সীমান্তে হত্যার ঘটনা ও কতক অপরাধ বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে তদন্ত করবে বলে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক অগ্রগতি। আমরা একে স্বাগত জানাই। ১২ মে থেকে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) ও ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) অনুষ্ঠিত ছয় দিনের সীমান্ত সমন্বয় সম্মেলনে সিদ্ধান্তটি হয়েছে। দুই দেশের বাহিনী দুটির মহাসচিব পর্যায়ের এই সম্মেলন বছরে দু’বার হয় পর্যায়ক্রমে দুই রাজধানীতে। গত ডিসেম্বরে ঢাকায় নির্ধারিত সম্মেলনটি স্থগিত হয়েছিলো, যা এখন হলো। এছাড়া বিভিন্ন সীমান্তে দু’পক্ষের আঞ্চলিক কমান্ডার পর্যায়ের এবং সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর কয়েকটি গুচ্ছে উভয় দেশের জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনও হয় ষাণ্মাসিক। কোনো সীমান্তে সংঘাত বা অপ্রীতিকর কিছু ঘটলে স্থানীয় পর্যায়ে উভয়পক্ষের তাৎক্ষণিক পতাকা বৈঠকের ব্যবস্থা হয়। সোমবার সমাপ্ত সম্মেলনে আলোচনার যৌথ দলিলে বিজিবির মহাসচিব মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ এবং বিএসএফ মহাসচিব কৃষাণ কুমার শর্মা স্বাক্ষর করার পর সংবাদ সম্মেলনে সিদ্ধান্তগুলো জানান। তাতে সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা, পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে সীমান্তে চোরাচালানসহ বিভিন্ন অপরাধ দমনে যৌথ উদ্যোগ ইত্যাদি যেসব কথা বলা হয়েছে, তা ওই ষাণ্মাসিক রুটিন বৈঠকের মতোই শোনায়। আমাদের দুটি দেশ ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে বন্ধুভাবাপন্ন। পারস্পরিক সহযোগিতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক একটি উচ্চমাত্রাতেই প্রতিষ্ঠিত; যদিও অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনসহ কয়েকটি জটিল সমস্যাই রয়েছে। কোনো রকম যুদ্ধপ্রতিম বৈরিতা ছাড়াই সীমান্তে প্রায় নিয়মিত অসামরিক গরিব মানুষের মৃত্যু একটি নির্মম বাস্তবতা। গরুসহ কয়েকটি পণ্যের চোরাচালান এ সমস্যার প্রধান উৎস। প্রায় সব মৃত্যুই বিএসএফ’র গুলিতে হয়। দরিদ্র মানুষের বহু যুগের মানবিক সমস্যার নিরিখে প্রাণহানি ছাড়া এ সমস্যা মোকাবেলা করা উচিত। প্রয়োজন মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি ও মানবাধিকারের প্রতি সম্মানবোধ। পেটের দায়ে দরিদ্র মানুষের অবৈধ চলাচলে গুরুতর নিরাপত্তা সমস্যা তৈরি হয় না যে গুলি চালাতে হবে। ২০১১ সালে ১৫ বছরের কিশোরী ফেলানী খাতুনের মৃতদেহ কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলে থাকার সংবাদচিত্র গোটা বিশ্বের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। সে মামলা এখনও বিচারাধীন। চোরাচালানের সমস্যাও কমে আসবে।
সর্বশেষ ঈদুল আজহায় প্রমাণিত হয়েছে যে, ভারতীয় গরু ছাড়া বাংলাদেশ স্বয়ম্ভর হওয়ার পথে। এতোদিন মৃত্যুর ঘটনায় পারস্পরিক দোষারোপ হতো। যৌথ তদন্তের সিদ্ধান্তে আমরা আশা করি, এ বিষয়ে উন্নতি হবে। সীমান্ত মৃত্যু শূন্যের কোঠায় আনার সিদ্ধান্ত শুধু রুটিন প্রস্তাব হিসেবে থাকবে না।