গাংনীতে স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে আত্মহত্যার নাটক : স্বামী শিমুল গ্রেফতার

মাজেদুল হক মানিক: মেহেরপুর গাংনী উপজেলার জোড়পুকুরিয়া গ্রামের সেই কাজলী হত্যা মামলার প্রধান আসামি শিমুল হোসেনকে (২৫) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার দুপুরে নিজ গ্রাম থেকে তাকে গ্রেফতার করে হত্যা মামলায় আদালতে সোপর্দ করা হয়। গত ৫ নভেম্বর স্ত্রীকে পিটিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে আত্মহত্যার নাটক সাজিয়ে প্রাথমিকভাকে পার পেলেও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হত্যাকাণ্ডের জট খুলেছে। গ্রেফতার শিমুল হোসেন জোড়পুকুরিয়া গ্রামের মৃত খলিলুর রহমানের ছেলে।

গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আকরাম হোসেন জানান, গত ৫ নভেম্বর সকালে স্বামীর বসতবাড়ির শয়ন কক্ষ থেকে কাজলীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে প্রতিবেশিরা। প্রাথমিকভাবে এটিকে আত্মহত্যা বলে অনেকেই মতামত পোষণ করেন। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ তোলেন নিহতের পিতার পরিবার। হত্যা না আত্মহত্যা তা নিশ্চিত হতেই লাশের ময়নাতদন্ত করায় পুলিশ। গত ৩০ এপ্রিল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন থানায় প্রদান করেন মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের একজন চিকিৎসক। কাজলীকে মারধর ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। ওইদিনই নিহতের পিতা তেরাইল গ্রামের কাবের আলী বাদি হয়ে গাংনী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। কাজলীর স্বামী শিমুলকে প্রধান আসামি করে তার মাসহ আরো কয়েকজনকে মামলার আসামি করা হয়।

তেরাইল গ্রামের ব্যবসায়ী কাবের আলীর মেয়ে কাকলী খাতুন স্থানীয় বালিকা বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া অবস্থায় পার্শ্ববর্তী জোড়পুকুরিয়া গ্রামের মৃত খলিলুর রহমানের ছেলে শিমুলের সাথে প্রেম সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। বেকার ও দরিদ্র শিমুলের সাথে বিয়ে দিতে রাজি হয়নি কাকলীর পরিবার। পিতার পরিবারের অমত ও বাধার মধ্যদিয়েই কাকলীর সাথে বছর চারেক আগে শিমুলের বিয়ে হয়। বছর দেড়েক আগে কাকলীর কোল জুড়ে আসে সিয়াম নামের এক পুত্র সন্তান। কিন্তু সংসার জীবনের শুরুতেই অভাব অনটনসহ বিভিন্ন বিষয়ে কলহ লেগেই থাকতো। শিমুলের মা অন্যের বাড়িতে কাজের পাশাপাশি নছিমন চালানোর কাজ শুরু করে শিমুল। জোড়পুকুরিয়া মধ্যপাড়া পুরাতন বাড়ি ছেড়ে বাজারের পাশে দুই কাঠা জমি কিনে বেড়ার ঘর করে। কাকলীর পিতা কাবের আলী যদিও জামাইকে গ্রহণ করতে পারেননি তারপরেও মেয়ের সুখের জন্য কিছু টাকা দেন। কোনোমতে মাথা গোজার ঠাঁই করে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছিলেন শিমুল। শিমুলের মা সফুরা খাতুন কাকলীকে মেয়ের মতোই দেখতেন। কিন্তু সংসার করার মতো উপযুক্ত বয়স না হওয়ায় স্বামী-স্ত্রী ও শাশুড়ীর মধ্যে প্রায়ই ছোটখাটো বিষয় নিয়ে কলহ বেধেই থাকত। তাছাড়া কাকলী ছিলেন জেদি ও রাগি ধরণের। এতে শাশুড়ী ও স্বামীর সাথে মাঝে মধ্যেই গন্ডগোল সৃষ্টি হত। এর জের ধরে প্রায়ই স্বামীর হাতে চড় থাপ্পড় জুটতো। একদিকে সংসারে অশান্তি অন্যদিকে পিতার বাড়িতে ফিরে যাওয়ার সুযোগ কম থাকায় দাম্পত্য চরম অশান্তি নিয়েই সংসার করছিলেন কাজলী।

কাজলী হত্যাকাণ্ডের বিষয়পি পুলিশের কাছে পরিষ্কার হলে আসামি গ্রেফতারে অভিযান শুরু হয়। কিন্তু তার আগেই আত্মগোপন করে শিমুলসহ সকল আসামি। হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে শিমুলকে জিজ্ঞাসাবাদের লক্ষ্যে আদালতে রিমান্ডের আবেদনের প্রস্তুতি চলছে। পাশাপাশি অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতারের প্রচেষ্টা অব্যহত রয়েছে বলে জানান ওসি।