গাংনী প্রতিনিধি: প্রায় ১৬ ঘণ্টা মৃত্যুর সাথে লড়ে জীবনের কাছে হেরে গেলেন ফুলসুরাতন (৭৫) নামের এক বৃদ্ধা। চলে গেলেন না ফেরার দেশে। প্রাক্তন জামাইয়ের প্রতিশোধের আগুনে পুড়েছে ফুলসুরাতনের শরীরের বেশির ভাগ অংশ। ঘটনাটি ঘটেছে মেহেরপুর গাংনী উপজেলার সহড়াবাড়িয়া গ্রামে। গত শনিবার মধ্যরাতে নিজ বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ফুলসুরাতন ওই গ্রামের মৃত আবু বক্করের স্ত্রী।
নিহতের পরিবারিক ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ফুলসুরাতনের মেয়ে মাটিকাটা শ্রমিক আম্বিয়া বেগমের সাথে পার্শ্ববর্তী ষোলটাকা গ্রামের মাটিকাটা শ্রমিক হাউস আলীর বিয়ে হয় বছর চারেক আগে। দাম্পত্য কলহের জেরে ২১ দিন আগে আম্বিয়া বেগম হাউস আলীকে তালাক দেন। নিজের আয় রোজগারের টাকা দিয়ে মাকে নিয়ে কোনোরকম খেয়ে-পরে চলছিলো তাদের সংসার। মায়ের বাড়িতেই বসবাস করতেন আম্বিয়া। হাউসকে তালাক দেয়ার পর থেকেই প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে সে। প্রাণনাশের হুমকিসহ বিভিন্নভাবে আম্বিয়া বেগম ও তার মাকে আতঙ্কিত করে রাখে হাউস। অবশেষে সেই হুমকিই সত্যি হলো। আম্বিয়া ভেবে তার মায়ের শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয় হাউস। গুরুতর পোড়া ক্ষত নিয়ে উন্নত চিকিৎসার অভাবে সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান ফুলসুরাতন। রেখে যান সমাজের বিবেকের কাছে কিছু প্রশ্ন। এমনটি প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন গ্রামের অনেকেই।
আম্বিয়া খাতুন জানান, আনসার-ভিডিপি সদস্য হিসেবে তিনি শনিবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছিলেন। এ কারণে রাতে তার বাড়ি ফিরতে দেরি হয়। রাত সাড়ে বারোটার দিকে তার প্রাক্তন স্বামী হাউস আলী তাদের বাড়িতে যান। ঘরের বারান্দায় শুয়ে থাকা বৃদ্ধা মাকে সে আম্বিয়া বেগম মনে করে শরীরে পেট্রোল ঢেলে দেয়। একপর্যায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। আগুনের তীব্রতায় দ্রুত ফুলসুরাতনের শরীরের বেশির ভাগ স্থান ঝলসে যায়। বিষয়টি টের পেয়ে প্রতিবেশীরা এগিয়ে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে রাতেই মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকার বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপালের বার্ন ইউনিটে রেফার করেন চিকিৎসক। কিন্তু অসহায় দরিদ্র পরিবারের পক্ষে ঢাকায় নেয়ার টাকা জোগাড় করা সম্ভব হয়নি। বিভিন্ন স্থানে ধরনা দিয়েও কোনো বিত্তমান মানুষ তার চিকিৎসায় এগিয়ে আসেননি। দীর্ঘ ১৬ ঘণ্টা মৃত্যুর সাথে লড়ে বিকেল তিনটার দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বৃদ্ধা ফুলসুরাতন।
মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আনোয়ারুল ইসলাম জানান, রোগীর জীবন খুবই সঙ্কটাপন্ন ছিলো। আগুনে তার শরীরের ৮০ ভাগ স্থান ঝলসে যায়। তাকে ঢাকার হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে রেফার করা হলেও অর্থাভাবে তাকে নিয়ে যেতে পারেনি পরিবার। তবে যে পরিমাণ ঝলসানো ছিলো তাতে বাঁচার আশা ছিলো ক্ষীণ। এদিকে খবর পেয়ে গতকাল সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গাংনী থানা পুলিশের একটি দল। দুপুরে থানায় মামলা দায়ের করেন আম্বিয়া বেগম।
গাংনী থানার ওসি আকরাম হোসেন জানান, মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে নিহতের লাশের ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। নিহতের মেয়ে আম্বিয়া খাতুন বাদী হয়ে তার প্রাক্তন স্বামী হাউস আলীকে আসামি করে গাংনী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। হাউস আলীকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। ঘটনার পর থেকেই আত্মগোপনে রয়েছে হাউস আলী।
এদিকে ফুলসুরাতনকে হত্যা করা হয়েছে জানিয়েছে সহড়াবাড়িয়া গ্রামের লোকজন। নিহতের পরিবারসহ গ্রামের মানুষের মাঝে বইছে শোকের ছায়া।