রডের বদলে বাঁশ : ঠিকাদারের উপযুক্ত শাস্তি কাম্য

 

সেই ঠিকাদারকে দুদক ও র‌্যাব যৌথ অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করেছে। ক্বরিৎকর্মা এই ঠিকাদার রডের বদলে বাঁশ ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানের মালিক। গত শুক্রবার রাজধানীর মিরপুরের একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন।

সম্প্রতি চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনায় ২ কোটি ৪১ লাখ টাকা ব্যয়ে উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের অতিরিক্ত উপপরিচালকের ভবন নির্মাণের কাজে রডের বদলে বাঁশসহ নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহারের হোতা ওই কোম্পানি। এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে সারাদেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। এতোদিন সরকারি নির্মাণকাজে নানা নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের খবর মিললেও রডের বদলে বাঁশ, সিমেন্টের বদলে চুন, সুরকি ব্যবহারের খবর পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি দ্বিতল ভবনটির নির্মাণ কাজ প্রায় সম্পন্ন করেই ফেলেছিলো। চলতি বছরের জুন মাসে ভবনটি হস্তান্তরের কথা। যা হোক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সরেজমিন পরিদর্শনের পর ১১ এপ্রিল দামুড়হুদা থানায় মামলা দায়ের করা হয়। তাতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মালিক, পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রকল্পের ক্রয় বিশেষজ্ঞ ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপসহকারী পরিচালককে আসামি করা হয়। শেষোক্ত তিনজন এখনও পলাতক।

ঘটনাটি সরকারি পুকুরচুরির সামান্য একটি নমুনা মাত্র। সরকারি অর্থায়নে সারাদেশে অসংখ্য ও অগণিত প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়িত হচ্ছে। সত্যি বলতে কী, এগুলোর প্রায় প্রতিটির বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মসহ নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ আছে। এর পাশাপাশি ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ তো প্রায় প্রকল্পেরই নিত্যসঙ্গী। সম্প্রতি ইউনিভার্সিটি গ্র্যান্টস কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা কর্তৃক খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো ভবন নির্মাণ প্রকল্পের মূল্যায়নের জন্য দশ লাখ টাকা উৎকোচ চাওয়ার বিষয়টি ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের আওতায় সারাদেশে নির্মিত স্কুল-কলেজের ভবন নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে। এ নিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী স্বয়ং তীব্র ক্ষোভ উদগিরণ করেছেন। বিভিন্ন স্থানে সরকারি অর্থায়নে ভবন নির্মাণ, রাস্তাঘাট নির্মাণ ও সংস্কার, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ ইত্যাদিতে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ প্রায়ই প্রকাশিত হয়ে থাকে গণমাধ্যমে। প্রকল্পের অর্থ নয়-ছয়সহ লুটপাটের অভিযোগও নতুন নয়। এর পাশাপাশি মেয়াদান্তে প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়া, নানা অজুহাতে মেয়াদ বাড়িয়ে প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি, ভুয়া ও অস্তিত্বহীন প্রকল্প- এসবও আছে। আর এ কারণেই বোধহয় সরকারি মাল দরিয়ামে ঢাল প্রবচনটির বহুল ব্যবহার। এতে দুর্ভোগ বাড়ে দেশবাসীর। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, এসব অন্যায়-অনিয়ম-ঘুষ দুর্নীতির প্রায় কোনো বিচারই হয় না অধিকাংশ ক্ষেত্রে। দু-একটি অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনা প্রকাশিত হলেও অভিযুক্তরা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। তবে আশার কথা এই যে, আস্তে ধীরে হলেও পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। বর্তমান সরকারের আমলে দুর্নীতি-অনিয়মের ঘটনা প্রকাশিত হচ্ছে গণমাধ্যমে। অভিযুক্তরা ধরাও পড়ছে, বিচারও চলছে। দামুড়হুদার ঘটনা এর সর্বশেষ উদাহরণ।

দুদক ও সংশ্লিষ্ট থানার উচিত দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন করে চার্জশিট প্রদান এবং ঘটনাটি দ্রুত বিচার আদালতে দায়ের করা। দু-একটি ক্ষেত্রে দ্রুত বিচার করে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হলে আগামীতে সরকারি অর্থায়নে নির্মাণকাজে অনিয়ম-দুর্নীতি-গাফিলতি কমে আসবে বলে আশা করা যায়।