পুঁজিবাজারে লেনদেন খরা কাটছে না : বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা

স্টাফ রিপোর্টার: পুঁজিবাজারের লেনদেন নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে বাজারে লেনদেন কমতে কমতে তিনশ কোটি টাকারও নিচে নেমে এসেছে। এতে বাজার সংশ্লিষ্টদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। তারা বলছেন, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীসহ সবার অংশগ্রহণ না বাড়লে বাজারে লেনদেন বাড়বে না। আর সবার অংশগ্রহণ বাড়াতে হলে শেয়ারবাজারে মুনাফার প্রবণতা থাকতে হবে। অথচ গত কয়েক বছরের বেশির ভাগ সময়েই বিনিয়োগকারীরা বাজারে লোকসানই গুনেছেন বেশি। তাই তারা বিনিয়োগের আগ্রহ পাচ্ছেন না।

লেনদেন কমে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টস্-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, পুঁজিবাজারে মৌলভিত্তি সম্পন্ন ও ভালো কোম্পানি বাজারে নিয়ে আসলে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়বে। কারণ দিনশেষে লভ্যাংশের ভিত্তিতেই কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর ওঠানামা করে। অথচ আমাদের দেশে ধারাবাহিকভাবে ভালো লভ্যাংশ দেয় এরকম কোম্পানির সংখ্যা খুবই কম। তিনি আরও বলেন, আমাদের শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা মাত্র ৫-৭টি কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে। কারণ অন্য কোম্পানিগুলোতে ভালো লভ্যাংশ পাওয়া ও লগ্নিকৃত অর্থের নিরাপত্তার আস্থা তারা পায় না। এ অবস্থা থেকে বের হতে হবে। ভালো কোম্পানিগুলোকে বাজারে নিয়ে আসতে হবে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও বলছেন, দীর্ঘমেয়াদে বাজার ভালো করার জন্য কোম্পানিগুলোর ভালো পারফরম্যান্স জরুরি। কোম্পানি ভালো লভ্যাংশ দিলে কোম্পানির শেয়ারের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়বে। বাজারে ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্তির প্রভাব খুব ভালোভাবে স্পষ্ট হয়েছে গ্রামীণফোন তালিকাভুক্তির সময়। ২০০৯ সালে কোম্পানিটি তালিকাভুক্তির সময় অনেক নতুন বিনিয়োগকারী বাজারে এসেছে।

বিনিয়োগকারীরা বলছেন, এখনও বাজারে ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত হলে নতুন বিনিয়োগকারী বাজারে আসবে, নতুন তহবিল বাজারে আসবে। এতে শেয়ারবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। অথচ এখন যে কোম্পানিগুলো বাজারে আসছে সে কোম্পানিগুলোর আয় খুব একটা আশাব্যঞ্জক হচ্ছে না। ফলে তালিকাভুক্তির কিছুদিন পরই কোম্পানিগুলোর দাম কমতে থাকে। অনেক কোম্পানিরই শেয়ারদর ফেসভ্যালুরও নিচে নেমে যায়। তাই টেলিকমিউনিকেশন খাতসহ দেশের সব খাতের মানসম্পন্ন ও ভালো কোম্পানিগুলোকে বাজারে নিয়ে আসার পরমার্শ বিনিয়োগকারীদের।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গতকাল সোমবার ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ২৮৮ কোটি টাকা। আগেরদিন লেনদেন হয়েছিল ২৫৮ কোটি টাকা যা গত ছয় মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। লেনদেন এভাবে কমে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি হতাশায় পড়েছে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। কারণ ৫০০ থেকে ৬০০ কোটি টাকা লেনদেন না হলে এ প্রতিষ্ঠানগুলো লোকসানে পড়ে যায়।

গতকাল একাধিক ব্রোকারেজ হাউস ঘুরে দেখা গেছে হাউসগুলোতে বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। যারা আছেন তারাও খুব হতাশ। তারা বলছেন, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ কমে যাওয়ায় লেনদেন কমে গেছে।

ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগে বাংলাদেশ ব্যাংকনীতি সহায়তা দিলেও বাজারে দরপতন হচ্ছে। লেনদেনেও উন্নতি হয়নি। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে একটি এসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক সুবিধা দিলেও তারা ব্যাংকগুলোকে বাজারে আসতে দিতে চায় না। তারা অদৃশ্য নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে আটকে রেখেছে। অথচ ব্যাংক ও বীমা প্রতিষ্ঠান বাজারে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। এ অবস্থায় ব্যাংক ও বীমা প্রতিষ্ঠান বাজারে এলে বাজার ইতিবাচক হবে। তাই বাজারের স্বার্থে বাংলাদেশ ব্যাংককে অদৃশ্য নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে নমনীয় হতে হবে।