কুষ্টিয়া প্রতিনিধিঃ কুষ্টিয়ার শিলাইদহে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শতবর্ষ ধরে বিশ্বকবির অনন্য প্রতিভার আলো উদ্ভাসিত করে চলেছে বাঙালির জীবন ও দর্শণ।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্ব দরবারে বাংলা ভাষাকে পরিচিত করেছেন। নিভৃত বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চল শিলাইদহে কবির জীবনের বেশ কিছু সময় কাটিয়েছেন। তার লেখনীর মাধ্যমে ফুটে উঠেছে এ অঞ্চলের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। আজও কালের স্বাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে শিলাইদহের কুঠিবাড়ি আর কুষ্টিয়া শহরের টেগর লজ। রবীন্দ্রনাথের কুষ্টিয়ার দুই বাড়িতেই সাড়ম্বরে পালিত হচ্ছে তাঁর ১৫৫তম জন্মজয়ন্তি। জন্মজয়ন্তির প্রথম প্রহরে টেগর লজে প্রদ্বীপ প্রজ্জ্বলন করে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়র আনোয়ার আলী। আর শিলাইদহ কুঠিবাড়ির ৩ দিনব্যাপি অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার আব্দুস সামাদ।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কুষ্টিয়ার টেগর লজে কুষ্টিয়া পৌরসভার উদ্যোগে একদিন এবং কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে আলোচনাসভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও গ্রামীণ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। ৫৩টি সাংস্কৃতিক সংগঠন ৩ দিন এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করছে। সব মিলিয়ে গ্রামীণ মেলা বেশ জমে উঠেছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি।
এ ব্যাপারে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার আব্দুস সামাদ বলেন, নিরিবিলি পরিবেশ থাকায় সাহিত্য চর্চার জন্য বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বারবার ফিরে আসতেন এই কুঠিবাড়িতে। এখানে বসেই জমিদারী পরিচালনাসহ সাহিত্যচর্চা করতেন তিনি। পদ্মাতীরের সেই ছায়াশীতল কুঠিবাড়িতে কবিগুরু তার জীবনের অনেক মূল্যবান সময় কাটিয়েছেন। এমন কি যে নোবেল পুরস্কার রবীন্দ্রনাথকে এনে দিয়েছিলো বিশ্বকবির মর্যাদা সেই নোবেল গীতাঞ্জলীর অধীকাংশই তিনি লেখেন এই কুঠিবাড়িতে বসে। এ ব্যাপারে দর্শনার্থী জাহিদ হাসান বলেন, রবিন্দ্রনাথের জন্মজয়ন্তি যেভাবে পালন করা হয় সেটা আরও বড় পরিসরে করা উচিৎ। পাশাপাশি তাদের দাবি ২২ শে শ্রাবন তার মৃত্যু বার্ষিকিকেও সমান গুরুত্ব দিয়ে পালন করার।
কুষ্টিয়া জেলা শিল্পকলা একাডেমি কালচারাল অফিসার সুজন রহমান বলেন, সাংস্কৃতিক কর্মীদের দাবি শিলাইদহ কুঠিবাড়িকে পূর্ণাঙ্গ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার পাশাপাশি কবিগুরুর প্রয়াণ দিবসে এখানে নিয়মিত আয়োজন করা হোক অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করার দাবি জানান। তিনি আরো বলেন, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুবার্ষিকীতে থাকে শুনশান নীরবতা। তার স্মরণে পালিত হয় না কোনো অনুষ্ঠান, থাকে না দর্শনার্থীর ভিড়।
কবিগুরুর ব্যবহৃত চেয়ার টেবিল, পালকি, স্প্রিড বোটসহ নানা আসবাবপত্র ছাড়াও কুঠিবাড়িতে সংরক্ষিত আছে অসংখ্য দূর্লভ স্থিরচিত্র। আছে কবিগুরুর নিজ হাতে লাগানো বকুল গাছ। অথচ তার স্মৃতি বিজড়িত এই কুঠিবাড়িটিকে পরিপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা যায়নি আজও। তারপরও এই কুঠিবাড়ির সবকিছুর সাথে মিশে আছেন কবিগুরু। মিশে আছেন বাঙালির আপন সত্ত্বায়। তাই শুধু তার জন্মবার্ষীকিই নয়, তার মৃত্যুবার্ষিকিতে ও সরকারি ব্যাবস্থাপনায় জাতীয়ভাবে পালনের দাবি জানান।
কুঠিবাড়ি কাস্টোডিয়ান মোখলেচুর রহমান বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশনা না থাকায় তারা মহাপ্রয়াণ দিবসে বড় ধরনের কোন কর্মসূচি পালন করতে পারে না। তবে স্থানীয়দের নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয় এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করে আগামীতে যাতে বিশ্বকবির মহাপ্রয়াণ দিবসটিকে সরকারিভাবে পালন করা যায় সে ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন তিনি।