চুয়াডাঙ্গার হিজলগাড়িতে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ বিষয়ক মতবিনিময়

 

বাল্যবিয়ে হচ্ছে একটি নারীর শিকল বাঁধা অভিশপ্ত জীবন

নজরুল ইসলাম: চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার হিজলগাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টায় বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ এবং বাল্যবিয়েকে লাল কার্ড প্রদর্শন বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুল্লা আল মামুনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কেএম মামুন উজ্জামান। তিনি বলেন, বিবাহ একটি পবিত্র বন্ধন। মানুষের জন্ম মৃত্যুর মত চিরন্তন সত্য বিবাহ। জন্ম নিলে মৃত্যুর স্বাদ পেতে হয়। আর এই জীবন মৃত্যুর মধ্যভাগে ক্ষুদ্র সময়ে মানুষ বেঁচে থাকে। এই মানুষগুলোর মাঝে বিরাজ করে আগামীর প্রজন্ম, আগামীর স্বপ্ন। সময়ের ছুটে চলায় কোনো এক সময় নিজের জৈবিক প্রবৃত্তি বশত মানুষ জীবনের সঙ্গী খুঁজে নেয়। তবে সেটি খুঁজে নিতে পরিণত বয়স পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। একটি সুস্থ জাতি পেতে প্রয়োজন একজন শিক্ষিত মা, এ কথা বলেছিলেন প্রখ্যাত মনিষী ও দার্শনিক নেপোলিয়ন বোনাপার্ট। অথচ আজ এই একুশ শতকে এসেও বাংলাদেশের ৬৬ ভাগ মেয়ে এখনো শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। যার প্রধান কারণ বাল্যবিয়ে। আগামী প্রজন্মের সুস্থভাবে বেড়ে উঠা এবং সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতেও বাল্যবিয়ে একটি বড় বাধা। আমাদের দেশে বহুল আলোচিত সামজিক সমস্যা হচ্ছে বাল্যবিয়ে। অর্থাভাবের কারণে বাবা-মায়েরা তাদের কোমলমতি মেয়েদেরকে কৈশর পেরোনোর আগেই তুলে দেন বরের হাতে। যে সময় মেয়েটি স্কুল কলেজে সহপাঠীর সাথে পড়াশোনা করা কথা  কিংবা হাসিখুশি  আর  খেলাধূলা উচ্ছলতায় থাকার কথা সেই সময় নেমে  আসে এক অভিশাপের কালো মেঘ।

আমরা আমাদের মূল্যবোধ নিয়ে সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে সমাজের জন্য কতোটুকু কাজ করছি, কতোটুকু দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিতে পারছি। কতজন অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারছি। আমরা যদি সবাই সচেতন হই তাহলে কন্যা শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে। দেশে মা ও শিশুর অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে৷ তাই বাল্যবিয়ে বন্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আমি চাই বাল্যবিয়ের কারণে মেয়েদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি, শিক্ষা না পাওয়া, যৌতুকের বলি হওয়া এবং পরাধিনতার শৃক্ষখলে আর বদ্ধ না হোক। বাল্যবিয়ের ফলে মানুষের মৌলিক চাহিদার তেমন ক্ষতি না হলেও অকালে ঝরে থাকে একটি শিশুর সোনালী ভবিষ্যৎ রঙিন স্বপ্নের ঘুড়ি নিমিষেই সুতো ছিঁড়ে যায় আর চলে অজানা কোনো এক গন্তব্যে। জীবনকে উপভোগ করুক নির্মল আনন্দে। সমাজের উঁচুস্তর থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষের, বিশেষ করে আমাদের রাষ্ট্র এবং প্রশাসনকে এ ব্যাপারে সবার আগে পথপ্রদর্শকের ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে ।

বিদ্যালয়ের সিনিয়ার শিক্ষক শফিকুল ইসলামের উপস্থাপনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আজিজুল হক হযরত আলী, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কহিনুর বেগম, বেগমপুর ইউপি চেয়ারম্যান আলী হোসেন জোয়ার্দ্দার, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হাসেন স্বপন, দাতা সদস্য জাহিদুল ইসলাম, পিটিএ সভাপতি সাইফুল ইসলাম, সদস্য রিজভী আহম্মেদ, হিজলগাড়ি গ্রেসক্লাবের সভাপতি আরিফ হাসান, আবু জহিরসহ বিদ্যালয়ের শিক্ষাক ও শিক্ষার্থীরা। আলোচনা শেষে প্রধান অতিথি বাল্যবিয়ে না বলে শফত পাঠ ও বাল্যবিয়েকে লাল কার্ড প্রদর্শণ করান।