টর্নেডোর আঘাতে জীবননগরে লণ্ডভণ্ড : ক্ষতির পরিমাণ ২ কোটির অধিক : আহত ৮

এমআর বাবু/সালাউদ্দীন কাজল: জীবননগরের ৪টি গ্রাম টর্নেডোর আঘাতে এবং শিলাবৃষ্টিতে একেবারে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। গতকাল শনিবার রাত ৮টার দিকে জীবননগর উপজেলার হাসাদহ, বৈদ্যনাথপুর, কাঁটাপোল ও বকুণ্ডিয়া গ্রামে শক্তিশালী টর্নেডো প্রচণ্ড বেগে আঘাত হানে এবং একই সাথে শিলাবৃষ্টি হয়। আধাঘণ্টাব্যাপি এ টর্নেডোতে ৪ গ্রামের শতাধিক কাঁচা-ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। প্রায় দু  শতাধিক আধা-পাঁকা ঘরবাড়ির টিনের ছাউনি উড়ে গেছে এবং বাড়িঘরগুলো বিধ্বস্ত হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মসজিদের টিনের চালা উড়ে গেছে। বড় বড় গাছ উপড়ে গেছে। রাস্তার পাশের গাছের ডালপালা ভেঙে ও বাঁশঝাড় উপড়ে রাস্তার ওপর পড়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এছাড়া শিলাবৃষ্টিতে পাট, মুগ, কলা, লিচু, বরবটি এবং আমসহ উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে যাওয়ায় এবং সঞ্চালন লাইনের তার ছিঁড়ে যাওয়ায় বিদ্যুত সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ঘরের চালা ভেঙে ও দেয়াল চাপা পড়ে হাসাদাহ গ্রামের ফিরোজ আলী, নূর ইসলাম, গোপাল, আব্দুল মোমিন, মাধপপুর গ্রামের ফজিলাতুন্নেছাসহ অন্তত ৮ জন আহত হয়েছেন।

উপজেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, সবমিলিয়ে আনুমানিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এদিকে টর্নেডোর আঘাতে বাস্তুহারা অসহায় পরিবারের সদস্যরা খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন এবং তারা দ্রুত সরকারি সাহায্য কামনা করেছেন। গতকাল রোববার সকালে উপজেলা চেয়ারম্যান আবু মো. আ. লতিফ অমল, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নূরুল হাফিজ, কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহসহ সরকারি কর্মকর্তাগণ ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাম পরিদর্শন করেছেন।

টর্নেডোর আঘাতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হাসাদাহ গ্রামের জসিম উদ্দীন জালাল এবং রবি বিশ্বাস জানান, গত শনিবার রাত ৮টার দিকে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি ও তার সাথে দমকা হওয়াসহ ঝড় শুরু হয়। সাড়ে ৮টার দিকে আচমকাভাবে প্রচণ্ড বেগে টর্নেডো আঘাত হানে। সাথে সাথে বিদ্যুত সরবরাহও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এ সময় গ্রামবাসীরা আতঙ্কিত হয়ে ছোটাছুটি করতে থাকে। ঝড়ের তাণ্ডবে ক্ষেতের পাটের মাথা ও বরবটির মাচা ভেঙে মাটির সাথে মিশে গেছে।

কাটাপোল গ্রামের হাবিবুর রহমান জানান, গত শনিবার রাতে টর্নেডোতে আঘাত হানা ৪ গ্রামের প্রতিটি পরিবারই কোনো না কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে প্রান্তিক ও বর্গা চাষিরা তাদের ক্ষেতের ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

উপজেলা বিদ্যুত অফিসের জুনিয়র প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন জানান, ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যুত লাইন মেরামত করে বিদ্যুত সরবরাহ স্বভাবিক করতে ২ দিন সময় লাগবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নূরুল হাফিজ হাফিজ জানান, ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির মালিক ও কৃষকদের সরকারিভাবে সাহায্য সহযোগিতা করা হবে। উপজেলা চেয়ারম্যান আবু মো. আ. লতিফ অমল জানান, টর্নেডোর কারণে ও শিলাবৃষ্টির ফলে ফসলের এমন ক্ষয়ক্ষতি অনেক বছর দেখা যায়নি।

ভ্রাম্যমাণ সংবাদদাতা জানিয়েছেন, দামুড়হুদার কার্পাসডাঙ্গা এলাকায় কালবোশেখি  ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে কাঁচা ঘরবাড়ি গাছপালা ও বিভিন্ন ফসল নষ্ট হয়েছে। প্রচণ্ড বেগে দমকা হাওয়া শুরু হলে কাঁচা ঘরবাড়ি ও গাছপালা ভেঙে পড়ে। ফলে পাট, কচু ও সবজি চাষাবাদ গুঁড়িয়ে যায়। এতে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন কৃষকরা। তারা কষ্টার্জিত ফসল হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্তরা সরকারি সাহাযের জন্য জেলা প্রশাসকের সহযোগিতা কামনা করেছেন।