলসহ কাউন্সিলরদের নিজ নিজ ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালনের জন্য মেসেজ দেয়া হয়েছে। বন্দরের বহির্নোঙ্গরে থাকা সব জাহাজের কাজ বন্ধ রয়েছে। দুর্যোগ মোকাবেলায় বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সতর্ক করে বন্দর কর্তৃপক্ষের উদ্ধার যানগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

মুন্সীগঞ্জ: দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুটে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যা পোনে ছয়টা থেকে কর্তৃপক্ষ পূর্ব সতর্কতামূলক এ নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেয়। একই সাথে ওই নৌরুটে ফেরি চলাচলও সীমিত করা হয়েছে। নৌযান চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রীরা পার হচ্ছে ফেরিতে করে।

বিআইডব্লিউটিএর মাওয়া নৌবন্দর কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন জানিয়েছেন, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ও পদ্মায় অতিরিক্ত ঢেউয়ের কারণে শুক্রবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টা থেকে শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুটে লঞ্চ, সিবোট ও ট্রলারসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। কোনো প্রকার দুর্ঘটনা এড়াতে এ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তবে মাওয়া বন্দরের জন্য কতো নম্বর সঙ্কেত চলছে তা তিনি জানাতে পারেননি। তবে বিআইডব্লিউটিএর নৌনিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী পরিচালক জানিয়েছেন, মাওয়া বন্ধর এলাকার জন্য ১ নম্বর সতর্ক সঙ্কেত চলছে।

বিআইডব্লিউটিসির ম্যানেজার বাণিজ্য মো. গিয়াস উদ্দিন পাটুয়ারী জানিয়েছেন, পদ্মার অবস্থা খুব একটা ভাল না। নদীতে প্রচুর ঢেউ রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে প্রচুর বাতাস বা ঝড়ো হাওয়া। এতে ছোট ফেরি চলাচল করা দুরূহ ব্যাপার হয়ে পড়েছে। ফেরিগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখা চালকদের জন্য ঝুঁকিপুর্ণ। তাই দুর্ঘটনা এড়াতে ছোট ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুটে ১৫টি ফেরি সচলভাবে চলাচল করছে। তার মধ্যে ছোট আকারের ৭টি ফেরি শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ৪টি রো রো ও ৪টি কে টাইপ ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। যাত্রীবাহী নৌযান বন্ধ থাকায় এসব ফেরিতে যাত্রীরা পারাপার হচ্ছে। তিনি আরও জানায়, পদ্মার যেভাবে ঢেউ উঠছে তাতে রাতে ফেরি চলাচল টিকিয়ে রাখা সম্ভব নাও হতে পারে। ঝুঁকিপূর্ণ মনে হলে যে কোন সময় এ নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয়া হতে পারে।

বরিশাল: নৌ সঙ্কেত থাকায় নিরাপত্তাজনিত কারণে বরিশাল নদীবন্দর থেকে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ ৬৫ ফুটের নিচের লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে।

ভোলা: এদিকে শুক্রবার উপকূলীয় এলাকায় বিপদ সঙ্কেতের পতাকা টানিয়ে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে ভোলা রেড ক্রিসেন্ট ও সিপিপি। দূরবর্তী এলাকার মানুষ ও নৌযানকে নিরাপদে আশ্রয়ে আসতে বলা হয়েছে। শহরের তুলাতলীসহ বিভিন্ন এলাকায় এ সতর্ক বার্তা পৌঁছানো হয়েছে। এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’ মেকাবেলায় ভোলা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

পটুয়াখালী: সকাল থেকে পটুয়াখালীসহ উপকূলীয় এলাকায় বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাগর উত্তাল। প্রায় পাঁচ শতাধিক মাছ ধরা ট্রলার আশ্রয় নিয়েছে মৎস্যবন্দর আলীপুর ও মহিপুরে। জেলা প্রশাসন ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় দুর্যোগ প্রস্তুতি কমিটির জরুরী বৈঠক করেছে।

বাগেরহাট: সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। ৫ নম্বর বিপদ সঙ্কেতের পর তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত হচ্ছে। সব নদ-নদী উত্তাল। শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এখানে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। উপকূলীয় প্রতিটি উপজেলা পরিষদে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। সব সাইক্লোন শেল্টার খোলা রাখা হয়েছে। সরকারী কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। বন্ধ রয়েছে মংলাবন্দরে পণ্য ওঠানামা ও খালাস কার্যক্রম।

এছাড়া উপকূলীয় বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় বিশেষ করে বাউফল, কলাপাড়া, হাতিয়া, গলাচিপায় গত দুদিন ধরে ঘূর্র্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ করছে। ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কায় এলাকার লোকজনের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। এলাকায় মাইকিং করে লোকজনকে সতর্ক করা হচ্ছে। এছাড়াও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন।