খুলনা বিভাগীয় সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক-ঐক্য পরিষদের আহ্বান
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স ও গ্রিন লাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে হওয়া ক্ষতিপূরণের দুটি মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আজ রোববার খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুরে যশোর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল কমিটির নেতারা এ ঘোষণা দেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০১১ সালের ১৩ আগস্ট ঢাকা-খুলনা জাতীয় মহাসড়কের মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার জোকা নামক স্থানে মাইক্রোবাসের সাথে চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স পরিবহনের সংঘর্ষে ঘটনাস্থলে চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ ও সাংবাদিক মিশুক মুনিরসহ ৫ জন নিহত হন। ওই ঘটনায় মানিকগঞ্জ থানায় ১৩ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের একটি মামলা হয়। এদিকে সিলেটে গ্রিন লাইন পরিবহনের সাথে একটি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে বাসের আট যাত্রী নিহত হন। ওই ঘটনায় সিলেট আদালতে ১৩ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের একটি মামলা করা হয়েছে।
সম্মেলনে সংগঠনের সদস্য সচিব আবদুর রহিম বক্স অভিযোগ করেন, দেশের প্রচলিত আইনের বাইরে এ দুটি মামলা করা হয়েছে। তাই মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়েছে। রোববার সকাল ছয়টা থেকে এ ধর্মঘট শুরু হবে। ধর্মঘটে যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী কোনো ধরনের যানবাহন খুলনা বিভাগের রাস্তায় চলাচল করবে না। আবদুর রহিম বলেন, সড়কে দুর্ঘটনা অহরহ ঘটে। আর প্রতিদিনই যদি কোটি কোটি টাকার মামলা হয়, তাহলে কার পক্ষে সেই টাকা দেয়া সম্ভব?
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের ঘটনায় দেশের প্রচলিত আইনে ২০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। সেটা হলে আমরা অবশ্যই তা মেনে নেবো। আমরা ২০ হাজার টাকার একটি টাকাও বেশি দিতে রাজী নয়। আপনারা আইন করুন, তারপর দেবো। কিন্তু বিশেষ জনের জন্য বিশেষ আইন করে ক্ষতিপূরণ চাইলে তা মেনে নেবো না। এছাড়া তিনি আরও বলেন, আমরা আইনকে মানি, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। দুর্ঘটনার মামলা দুর্ঘটনার আইনে বিচার হতে হবে। কোনো পেশিশক্তি যদি জোর জবরদস্তি করে জেল দিতে চায়, অন্যায় সিদ্ধান্ত চাপায় তাহলে সড়ক ফেডারেশন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ সিদ্ধান্ত নিয়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেশ অচল করে দেয়া হবে। যোগাযোগ মন্ত্রী আরিচা রোডে ডিভাইডার তৈরির পর দুর্ঘটনা হয় না। প্রকৌশলীদের ভুলের কারণে দুর্ঘটনা ঘটলেও তাদেরকে আসামি করা হয় না। চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন করছেন। আমরাও চাই নিরাপদ সড়ক হোক। পদ্মা সেতু তৈরির আগে রোড ডিভাইডার তৈরি করুন। রোড ডিভাইডার না হলে দুর্ঘটনায় আরো বেশি লোক মারা যাবে। সরকার ইচ্ছা করলেই দুর্ঘটনা কমাতে পারে। আমরা চাই না দুর্ঘটনায় কোনো মানুষ মারা যাক।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, গত ৮ মে পরিষদের বর্ধিত সভায় সরকারের কাছে তিন দফা দাবি পেশ করে ১৪ মে পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এখনও কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এজন্য পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ধর্মঘট পালন করা হবে। বাস, ট্রাক, ট্রাঙ্কলরি এবং কাভার্ডভ্যানসহ সব ধরনের যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী যানবাহন ধর্মঘটের আওতায় থাকবে বলে তিনি জানান। পরিবহন নেতাদের দাবিগুলো হচ্ছে- সড়ক দুর্ঘটনায় তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন নিহতের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে বিচার কাজ শেষ করতে হবে। আর নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ চেয়ে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। গ্রিন লাইন পরিবহনের নামে সিলেট জেলা ও দায়রা জজ আদালতে দায়ের করা মামলাটি প্রত্যাহার করতে হবে। সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের খুলনা বিভাগীয় আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি আজিজুল আলম, যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ আলী, যশোর সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি রমেন মণ্ডল, চুয়াডাঙ্গা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি এম জেনারুল ইসলাম প্রমুখ।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার জোকা নামক স্থানে মাইক্রোবাসের সাথে চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স পরিবহনের সংঘর্ষে ঘটনাস্থলে চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ ও সাংবাদিক মিশুক মুনিরসহ ৫ জন নিহত হন। ওই ঘটনায় তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ ও মিশুক মুনিরের স্ত্রী কানিজ এফ কাজীসহ পরিবারের সদস্যরা বাদী হয়ে মানিকগঞ্জ আদালতে মামলা দায়ের করেন।