বাড়িঘর ও দোকানে হামলা ভাঙচুর : দুই প্রার্থীর ৭ সমর্থক আহত

 

ভালাইপুর প্রতিনিধি: আলমডাঙ্গার গাংনী ইউনিয়নে নান্দবার ও শালিকা গ্রামের মধ্যে নির্বাচনে পরাজিত আওয়ামী লীগের প্রাথী ও বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। সহিংসতায় সংঘর্ষে আহত হয়েছে ৭ জন। বাড়িঘরে ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। উভয় গ্রামের মধ্যে এখনো উত্তেজনা বিরাজ করছে।

অভিযোগকারীরা জানায়, গত রোববার সন্ধ্যার দিকে বিএনপির বিদ্রোহী পরাজিত প্রার্থী সাইফুল ইসলাম মামুনের শ্বশুর আসমানখালী বাজারের তেল ও মুদিব্যবসাসী নান্দবার গ্রামের আইনদ্দি মণ্ডলের ছেলে জয়নাল হোসেন ও একই গ্রামের সিট কাপড় ব্যবসায়ী কুরবান আলীর ছেলে রেজুয়ানের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রকিবুল হাসানের সমর্থকরা হামলা করে উভয়কে গুরুতর আহত করে। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের তেল বোঝাই ব্যারেলে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ মারা হয়। এতে তেল বিনষ্ট হয়। এছাড়া মুদি ও গার্মেন্ট মালামাল নষ্ট হয়। এ সময় নগদ টাকা লুপাপাট করা হয় বলে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন। পরে বিএনপি বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থক নান্দবার গ্রামের হাফিজুল, ইনামুল, কাজল, মুচাইনগর গ্রামের সোহেল ও অপুকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে  গুরুতর আহত করা হয়।

এদিকে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গতকাল সোববার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নান্দবার গ্রামে সর্বস্তরের জনগণের সমন্বয়ে প্রতিবাদসভা ও পরবর্তী করণীয় বিষয়ে মতবিনিয় অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় সাবেক চেয়ারম্যান হারুনর রশীদের সভাপতিত্বে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি নির্বাচন সহিংসতা প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হয়। আসমানখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শালিকা গ্রামের আওয়ামী লীগের পরাজিত চেয়ারম্যন প্রার্থী ও মাতবরদের সমন্বয়ে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশের সহযোগিতায় মীমাংসার প্রক্রিয়া করা হয়। এরই মধ্যে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নান্দবার ও শালিকা গ্রামের লোকজন মাইকে প্রচার করে নিজ নিজ কর্মীসমর্থকদের সঙ্ঘবদ্ধ হতে বলে। প্রচার শুনে উভয় গ্রামের লোকজন দেশি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আসমানখালীর দিকে দৌঁড়াতে থাকে। ওই সময় আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ ও আসমানখালী ফাঁড়ির সহযোগিতায় আসমানখালী বাজারের পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়, কিন্তু নান্দবারের বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থীর কয়েকজন সমর্থক আসমানখালী হাসপাতালপাড়ায় হামলা চালায়। এতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর সমর্থক আব্দুল খালেক ও সাহাবুলের টিনের ঘর কোপায় এবং ঘরের ভেতরের আসবাবপত্র ভাঙচুর করে।

আব্দুল খালেকের স্ত্রী ফেরদৌসী খাতুন ও সাহাবুলের স্ত্রী সাবিনা খাতুন অভিযোগ করেন, নান্দবার গ্রামের লোকজন বড় বড় রাম দা নিয়ে আমাদের বাড়িতে হামলা করে এবং আমাদের বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে। ঘরে থাকা আমাদের দুটি পরিবারের গরু বিক্রির ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা ও সোনার গয়না নিয়ে গেছে।

এ বিষয়ে আলমডাঙ্গা থানার ওসি (তদন্ত) মেহেদী রাসেল উভয় গ্রামের মাতবর ও প্রার্থীদের সাথে বসে আলোচনা করেন এবং সহিংসতা বন্ধের পরামর্শ দেন। তিনি বলেন আপনারা মামলা করলে পুলিশ পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।

বিএনপির পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী সাইফুল ইসলাম মামুন বলেন, গায়ের জোরে দলের ক্ষমতা দেখিয়ে নিরস্ত্র আনারস প্রতীকের সমর্থক ও নিরীহ নান্দবার গ্রামবাসীর ওপর একের পর এক হামলা চালিয়ে, কুপিয়ে ও পিটিয়ে ৭ জনকে আহত করার পরও হুমকি ধামকি দেয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে আমরা গ্রামবাসী পুলিশের সহযোগিতায় মীমাংসার প্রক্রিয়া করছি।

আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়াম্যান প্রার্থী শালিকা গ্রামের রকিবুল হাসানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, রোববার সন্ধ্যার দিকে নান্দবার গ্রামবাসী মাইকে প্রচার করে শালিকা গ্রামে হামলা করে। এতে শালিকা গ্রামের কয়েকজন প্রতিবাদী হয়ে আসমানখালী বাজারে দিকে এগিয়ে যায়। ওই সময় পুলিশের লাঠির আঘাতে কয়েকজন আহত হয়। এ বিষয়কে কেন্দ্র করে সোমবার সাড়ে ১১টার দিকে নৌকা মার্কার সমর্থকদের বাড়িতে হামলা করে বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে।

এদিকে এলাকার সাধারণ মানুষ বলেছে, নান্দবার ও শালিকা গ্রামের দুই প্রার্থী আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর ঘোড়া মার্কার কাছে পরাজিত হন। একে অপরের কারণে হেরে গেছেন এমন অভিযোগ এনে গ্রামে হামলা করতে আসছে প্রচার চালাতে উসকে দেয়া হয়। আর এ হুজুগে উভয় গ্রামের লোকজন যে যার মতো হামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ৭ মে গাংনী ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

Leave a comment