বিমর্ষ নিজামীর প্রশ্ন-ফাঁসি কখন?

 

স্টাফ রিপটোর্টার: স্টাফ রিপটোর্টার: মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীকে রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেয়া পূর্ণাঙ্গ রায় পড়ে শোনানো হয়েছে। সোমবার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রায় পৌঁছার পর রাত ৯টার দিকে নিজামীকে রায় পড়ে শোনানো হয়েছে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবীর সাংবাদিকদের বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

সূত্র জানায়, এ সময় কারাগারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রাণভিক্ষার বিষয়টি ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে জিজ্ঞাসা করা হবে। এর আগে গতকাল বিকেল সাড়ে ৩টায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেয়া পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন। এরপর বিকেল ৫টার কিছু পর আপিল বিভাগের একটি প্রতিনিধিদল রায়ের কপি ট্রাইব্যুনালে পৌঁছে দেন।

মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ড কার্যকরের অপেক্ষায় থাকা জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী শেষ মুহূর্তে এসে ভেঙে পড়েছেন। কারারক্ষীদের কাছে তিনি তার ফাঁসির রায় কখন কার্যকর করা হবে তা জানতে চেয়েছেন। কারারক্ষীরা বিষয়টি জানেন না বলার পর নিজামী উচ্চস্বরে বলতে থাকেন, ‘আমার প্রতি অবিচার করা হচ্ছে।’ গত রোববার রাতে কাশিমপুর কারাগার থেকে নিজামীকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়। সেখানে রজনীগন্ধা সেলে একজন ডেপুটি জেলারের তত্ত্বাবধানে তাকে রাখা হয়েছে। কারাগারে সোমবার নিজামীকে বেশ বিমর্ষ মনে হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র দাবি করেছে। তাদের ভাষ্য, যে কোনো সময় ফাঁসির রায় কার্যকর হতে পারে এমন আশঙ্কায় নিজামী ভেঙে পড়েছেন। অনেকটাই নিশ্চুপ তিনি।

কারা সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সোমবার সকালের নাস্তা হিসেবে নিজামীকে গমের রুটি ও আখের গুড় দেয়া হয়। তবে তিনি তা না খেয়ে কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ক্যান্টিন থেকে নিজের পছন্দমত নাস্তার খাবার সংগ্রহ করেন। এরপর দুপুরের খাবার হিসেবে মাছ-ভাত ও ডাল সরবরাহ করা হয়। জোহরের নামাজ শেষে ওই খাবার খেয়ে বিশ্রাম নেন নিজামী। বিকেলে কিছু সময়ের জন্য নিজামীকে রজনীগন্ধা সেলের বাইরে আনা হয়। সেখানে আধা-ঘণ্টা ঘোরাফেরার সুযোগ পান তিনি। এরপর তাকে আবারও সেলে ফিরিয়ে নেয়া হয়। সেলে গিয়ে মাগরিবের নামাজ আদায়ের পর নিজামীকে রাতের খাবার দেয়া হয়। এ সময় তিনি রাতের খাবার খেতে অনিচ্ছার কথা জানান। এক পর্যায়ে কারারক্ষীদের অনুরোধে তিনি খুবই সামান্য পরিমাণে খাবার গ্রহণ করেন। খাবার শেষে উপস্থিত কারারক্ষীদের কাছে নিজামী তার ফাঁসির রায় কখন কার্যকর করা হবে, তা জানতে চান। তবে কারারক্ষীরা এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে নিজামীকে জানান। এ সময় নিজামী তার ওপর ‘অবিচার’ করা হচ্ছে বলে কারারক্ষীদের উদ্দেশে উচ্চস্বরে বলতে থাকেন। এক পর্যায়ে তিনি সেলে বসে উচ্চস্বরে কালেমা পড়তে থাকেন। তখন আশপাশের কক্ষে থাকা ফাঁসির অন্য আসামিরা উৎসুক দৃষ্টিতে নিজামীর কক্ষের দিকে চেয়ে থাকেন।

কারা সূত্র জানায়, রোববার রাতে নিজামীকে কিছু সময়ের জন্য আমদানিতে (কারাগারে নতুন বন্দিদের রাখার স্থান) রাখা হয়। পরে তাকে ৮ নম্বর রজনীগন্ধা (ফাঁসির আসামিদের রাখার স্থান) সেলে নেয়া হয়। এর আগে ওই সেলের আশপাশে পর্যাপ্ত সংখ্যক কারারক্ষী মোতায়েন করা হয়। এ বিষয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির বলেন, রজনীগন্ধা সেলে নিজামীকে দিনের খাবার সরবরাহ করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই তিনি খাবার খেয়েছেন। তিনি বলেন, ফাঁসির আসামিদের রাখার স্থানে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়। ডেঞ্জার জোন হিসেবে খ্যাত ওই এলাকায় অন্য বন্দিদের চলাচলের ওপর কড়াকড়ি থাকে। নিজামীর ক্ষেত্রেও সে ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, রোববার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে কাশিমপুর কারাগার থেকে মতিউর রহমান নিজামীকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়। এর আগেই নাজিমউদ্দিন রোডের আশপাশের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। কারাগারের ভেতরও বাড়তি সতর্কতা নেয় কর্তৃপক্ষ। সোমবার সকাল থেকে কারা ফটকে কারারক্ষীদের সংখ্যা বাড়ানো হয়।

কারা সূত্র জানায়, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অবস্থানরত জল্লাদ রাজু, আবুল, হযরত ও ইকবালকে দুপুরের পর সিনিয়র জেল সুপারের কক্ষে ডেকে নেয়া হয়। সেখানে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন কারা চিকিৎসক বিপ্লব কান্তি। পরে ওই জল্লাদদের মানসিকভাবে ফাঁসি কার্যকরের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়। সূত্রের দাবি, নিজামীর ফাঁসি কার্যকর করার সম্ভাবনা রয়েছে জল্লাদ রাজু ও আবুলের। এর আগেও তারা একাধিক ব্যক্তির ফাঁসির রায় কার্যকর করেছেন।

অপরদিকে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি কার্যকরের প্রক্রিয়া সম্পর্কে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, ফাঁসি কার্যকরের সিদ্ধান্ত হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং জেল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে। ফাঁসি কবে, কখন কার্যকর হবে, এ বিষয়ে কোনো কিছু বলা সম্ভব নয়। তবে রায় জানানোর পরিপ্রেক্ষিতে নিজামীকে ‘রিজেনেবল’ সময় দেয়া হবে। সেটি একদিনের হতে পারে। অর্থাৎ পিটিশন (মার্সি) লেখার জন্য বা এটি প্রস্তুত করার জন্য যেটুকু সময় দরকার। সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত না হলেও মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রস্তুতি কারা কর্তৃপক্ষের রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। জামায়াত আমিরের রিভিউ খারিজের পূর্ণাঙ্গ রায় সোমবার প্রকাশের পর এখন বিধি অনুযায়ীই দণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে বলে জানান তিনি। সোমবার বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে দণ্ড কার্যকর নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে আসাদুজ্জামান কামাল বলেন, কাশিমপুর থেকে ঢাকায় আনার মানে এই নয় যে এখনই ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হবে।

 

Leave a comment