এমপিসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নয় : হাইকোর্ট

শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় রুল : কি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জানানোর নির্দেশ

স্টাফ রিপোর্টার: নারায়ণগঞ্জে স্কুলের প্রধান শিক্ষককে লাঞ্ছনার ঘটনায় আইনগত পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা দিয়েছে হাইকোর্ট। একইসাথে পদক্ষেপের বিষয়টি ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদনের মাধ্যমে আদালতে দাখিলের জন্য নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও ইউএনওকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের ডিভিশন বেঞ্চ গতকাল বুধবার স্বত:প্রণোদিত হয়ে এই আদেশ দেন। এছাড়া স্থানীয় সংসদ সদস্য ও  জাতীয় পার্টি (এ) নেতা একেএম সেলিম ওসমানসহ এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে না- এই মর্মে রুল জারি করেছে আদালত। আগামী ২ সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, শিক্ষা সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

শ্রেণিকক্ষে ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে গত শুক্রবার নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে মারধর ও কান ধরে উঠবস করানোর ঘটনা ঘটে। এ সময় স্থানীয় সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান ও স্কুলের ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। তবে প্রধান শিক্ষকের অভিযোগ, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির দ্বন্দ্বের জেরে পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। মঙ্গলবার বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফারুকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে ওই শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ নিয়ে গতকাল বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

শিক্ষক লাঞ্ছনার এই ঘটনা নিয়ে ৬টি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন গতকাল আদালতে উপস্থাপন করেন সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এমকে রহমান, অ্যাডভোকেট মহসীন রশিদ ও অ্যাডভোকেট শোয়েব আহমেদ। অ্যাডভোকেট এমকে রহমান বলেন, এ ঘটনায় পুরো জাতি লজ্জিত। দেশব্যাপী প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। শিক্ষক হচ্ছে মানুষ গড়ার কারিগর, কিন্তু জনসম্মুখে তাকে সাজা দেয়া হয়েছে। অসুস্থ হয়ে ক্ষোভে ও অপমানে ওই শিক্ষক হাসপাতালে শয্যাশায়ী। এই অবস্থায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করে উল্টো তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছে স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটি। এটা আরো নিন্দনীয় কাজ। তিনি বলেন, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। সকলেরই আইনের আশ্রয় পাওয়ার অধিকার রয়েছে। এ পর্যায়ে হাইকোর্ট বলেন, এটি একটি ফৌজদারি অপরাধ। এ ধরনের লাঞ্ছনাকর দণ্ড সংবিধানের ৩৫(৫) অনুচ্ছেদের পরিপন্থী।

অ্যাডভোকেট মহসীন রশিদ বলেন, শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যেত, কিন্তু তা না করে আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া হয়েছে। এ ঘটনা আমাদের বিচারিক বিবেককে নাড়া দিয়েছে। এ পর্যায়ে আদালত বলেন, এ ধরনের ঘটনা কারো কাম্য নয়। আইন কেউ নিজের হাতে তুলে নিতে পারে না।

অ্যাডভোকেট এমকে রহমান আরও বলেন, সংবিধানের অভিভাবক হিসেবে এই আদালতের উচিত অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ ও রুল জারি করা। পরে হাইকোর্ট রুল জারি করে।